প্রতিবেশী করোনায় আক্রান্ত হলে যা করবেন
ঝিনাইদহের চোখঃ
প্রতিবেশী কারও করোনা রিপোর্ট পজিটিভ হলে কি তাকে সপরিবার এলাকা থেকে উৎখাতের চেষ্টা করা উচিত? একেবারেই নয়। যদি জানতে পারেন পাশের বাড়ির কোনও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন তখন অবশ্যই তার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া উচিত বলে জানিয়েছেন ভারতের জনস্বাস্থ্য বিষয়ক চিকিৎসক সুবর্ণ গোস্বামী।
একনজরে দেখে নিন এই পরিস্থিতিতে কী করা উচিত?
প্রথমেই যাচাই করে নিন তিনি সত্যিই করোনা আক্রান্ত কি-না অথবা সর্দি, জ্বর বা শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গ আছে কিনা। এ রকম কিছু থাকলে সেই পরিবারের মানুষ হয়তো নিজেরাই ডাক্তারের কাছে যাবেন। যদি সাহায্য চান, তাদের সাহায্য করুন। অ্যাম্বুল্যান্স ডেকে দিন।
বাড়ির অন্যদের গৃহবন্দি থাকার জন্যে অনুরোধ করুন। প্রয়োজন হলে স্থানীয় প্রশাসনের সাহায্য চাইতে পারেন।
আক্রান্তের পরিবারকে বাইরে যেতে মানা করুন। তাদের রোজকার খাবার ও ওষুধের দরকার হতেই পারে। তাই ফোনে তাদের দরকারের কথা জেনে নিয়ে বাজার দোকান করে দরজার বাইরে পৌঁছে দিয়ে আসুন।
পাশাপাশি দরজা থাকলে দরজার হাতল-হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিতে হবে। নিজের বাড়ির দরজা নিয়ম করে জীবাণুমুক্ত করা উচিত।
সিঁড়ি, লিফট জীবাণুমুক্ত করে নেওয়া দরকার।
বাড়ির অন্যদের মধ্যে উপসর্গ দেখা যাচ্ছে কি-না খবর নিতে ভুলবেন না।
মুখোমুখি বা পাশাপাশি জানলা থাকলে তা বন্ধ করে রাখাই শ্রেয়। যদিও কোভিড ১৯ ভাইরাস বাতাসে ভেসে বেড়ায় না, তবুও এইটুকু সতর্কতা মেনে চলা উচিত।
বাড়িতে থাকলে খাবার আগে তো বটেই, মুখে চোখে হাত দেওয়ার আগেও হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেওয়া আবশ্যক।
রোগী বা তার পরিবারকে একঘরে করে রাখবেন না, ভাইরাস কিন্তু কাউকেই ছেড়ে কথা বলে না। সুতরাং সতর্ক থাকুন, কিন্তু অহেতুক আতঙ্ক ছড়াবেন না।
সাইকিয়াট্রিস্ট অমিতাভ মুখোপাধ্যায় জানান, অতিমারি হওয়ার কারণে কোভিড-১৯’র সংক্রমণ নিয়ে অনেকে নানা দোলাচলে ভুগছেন। মনে রাখতে হবে, ভাইরাস হেঁটে হেঁটে কারও বাড়িতে ঢুকে পড়ে না।
এদিকে সোসাল ডিস্ট্যান্স’র তোয়াক্কা না করে বাজারে ভিড় করছেন, অন্যদিকে এলাকার কারও হাঁচি-কাশি হলে তাকে একঘরে করে পাড়া ছাড়া করার চেষ্টা মানসিক অসুখের লক্ষণ বলে মনে করেন অমিতাভ।
অনেকের মনে সাইকোলজিক্যাল ডিনায়াল কাজ করে, তারা মনে করেন যার যা-ই হোক না কেন আমার কিছুই হবে না। পাশের বাড়ির লোক আক্রান্ত হলেই এদের অনেকে মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েন। তাদের জন্য অমিতাভ কয়েকটি পরামর্শ দিলেন।
পরামর্শ
কোভিড-১৯ ভাইরাসের সংক্রমণ মানেই যে মৃত্যুর পরোয়ানা তা কিন্তু নয়। এই কথা মনে রেখে নিজেই নিজের কাউন্সেলিং করা উচিত।
মনে রাখবেন, যারা কোভিড রোগীদের নিয়ে কাজ করছেন খুব ছোঁয়াচে রোগ হলে তাদের, সবার আগে আক্রান্ত হতেন বা তাদের মৃত্যু হতো। তারা যখন নিরাপদে আছেন, যথাযথ পরিচ্ছন্নতা মেনে চললে সমস্যা হবে না।
বেশিরভাগ মানুষ অনেক দূর পর্যন্ত খারাপ ভাবনা ভেবে ফেলেন। যেমন, যদি রোগটি হয়, বাড়ির সবারই হবে, হয়তো মারা যাব। হাসপাতালে জায়গা পাব না, এই সব নেগেটিভ ভাবনা ত্যাগ করতে হবে।
ঠাণ্ডা মাথায় যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলা করাই বুদ্ধিমানের কাজ।
প্রতিবেশী বিপদে পড়লে তাদের পাশে থাকুন। মনে রাখবেন, আপনার বিপদের দিনে তাদেরই সাহায্য লাগবে। হয়তো পাশের বাড়ির কোভিড-মুক্ত মানুষটির রক্ত থেকে পাওয়া প্লাজমা আপনার নিকটজনের জীবন বাঁচাবে।