করোনা দূর্যোগে কৃষকের পাশে মানবিক ছাত্রলীগ–মাসুদ রানা(শিক্ষার্থী ও সাংবাদিক) জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়
ঝিনাইদহের চোখঃ
কৃষকের কষ্টের সোনার ফসল ধান পাকতে শুরু করেছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে দেশে অঘোষিত লকডাউনের মধ্যে রয়েছে শ্রমিক সঙ্কটও। তাই পাকা ধান ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ঘরে উঠাতে পারছেন না কৃষক। তাই এই করোনাভাইরাস সংকটের মধ্যে ধান তোলায় বিপাকে পড়া কৃষকের সহযোগী হয়ে মাঠে নেমেছে ছাত্রলীগ। বিভিন্ন জেলায় দলবেঁধে ঐতিহ্যবাহী ছাত্র সংগঠনটির নেকাতর্মীরা ধান কেটে কৃষকের ঘরে তুলে দিচ্ছেন।করোনাভাইরাস অতি সংক্রামক হওয়ার কারণে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে চলছে সরকার ঘোষিত ছুটি। আর এপ্রিল থেকে মে মাস হলো বোরো ধান তোলার সময়। দেশে খাদ্যের বড় জোগান আসে এই বোরো ধান থেকে। কিন্তু শ্রমিক সংকটের কারণে ধান কাটতে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।
এদিকে করোনাভাইরাসে সৃষ্ট সংকটের কারণে কৃষক সঠিক সময়ে ধান ঘরে তুলতে না পারলে দেশে খাদ্য সংকট হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন।
গতবছরও কৃষক যখন ধান কাটতে পারছিল না তখনও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে সবার আগে এগিয়ে আসে এই বৃহত্তম ছাত্র সংগঠন। এবার দেশে সাধারণ ছুটি আর জেলায় জেলায় লকডাউনের কারণে শ্রমিক সঙ্কট আরও তীব্র হয়েছে। যদিও কৃষি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন জেলার শ্রমিক আনার বিষয়ে কাজ করছে। দেশের এমন পরিস্থিতিতে কৃষকের পাশে দাঁড়ায় ছাত্রলীগ। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক তাদের বিভিন্ন ইউনিটকে কৃষকের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশনা দেন। ইতোমধ্যেই বিভিন্ন জেলা উপজেলায় ছাত্রলীগ সদস্যরা কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছেন। এসব ছবি, খবর গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ প্রশংসাও পাচ্ছে। অন্যদেরও এগিয়ে আসার কথা বলা হচ্ছে। সম্প্রতি এই কৃষকের ধান কাটার কিছু খন্ড চিত্র তুলে ধরছি।
১. মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি-ধলঘাটা ইউনিয়নের লবণ চাষী মোহাম্মদ রফিক লবণ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সারাদেশ লকডাউন পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক না পাওয়ায় মোহাম্মদ রফিক তার লবণচাষ নিয়ে অনেক কষ্টে থাকেন। খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ২১ এপ্রিল লবণ চাষী রফিকের ৬ কানি জমির লবণ তুলে দেন।
২.নাটোরের সিংড়ায় কৃষকের পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দিল ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আজ মঙ্গলবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত প্রায় ৫০ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী বিনা পারিশ্রমিকে উপজেলার পূর্ব দমদমা গ্রামের কৃষক মিঠু হোসেনের ধান কেটে ঘরে তুলে দেন।
৩. কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে কক্সবাজারে কৃষকের পাকা ধান কেটে দিল ছাত্রলীগ। জেলা সদর উপজেলার খুরুশকুল ইউনিয়নের কৃষক হাফেজ আহমেদ কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেন। করোনা পরিস্থিতির কারণে শ্রমিক না পাওয়ায় হাফেজ আহমেদ তার পাকা ধান কাটতে পারছিলেন না। খবর পেয়ে কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আজ শনিবার কৃষক হাফেজের ২ কানি পাকা ধান কেটে ঘরে তুলে দেন।
৪. পাকা ধান নিয়ে বিপাকে পড়া এক কৃষকের ফোন পেয়ে ধান কেটে কৃষকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েছে পিরোজপুর জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলার ইন্দুরকানী উপজেলার পাড়েরহাট ইউনিয়নের ঝনঝনিয়া গ্রামের মাঠে এ ধান কাটেন তারা।
৫. লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে কৃষকের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দ।করোনা পরিস্থিতিতে ধান কাটার শ্রমিক না পাওয়ায় বর্তমানে ছাত্রলীগের স্থানীয় নেতা-কর্মীরাই ধান কাটা, কৃষকের বাড়ি পৌঁছানো এবং মাড়াই করে দিচ্ছে।
