ভিক্ষুকের কাছ থেকেও ঘুষ নিলেন কোটচাঁদপুরের দোড়া ইউপির মেম্বার!
ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার দোড়া ইউনিয়নের মেম্বার রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা, ভিজিএফ কার্ড ও সোলার প্যানেল দেওয়ার কথা বলে হতদরিদ্রদের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এমনকি তিনি একজন ভিক্ষুকের কাছ থেকেও ঘুষ নিতে কসুর করেননি। ইউপি মেম্বরের এই বাণিজ্য নিয়ে এলাকায় তোলপাড় শুরু হয়েছে। তদন্ত করে তাকে বরখাস্ত করার দাবি তুলেছেন ওয়ার্ডবাসী।
সরেজমিন গিয়ে জানা গেছে, দোড়া ইউনিয়নের ৮ নং ওয়ার্ডের পাঁচলিয়া ও সারুটিয়া গ্রামের একাধিক মানুষের কাছ থেকে রেজাউল মেম্বার টাকা নিয়েছেন। টাকা নিয়ে ভাতা না করে দেওয়ায় ফুঁসে উঠেছেন গ্রামবাসী।
সারুটিয়া গ্রামের মাঠপাড়ার মৃত অমেদ মন্ডলের স্ত্রী ফিরোজা বেগম অভিযোগ করেন, ৮ মাস আগে বিধবা ভাতার কার্ড দেয়ার কথা বলে রেজাউল মেম্বার তার কাছ থেকে তিন হাজার টাকা নেন। এখনো তিনি আমার কার্ড করে দিতে পারেননি।
একই গ্রামের মৃত আনসার মন্ডলের ছেলে আত্তাব জানান, ভিজিএফ কার্ড করে দেয়ার কথা বলে পাঁচশ’ টাকা নিয়েছিলেন রেজাউল মেম্বার। এখনো কিছুই পেলাম না।
একই গ্রামের আনার উদ্দিনের পুত্রবধূ জানান, মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ড দেওয়ার নাম করে চার হাজার টাকা নেন ওই মেম্বার। এখনো কার্ড পাইনি।
আশাদুলের স্ত্রী শিরিনা বেগম বলেন, আমার স্বামী দিনমজুর। বহু কষ্ট করে ৩ হাজার টাকা মেম্বারকে দিয়েছিলাম মাতৃত্বকালীন ভাতার কার্ডের জন্য। কিন্তু পায়নি।
ওই গ্রামের ভিক্ষুক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ভিজিএফ’র কার্ড করার কথা বলে অর্থলোভী মেম্বার দুইশ’ টাকা ঘুষ নিয়েছিল। কিন্তু টাকাও ফেরৎ দেয়নি, কার্ডও হয়নি।
ভিক্ষুক কুদ্দুসের অভিযোগ, মেম্বর তার কাছে ৫০০ টাকা চেয়েছিল। আমি ভিক্ষা করে ২০০ টাকা দিয়েছিলাম। টাকা কম দেওয়ায় আমার কার্ড হয়নি বলে মেম্বর সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।
ওই ওয়ার্ডের বাসিন্দা ইন্তাজ আলী বলেন, আমার নামে পরিষদ থেকে সেনেটারি লেট্রিন বরাদ্দ হয়। কিন্তু আমি পায়নি। উপজেলা থেকে অফিসার এসে দেখে যান আমি পায়নি। তারপরও ইউপি মেম্বরের কোন বিচার হয়নি।
এদিকে মনছের মন্ডলের বাড়িতে সোলার প্যানেল বসানোর কথা বলে ৮ হাজার টাকা ঘুষ নেন ওই মেম্বার। কিন্তু তাকে কোন সোলার প্যানেল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে।
গ্রামবাসীর ভাষ্যমতে রেজাউল মেম্বার বহু মানুষের কাছ থেকে বয়স্ক ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতা ও ভিজিএফ কার্ডধারীদের নিকট থেকে নিজে ও দালালদের মাধ্যমে অর্থ সুবিধা নিয়ে থাকেন। এভাবে তিনি লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিলেও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর ভায়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না।
এ ব্যাপারে রেজাউল মেম্বর জানান, তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। একটি মহল তাকে হেয় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে এবং মিথ্যা অপপ্রচার চালাচ্ছেন।
বিষয়টি নিয়ে দোড়া ইউপি চেয়ারম্যান কাবিল উদ্দিন বিশ্বাস বলেন, রেজাউল মেম্বার ভাতা বা সোলার প্যানেল দেয়ার নাম করে টাকা নিয়েছেন কি-না আমার জানা নেই। যদি রেজাউল মেম্বার কারো কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকেন, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।