শাহরিয়ার আলম সোহাগ, ঝিনাইদহের চোখঃ
গত ৬ মাস বেতন পান না ৯৯ জন শিক্ষক কর্মচারী। করোনা সংকটে পরিবার নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মাহতাব উদ্দিন কলেজের শিক্ষক কর্মচারী। উপায় না পেয়ে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও কলেজের সভাপতির দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন তারা। কলেজটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আব্দুল মজিদ মন্ডল ও সভাপতি উপজেলা পরিষদের সামনে সুবর্ণা রানী সাহার কার্যালয়ের সামনে পৃথক মানববন্ধন করেছেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০ টার দিকে শহরের মেইন বাস্ট্যান্ড এলাকার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের বাড়ির সামনে প্রায় অর্ধশত শিক্ষক-কর্মচারী বেতনের জন্য মানববন্ধন করেন। এরপর তারা ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের সাথে কথা বলেন। এ সময় তিনি শিক্ষকদের জানিয়ে দেন, তার স্বাক্ষরে কলেজের বেতন হবে না। এ সময় শিক্ষকেরা তাকে আন্দোলনে শরীক হতে বললে তিনি অপরাগতা স্বীকার করেন। এরপর সেখান থেকে শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণীর সাহার কাছে যান। তিনজন শিক্ষক প্রতিনিধির সাথে কথা বলেন কলেজটির সভাপতি।
মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে কলেজটির একাধিক শিক্ষক বলেন, করোনা সংকটে পরিবার নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন-যাপন করছেন। ধার-দেনা করে চলছেন তারা। এখন আর কোন দোকানদার বাকি দিতে চাচ্ছে না। কলেজের অধ্যক্ষ পদের স্বাক্ষর জটিলতা নিয়ে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তারা। শিক্ষক-কর্মচারীরা কলেজের এই সৃষ্ট সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। একমাত্র প্রধানমন্ত্রী ছাড়া কেউ এ সমস্যা নিরসন করতে পারবে না। শুধু চিঠি চালাচালি করে আমাদের আশ^স্ত করা হচ্ছে। কিন্তু আমাদের কষ্ট কেউ বুঝতে চাইছে না। এক সপ্তাহের মধ্যে আমাদের বেতনের ব্যবস্থা না করা হলে পরিবার-পরিজন নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়ার হুশিয়ারি দেন শিক্ষক-কর্মচারীরা।
সদ্য জাতীয়করণকৃত এই কলেজটির সাময়িক বরখাস্তকৃত অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমানকে তার দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা অধিদফতর। গত বছরের ২৭ নভেম্বর এক চিঠিতে বলা হয়েছে, তার স্বাক্ষর ছাড়া অন্য কোন স্বাক্ষরে বেতন-ভাতা উত্তোলন করা যাবে না। ফলে গত নভেম্বর থেকে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান অভিযোগ করেন, দায়িত্ব বুঝে নিতে কলেজ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলেই সন্ত্রাসী বাহিনী লেলিয়ে দিয়ে তাকে ক্যাম্পাস ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়েছে। এরপরও অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান ২৪ ফেব্রæয়ারি কলেজে এসে উপস্থিতি খাতায় স্বাক্ষর করে গেছেন, কিন্তু তাকে কলেজের সার্বিক কার্মকাÐে অংশ নিতে না দিয়ে একই পন্থায় তাড়িয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান তিনি।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান তার বিরুদ্ধে নিয়ে আসা অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণের জন্য জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক তদন্তের মুখোমুখি হন। পরে প্রমাণ হয়েছে অভিযোগগুলো মিথ্যা। তারপরও অধ্যক্ষের দায়িত্ব বুঝে না দেয়ায় বর্তমানে তাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান জানান, তিনি কোনো অন্যায় বা দুর্নীতি করেননি। শুধু রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় তাকে হয়রানি করা হচ্ছে।
অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমান আরও জানান, উপাধ্যক্ষ আবদুল মজিদ মÐল ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের পরিচয় দিচ্ছেন। এই দায়িত্বে থেকে কলেজের একাডেমিক কাজকর্ম করে যাচ্ছেন, যা সম্পূর্ণ অবৈধ। এগুলো তিনি করতে পারেন না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় ও শিক্ষা অধিদফতর একাধিক চিঠিতে জানিয়ে দিয়েছেন তিনিই বৈধ অধ্যক্ষ।
এ ব্যাপারে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালনে থাকা আবদুল মজিদ মÐল স্বীকার করে জানান, তার স্বাক্ষরে বেতন হবে না শিক্ষক-কর্মচারীদের। তাছাড়া অধ্যক্ষ মাহবুবুর রহমানকে কলেজে আসতে দেয়া হচ্ছে না, এটাও ঠিক নয়। সন্ত্রাসী দিয়ে তাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে এমন অভিযোগ মিথ্যা।
কলেজটির সভাপতি কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুবর্ণা রাণী সাহা বলেন, শিক্ষকদের সাথে কথা বলে মঙ্গলবার সংশ্লিষ্ট দপ্তরে চিঠি পাঠানো হয়েছে। গত তিন মাস আগেও চিঠি দিয়েছিলেন, সেই চিঠির কি উত্তর পেয়েছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই চিঠির উত্তর এখনো পাইনি। তিনি এ বিষয়ে আরও জানতে শিক্ষা অধিদপ্তরে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।