অন্যান্য

‘ভয় পাসনে বাবা, আমি কোনো অন্যায় করিনি’

ঝিনাইদহের চোখঃ

নিখোঁজের প্রায় দুই মাস পর হঠাৎ করেই সন্ধান মিললো সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজলের। তবে মুক্তভাবে নয়, তাকে উদ্ধারের পর মামলা হয়েছে অবৈধভাবে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের অভিযোগে। কাজলকে পিঠমোড়া করে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে যশোর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে আনা হয়। পরে আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।

খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন ছুটে গেছেন যশোরে। রোববার (৩ মে) বিকাল ৩টার দিকে যশোর ডিএসবি কার্যালয় থেকে আদালত প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হয় ফটোসাংবাদিক ও দৈনিক পক্ষকালের সম্পাদক শফিকুল ইসলাম কাজলকে। এ সময় তিনি মানসিকভাবে দৃঢ় ছিলেন। আদালত প্রাঙ্গণে তার ছেলে মনোরম পলক তাকে জড়িয়ে ধরেন। এ সময় কেঁদে উঠলেন সাংবাদিক কাজল। অশ্রুসিক্ত হয়ে শফিকুল ইসলাম কাজল তার ছেলেকে বলেন, ‘ভয় পাসনে বাবা, আমি কোনো অন্যায় করিনি। সত্যের জয় হবেই।’

কাজলের ছেলে মনোরম পলক জানান, একটি মামলায় জামিন হয়েছে। আমরা বাবাকে ফিরে পেয়েছি এতেই অনেক খুশি। তিনি বেঁচে আছেন- এজন্য শুকরিয়া। তার বাবার খোঁজ-খবর রাখার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেন। দেশবাসীর কাছে বাবার জন্য দোয়া চাই এবং বাবার দ্রুত জামিনের দাবি জানাই।

রাতে ‘উদ্ধারের’ পর কাজলের বিরুদ্ধে অবৈধ অনুপ্রবেশ আইনে একটি মামলা করে বিজিবি। আদালত সেই মামলায় কাজলের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন। তার বিরুদ্ধে ঢাকার শেরেবাংলা নগর, কামরাঙ্গীরচর ও হাজারীবাগ থানায় আইসিটি অ্যাক্টে মামলা থাকায় কোতোয়ালি থানা পুলিশ আটকাদেশ পেতে নতুন করে ৫৪ ধারায় মামলা দিয়ে গ্রেপ্তারের আবেদন জানান। পরে বিচারক এ মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। কারাগারে তাকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়েছে।

যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়ার ওয়েস্টিন হোটেলকেন্দ্রিক কারবারে জড়িতদের নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনের কারণে মানবজমিনের প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করেন মাগুরার সংসদ সদস্য সাইফুজ্জামান শিখর। সেই মামলার আসামির তালিকায় শফিকুল ইসলাম কাজলের নামও রয়েছে। গত ৯ মার্চ শেরেবাংলা নগর থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ওই মামলাটি করেন শিখর।

এর একদিন পর সাংবাদিক শফিকুল ইসলাম কাজল সন্ধ্যায় দৈনিক পক্ষকাল অফিস থেকে বের হন। এরপর থেকে তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। ফলে পরদিন ১১ মার্চ চকবাজার থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন তার স্ত্রী জুলিয়া ফেরদৌসী নয়ন। পরে ১৮ মার্চ রাতে কাজলকে অপহরণ করা হয়েছে অভিযোগ এনে চকবাজার থানায় মামলা করেন তার ছেলে মনোরম পলক। তার সন্ধান দাবিতে সাংবাদিকরা কর্মসূচিও পালন করেন।

এরমধ্যেই হঠাৎ করে সন্ধান মিলে সাংবাদিক কাজলের। শনিবার রাতে বেনাপোল সীমান্তের সাদিপুরের একটি মাঠের মধ্য থেকে তাকে উদ্ধার করা হয় বলে দাবি করে যশোর ৪৯ বিজিবির রঘুনাথপুর ক্যাম্পের টহল দল। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের অভিযোগে মামলা দিয়ে তাকে গভীর রাতে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করে বিজিবি।

রঘুনাথপুর বিজিবি ক্যাম্পের কমান্ডার হাবিলদার আশেক আলী বলেন, রাতে বিজিবির টহল দলের সদস্যরা কাজলকে সাদিপুর সীমান্তের একটি মাঠের মধ্য থেকে উদ্ধার করে। অবৈধভাবে ভারত থেকে আসার সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাকে বেনাপোল পোর্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button