হোয়াটসঅ্যাপ হ্যাক হলে কিভাবে বুঝবেন, কিভাবে উদ্ধার করবেন
ঝিনাইদহের চোখঃ
বাংলাদেশের একটি দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক শেখ সাবিহা আলমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে গতকাল একটি কল আসে। সেখানে সাংবাদিক পরিচয়ে এক ব্যক্তি জানান মিজ আলমের হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি ম্যাসেজ ভুল করে চলে গেছে। ম্যাসেজটিতে ছিল ছয় অংকের একটি সংখ্যা।
ওই ব্যক্তি অনুরোধ করেন মিজ আলম যেন সেই সংখ্যাটি তাকে ম্যাসেজ করে পাঠান। মিজ আলমের কাছে ওই ব্যক্তির পরিচয় বিশ্বাসযোগ্য মনে হওয়ায় তিনি সংখ্যাটি তাকে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন।
এর কিছুক্ষণ পরই তিনি টের পান তার এই হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাকাউন্ট অন্য কোথাও লগ ইন হয়ে আছে। যার ফলে হ্যাকাররা তার কল এবং টেক্সটের ওপর নজরদারি করতে পারছেন। একই ধরণের ঘটনা আরও কয়েকজনের সঙ্গেও ঘটেছে।
হোয়াটসঅ্যাপকে যোগাযোগের অন্যতম নিরাপদ অ্যাপ দাবি করা হলেও এই হ্যাকের ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে অ্যাপ ব্যবহারকারীদের।
হোয়াটসঅ্যাপে সাধারণত একজনের অ্যাকাউন্টে অন্য কেউ ঢুকতে পারে না, জানতে পারবে না তিনি কি বার্তা বিনিময় করছেন – এতে গোপনীয়তা অক্ষুণ্ণ থাকবে। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলেন, নম্বরটি শেয়ার করার কারণেই অন্য কেউ তার অ্যাকাউন্টে লগ ইন করতে পেরেছেন।
এক্ষেত্রে এ ধরণের নম্বর বা যেকোনো ধরণের তথ্য শেয়ার করার ক্ষেত্রে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। নিজের মোবাইল অন্য কারও হাতে না দেয়ার কথাও তিনি জানান।
কেননা অনেকে আপনার মোবাইল থেকে হোয়াটসঅ্যাপ অ্যাপ ওয়েবে গিয়ে কিউআর কোড খুলে তার কম্পিউটারে অ্যাকসেস নিয়ে নিতে পারবে।
যদি কোনভাবে আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েই যায় তাহলে সেটা টের পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাপটি আনইন্সটল করে, নতুন করে ইন্সটল করে নিতে হবে।এক্ষেত্রে বেশ কয়েকঘণ্টা সময় লাগে। আলমও তার অ্যাপটি মোবাইল থেকে আনইন্সটল করেন।
কিন্তু পুনরায় ইন্সটল করতে গিয়ে দেখেন তাকে ১২ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে বলা হচ্ছে।কিন্তু এই সময়ের মধ্যে হ্যাকাররা চাইলেই আপনার অ্যাপের সব তথ্য ডাউনলোড করে সংরক্ষণ করাতে পারবে। তাই সাবধান থাকে হোয়াটসঅ্যাপের কোন তথ্য গুগল ড্রাইভ বা আইক্লাউডে ব্যাকআপ না রাখাই নিরাপদ।
কেননা সেখানকার কোন তথ্য এনক্রিপ্টেড থাকে না অর্থাৎ গোপনীয়তার সুরক্ষা এ ক্ষেত্রে কাজ করবে না।তাই গোপনীয়তা বজায় রাখতে অ্যাপটির সেটিং-এ গিয়ে চ্যাট ব্যাকআপ অপশন থেকে “ব্যাকআপ” অপশনটি ডিজঅ্যাবল অর্থাৎ অকার্যকর করে দিতে পারেন।
প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞ জেনিফার আলম বলেছেন, যদি আপনার সব ডাটা ব্যাকআপ দেয়া না থাকে। তাহলে হ্যাকাররা আপনার পুরনো কোন তথ্য ডাউনলোড করতে পারবে না।
কিভাবে বুঝবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়েছে কিনা
এজন্য হোয়াটসঅ্যাপ ওপেন করুন এবং ডান পাশের সেটিংসে গিয়ে হোয়াটসঅ্যাপ ওয়েবে যান।সেখানে যদি কিউআর কোড স্ক্যানার আসে। তাহলে বুঝতে পারবেন আপনার অ্যাকাউন্ট হ্যাক হয়নি।
তবে স্ক্যানের বদলে যদি দেখায় কারেন্টলি অ্যাকটিভ এবং ডিভাইসের অপারেটিং সিস্টেম ও ব্রাউজারের নাম দেয়া থাকে, যেমন: কারেন্টলি ওপেন ইন গুগল ক্রোম ব্রাউজার উইন্ডোজ সেভেন। তাহলে বুঝবেন এই অ্যাপটি অন্য কোথাও খোলা রয়েছে।
সেক্ষেত্রে নীচে লেখা লগ আউট ফ্রম অল কম্পিউটারে ক্লিক করলে আপনি সব ডিভাইজ থেকে আপনার অ্যাকাউন্টটি লগ আউট করতে পারবেন।বাড়তি সুরক্ষার জন্য অ্যাপটি আনইন্সটল করে নেয়াই ভাল। আনইন্সটল করলেও আপনার অ্যাপের তথ্য গায়েব হয়ে যাবেনা। তাই চিন্তার কিছু নেই।
যে কোন তথ্য নিরাপদ এবং অন্যের ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখার জন্য মোবাইল বা ডিজিটাল ডিভাইসে টু-ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন একটা ভালো উপায়। সেখানে আপনাকে একটি মোবাইল এবং ইমেইল আইডি দিতে হবে।
সেক্ষেত্রে আপনার মোবাইল বা ইমেইল আইডির পাসওয়ার্ড জানা না থাকলে কারও পক্ষেই অ্যাকাউন্টে প্রবেশ করা সম্ভব না। এটাও আপনি সেটিংসে গিয়ে পরিবর্তনও করতে পারেন।
হোয়াটসঅ্যাপ সহ অনেক অ্যাপেরই আরও নানা রকম নিরাপত্তা ও গোপনীয়তা রক্ষার ব্যবস্থা আছে। আপনি যদি সেটিং>অ্যাকাউন্ট>প্রাইভেসিতে যান তাহলে আপনি সবই দেখতে পাবেন। যেমন ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক।
এভাবে আপনি আপনার প্রোফাইল ফটো, বা আপনি কোথায় ছিলেন বা আছেন, আপনার কাছে কারা বার্তা পাঠাচ্ছেন সেগুলো নিরাপদ রাখতে পারবেন।
আপনি ‘read receipt’ অর্থাৎ কারো পাঠানো বার্তাটি যে আপনি পড়েছেন তার প্রমাণস্বরূপ সেই টিক চিহ্নটা সুইচ অফ করে দিতে পারেন।
তবে হোয়াটসঅ্যাপের কেন্দ্রীয় সার্ভারে যদি হ্যাকাররা প্রবেশ করে তাহলে সেখান থেকে তথ্য নিরাপদ রাখা আপনার একার পক্ষে সম্ভব না। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা এজন্য বলছেন কোন তথ্যের ব্যাকআপ না রাখতে এবং নিয়মিত অ্যাপটি ম্যানুয়ালি আপডেট করতে। বিবিসি।