৬. টঙ্গীতে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দিয়েছে ছাত্রলীগ। কৃষক বাবুল মাতব্বর লোক না পেয়ে পাকা ধান কাটতে পারছিলেন না। এদিকে কালবৈশাখীর আশঙ্কা, ইতিমধ্যে ধান পেকে শুয়ে পড়ছে এবং বিলেও পানি উঠতে শুরু করছে। এই খবর পেয়ে সেখানে ছুটে যান টঙ্গী থানা ছাত্রলীগের নেতৃত্বে ৪০ জন নেতাকর্মী। গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৫০ নং ওয়ার্ডের গাজীপুরায় বিলে বর্গা চাষী বাবুল মাতব্বরের দুই বিঘা জমির ধান কেটে দেন তারা।
৭. বোরো ধান কাটতে কৃষকদের সহযোগিতায় নেমেছে ফেনী জেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ২০ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার চর শাহভিকারী কেরামতিয়া বাজার এলাকায় কৃষক সাহাবউদ্দিনের তিন একর জমির ধান তুলতে মাঠে নামেন তারা।
এদিকে ঢাকা বিভাগের কয়েকটি জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী দেশরতœ শেখ হাসিনা সারাদেশে কৃষকের ধান কেটে ঘরে তুলে দেওয়ায় ছাত্রলীগের প্রশংসা করেন।
তিনি বলেন, জমির ধান এখন পাকতে শুরু করেছে। ধানকাটা নিয়ে সমস্যা যখন সৃষ্টি হল তখন আমি ছাত্রলীগকে নির্দেশনা দিয়েছি। তারা কৃষকের ধান কেটে সহযোগীতা করছে। নিজেরা ফর্মুলা নিয়ে হ্যান্ড স্যানিটাইজার বানিয়েছে এবং বিতরণ করেছে। তিনি আরও বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বসে নিজেরাই হ্যান্ডস্যানিটাইজার বানিয়ে বিতরণ করছে। বাড়ি বাড়ি খাদ্য পৌঁছে দিচ্ছে। এ জন্য ছাত্রলীগকে ধন্যবাদ।
এবার ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু করোনা আতঙ্কে এই চলতি মৌসুমের আগাম ইরি-বোরো ধানকাটায় শ্রমিক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় শ্রমিক সঙ্কটে থাকা এলাকাগুলোতে ধান কেটে কৃষককে সহায়তা করছে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। একইসঙ্গে খাদ্য সংকটে থাকা কর্মহীন হয়ে পড়া অসহায়, হতদরিদ্র, দুস্থদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা তুলে দিচ্ছে সংগঠনটি।
এছাড়া করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীরা হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, সাবান প্রদান করেছে।
বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সবসময় বলতেন, ছাত্রলীগের ইতিহাস বাংলাদেশের ইতিহাস। কারণ বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রেখেছে এই সংগঠনটি। তারা জাতির যেকোন ক্রান্তিলগ্নে সামনের সারিতে থেকে মানুষের পাশে দাড়িয়ে আসছে। কারণ তারা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতে গড়া সংগঠন। তারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে রাতদিন মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। তার-ই ধারাবাহিকতায় করোনাভাইরাস মোকাবেলা যখন অন্য দলের ছাত্রসংগঠনগুলো গা ঢাকা দিয়েছে। ঠিক তখনি বঙ্গবন্ধুর শেখ মুজিবুর রহমান ও তার সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার ছাত্রলীগ এদেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাড়িয়ে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে কৃষকের ধান কেটে বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছে। যা করোনা সংকটে মানবিকতার উজ্জ্বল ইতিহাস হয়ে থাকবে।
নতুন প্রজন্ম গর্ব করে বলতে পারবে, জাতির সংকটকালীন মুহূর্তে ছাত্রলীগ সামনের সারিতে দাড়িয়ে কাজ করেছে।
এই করোনাভাইরাস যুদ্ধে ছাত্রলীগের মানবিকতা অনন্য নজির হয়ে থাকবে। কারণ করোনা এমন একটা ভাইরাস। যার হাত থেকে রক্ষা পেতে হলে সামজিক দুরত্ব মেনে চলতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বের হওয়া যাবেনা। কিন্তু এদেশের ছাত্রলীগের নেতাকর্মী জাতির প্রয়োজনে সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে কৃষকের ধান কেটে দিচ্ছে, মাড়াই করে বাসায় পৌঁছে দিচ্ছে। যা একমাত্র ছাত্রলীগের কর্মীরাই পারে। কারণ ছাত্রলীগ হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন। তারা শুধু মানুষের কল্যাণে কাজ করে। তবে একটা কথা আছে। এই ছাত্রলীগের মধ্যে কিছু কুচক্রী মহল, বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণা না করে। বরং ছাত্রলীগ লেবাসধারীরা এদেশের ছাত্রলীগের সোনালী অর্জনকে কলঙ্কিত করার চেষ্টা করে। তাই সংকটকালীন মুহূর্তে তাদের বিষয়ে সজাগ থাকতে হবে। এদেশের ইতিহাস হবে, ছাত্রলীগের মানবিকতার ইতিহাস।