বগুড়ার করোনা রোগী যেসব ওষুধে সেরে উঠলেন
ঝিনাইদহের চোখঃ
টানা ২৫ দিন বগুড়ায় চিকিৎসা গ্রহণের পর সুস্থ হয়ে প্রথম করোনা রোগী হিসেবে হাসপাতাল ছেড়েছেন শাহ্ আলম (৫০) নামের এক ব্যক্তি।বগুড়ার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের করোনা আইসোলেশন ইউনিটে চিকিৎসা শেষে সস্ত্রীক শুক্রবার রংপুরে নিজের বাড়ি ফিরে গেছেন তিনি।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় ও আবাসিক চিকিৎসক ডা. শফিক আমিন কাজল দুপুর ১২টার দিকে শাহ্ আলম ও তার স্ত্রী সাজেদা বেগমর হাতে ফুল দিয়ে তাদের বিদায় জানান। বিদায় বেলায় এই দম্পতি উন্নতমানে চিকিৎসা সেবা প্রদান করায় মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের চিকিৎসক এবং নার্সদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।
শাহ্ আলমের চিকিৎসায় কি ধরনের ওষুধ দেওয়া হয়েছিল তা জানতে চাইলে ডা. শফিক আমিন কাজল বলেন, ‘প্রথম দিকে তার শারীরিক অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। মুখে খাওয়ানোর মত অবস্থা ছিল না বলে আমরা তাকে সেফট্রিয়াক্সন ইনজেকশন দিই। এছাড়া শ্বাস কষ্ট থাকায় তাকে নেবুলাইজার দেওয়া হয়। পরে একটু সুস্থ হলে তাকে হাইড্রোক্সিলক্লোরকুইন এবং অ্যাজিথ্রোমাইসিন ওষুধ খেতে দেওয়া হয়।’
মোহাম্মদ আলী হাসপাতালের এই চিকিৎসক জানান, পর পর তিনটি পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসায় শাহ্ আলমকে আনুষ্ঠানিকভাবে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে। তবে যেহেতু এই আইসোলেশন ইউনিটে বর্তমানে করোনা পজিটিভ ৭ জন রোগী রয়েছেন, সে কারণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুযায়ী শাহ্ আলম এবং তার স্ত্রী সাজেদা বেগমকে বাড়ি ফিরে ১৪দিন কোয়রেন্টাইনে থাকতে বলা হয়েছে।
বাড়ি যাওয়ার সময় শাহ্ আলমের স্ত্রী সাজেদা বেগম নিজ এলাকার লোকজনদের সহযোগিতা চেয়ে বলেন, ‘আমার স্বামী এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। আমি তাকে নিয়ে বাড়ি ফিরছি। বাড়ি ফেরার পর এলাকার লোকজন আমাদের ওপর যেন মানসিক কোন নির্যাতন না করে-এটাই তাদের প্রতি আমার অনুরোধ।’
রংপুরের ধাপ এলাকার বাসিন্দা শাহ্ আলম গত ২৮ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে ট্রাকে করে নিজ বাড়িতে ফিরছিলেন। তবে জ্বরসহ শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে ২৯ মার্চ ভোরে তিনি বগুড়ার মহাস্থানগড় এলাকায় নেমে যান। এরপর স্থানীয় এক সাংবাদিক পুলিশের সহযোগিতায় তাকে রিকশা-ভ্যানে তুলে প্রথমে শিবগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। পরে সেখান থেকে তাকে অ্যাম্বুলেন্সে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
শ্বাসকষ্টের পাশাপাশি ওই ব্যক্তি নিজেকে হৃদরোগী হিসেবে পরিচয় দিলে কর্তৃপক্ষ তাকে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) ভর্তি করান। কিন্তু তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে গেলে পরদিন ৩০ মার্চ তাকে আইসোলেশন ইউনিট বগুড়া মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরবর্তীতে পহেলা এপ্রিল অন্য রোগীর সঙ্গে শাহ আলমের নমুনাও রাজশাহী মেডিকেল কলেজে পাঠানো হয়। পরদিন তার নমুনা পরীক্ষায় করোনা পজিটিভ পাওয়া গেলেও কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা না দিয়ে দ্বিতীয়বার পরীক্ষার সিদ্ধান্তের কথা জানান। অবশ্য ততক্ষণে খবরটি মৌখিকভাবে বগুড়ার স্বাস্থ্য দপ্তরের কর্মকর্তারা জেনে গেলে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলজের সিসিইউ ইউনিটের ৫ চিকিৎসক, ৬ নার্স এবং ৪ কর্মচারীকে কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে তাকে উদ্ধারকারী সেই সাংবাদিক এবং অ্যাম্বুলেন্স চালককেরও হোম কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত করা হয়।
শাহ্ আলমকে মহাস্থান থেকে শিবগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল পর্যন্ত বহনকারী সেই রিকশা-ভ্যান চালককে খুঁজে না পাওয়ায় তাকে কোয়ারেন্টাইন করা সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে গত ৪ এপ্রিল রাতে বগুড়া জেলা স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে শাহ্ আলম করোনা পজিটিভ বলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।
ডা. শফিক আমিন কাজল জানান, দ্বিতীয়বার পরীক্ষায়ও শাহ্ আলমের নামুনা পজিটিভ আসে। তবে হাসপাতালে নিরাপদ দূরত্ব রেখে সেবা করে যাওয়া তার স্ত্রী সাজেদা বেগমের রেজাল্ট নেগেটিভ আসে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার পরীক্ষায়ও পজিটিভ আসার পর আমরা শাহ্ আলমকে চিকিৎসার পাশাপাশি তাকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণে রাখি। এভাবে প্রায় এক সপ্তাহ পর গত ১৩ এপ্রিল তৃতীয়বার তার নমুনা পরীক্ষা করে নেগেটিভ পাওয়া যায়। এরপর গত ২১ এপ্রিল এবং সর্বশেষ ২২ এপ্রিল পরীক্ষায় নেগেটিভ রেজাল্ট আসায় ছাড়পত্র দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তাকে।