কালীগঞ্জের কৃষক তহিদের ভাষ্য বেশি লাভের দরকার নেই, মানুষ সুস্থ থাক
সাবজাল হোসেন , ঝিনাইদহের চোখঃ
বিশ্বব্যাপি করোনার থাবায় জড়োসড়ো পৃথিবী। করোনা প্রতিরোধে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাথে বাংলাদেশের স্বাস্থবিভাগের অন্যান্য নির্দেশনার মধ্যে খাদ্যোভ্যাসের প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে নিয়মিত সুষম খবারের পাশাপাশি প্রতিদিন ভিটামিন সি খাওয়ার ব্যাপারটাও জোর দেয়া হয়েছে। কেননা ভিটামিন সি অনেক ধরনের ভাইরাইসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে টিকে থাকতে পারে। আর লেবুকে বলা হয়েছে ভিটামিন সি’র কারখানা।
এছাড়াও এতে রয়েছে মানবদেহের রোগ প্রতিরোধের জন্য উপকারী অন্যান্য উপাদানও। তাইতো বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে লেবুর এতো কদর। কিন্ত বাজারে এখন চাহিদার তুলনায় লেবুর যোগান কম। ফলে দাম চড়া। এমন সময়ে ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের দুধরাজপুর গ্রামের তহিদুল ইসলাম মিন্টুর বাগানে আগাম ধর আসা লেবু নজর কেড়েছে সকলের। বর্তমানে দামের বাজারে বাগান থেকেই বিক্রির মাধ্যমে বেশ লাভবান হচ্ছেন। তবে ওই কৃষকের ভাষ্য,লেবুতে বাড়তি লাভের দরকার নেই। তিনি ভাবছেন দেশ মহামারী করোনামুক্ত হোক।
সরেজমিনে দেখা যায়,উপজেলার দুধরাজপুর গ্রামের মাঠের মাঝখানে দুর থেকে নজরে আসে তহিদুল ইসলামের লেবুর বাগান। বাগানটির অন্যপাশে পান বরজ আর ফসলী ক্ষেত। বাগানে ঢুকে দেখা যায় ভিন্ন বয়সী লেবু সব ডালগুলোতে ঝুলে আছে। অবস্থাটা এমন বাগানের প্রতিটি গাছে যেন পাতার চেয়ে লেবু বেশি। আবার নতুন করে ফুলও আসছে।
কথা হয় লেবু বাগানের মালিক তহিদুল ইসলাম মন্টুর সাথে। তিনি জানান, বাবা এবাদৎ হোসেন মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি ৪ ভাই আর ৪ বোনের মাঝে ভাগাভাগির পর বসতবাড়ি আর মাঠ মিলে তিনি ৮০ শতক জমি পেয়েছেন। এতোটুকু জমির ওপর ভর করেই তাকে চলতে হয়। তারপরও ২ ছেলে সাজিদ আর রাফিদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে হয়। কখনও কখনও অভাব তাকে আটকিয়ে ধরে। তাই চাষের পাশাপাশি তিনি শুধু হাটের দিন বাজার থেকে পান কিনে ওই বাজারে বিক্রি করেন। তিনি প্রথমে ভেবেছিলেন তার ক্ষেতটিতে এমন কিছু চাষ করবেন যা মানুষের শরীরের জন্য উপকারী হয়। সে চিন্তা থেকেই কমখরচে বেশি উপকারী জিনিস হিসেবে তিনি কাগজী লেবুর চাষ করেছেন।
তিনি জানান, ২০১৬ সালে তার মাঠের ৪৪ শতক জমিতে চাষ করতে বেনাপোল পুটখালী থেকে ৬ হাজার টাকা দিয়ে ৪’শ চারা এনে রোপন করেন। এরমধ্যে অনেকগুলো চারা মারা যায়। বর্তমানে তার ক্ষেতে ২৬৮ টি গাছ আছে। একটি লেবু বাগান ঠিকমত পরিচর্যা করতে পারলে কমপক্ষে ৩০/৩৫ বছর লেবু পাওয়া সম্ভব। আবার অন্য ফসলের খরচ কম তবে লাভ বেশি। তিনি বলেন, তার ক্ষেতে রোপনের পরের বছরেই অনেক গাছে ফুল আসে। সে বছর প্রায় ২০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। ২০১৮ সালে লেবু থেকে পান ৯০ হাজার ২০১৯ সালে ১ লাখ ৪০ হাজার টাকার লেবু বিক্রি করেন। চলতি বছরের এ পর্যন্ত ৮০ হাজার টাকার বিক্রি করেছেন। বর্তমানে বাজারে লেবুর আমদানী বেড়ে যাওয়ায় দাম এখন বেশ কম। প্রথম দিকে প্রতিটি লেবু ১০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করতে পেরেছেন। বর্তমানে প্রতিটি লেবু ৩ টাকায় পাইকারী বিক্রি করছেন। গাছে এখনও কমপক্ষে ৫ লাখ লেবু আছে। এগুলো দাম আরও কমে প্রতিটি ২ টাকা করে পাইকারী বিক্রি করতে পারলেও এখনও ক্ষেত থেকে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা আসবে বলে আশা করছেন।
লেবুচাষী তহিদুল ইসলাম আরো জানান, তার ক্ষেতে পুরাটাই লেবুর চারা রোপন করা। অন্যদের চেয়ে বেশ খানিকটা ভিন্ন তার ক্ষেত। প্রতিবছর ৩ বার লেবু ধরে তার ক্ষেতে। কলমের চারার গাছের চেয়ে তার বাগানে বেশি লেবু ধরে।
প্রতিবেশি তবিবুর রহমান জানান,তহিদুল ইসলামের লেবু বাগানের গাছের সব ডালে লেবুর কারনে পাতা নজরে আসছে না। তিনি বলেন বর্তমান করোনা থেকে বাঁচতে লেবু বা সি ভিটামিনের খুব দরকার এটা চিকিৎসকরা বলছেন। ফলে লেবু হয়ে গেছে হটকেক। প্রথমদিকে লেবু পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন ৬০ টাকা করে হালিও বিক্রি করেছেন এই কৃষক। কিন্ত বর্তমানে দাম একটু কম। এছাড়াও চলমান পবিত্র রোজায় বাড়ি বাড়িতে লেবুর শরবত তৈরীতে লেবু ব্যবহার করছেন। তিনি বলেন, গ্রামের আরও অনেক কৃষকের বাড়িতে লেবু আছে। তারপরও কৃষক তহিদ মানুষকে ফ্রি লেবু দিয়ে থাকেন। তারভাষ্য গাছের ফল খেলে কমবে না।
কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষিকর্মকর্তা জাহিদুল করিম জানান,কামারাইল গ্রামের কৃষক তহিদুল ইসলাম মিন্টু একটি দেশী জাতের কাগজী লেবুর বাগান গড়ে তুলেছেন। তার এ জাতের লেবু বছরে তিনবার ধর আছে। তিনি বলেন, লেবুতে রয়েছে মানবদেহের অনেক রোগের প্রতিরোধ ক্ষমতা। ফলে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় থাকা দরকার পরিমান মত লেবু। তাই প্রত্যেক কৃষি পরিবারে লেবু গাছ থাকা জরুরী। আর বানিজ্যিকভাবে লেবু চাষ করতে পারলে তো কথায় নেই। এখন লেবুর অনেক দাম। তাই লেবুচাষীরা বেশ লাভবান হচ্ছেন। তিনি আরও বলেন, এ চাষে তেমন একটা খরচ নেই। সঠিকভাবে যতœ নিলে একটি বাগান থেকে দীর্ঘদিন লেবু পাওয়া যায়। তিনি ওই কৃষকের লেবুর বাগান দেখেছেন বাগানে যেভাবে লেবু ধরে আছে এমনিভাবে বছরে তিনবার ধরলে ব্যাপক লাভের ব্যাপার। তিনি বলেন বাগানে যে পরিমানে লেবু ধরে আছে তাতে এ মৌসুমেই দাম কমে গেলেও কমপক্ষে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আসবে বলে তিনি মনে করছেন।
এ ব্যাপারে বাগের হাটের মেডিকেল এ্যাসিটেন্ট ট্রেনিং স্কুলের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আলতাফ হোসেন জানান, লেবুকে বলা হয় সি ভিটামিনের একটি বড় উৎস। আর বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা রয়েছে ভিটামিন সিতে। করোনা প্রতিরোধে শরীর সুস্থ রাখতে ভিটামিন সি গুরুত্বপূর্ণ ভ’মিকা রাখতে পারে। এক কথায় লেবু বা ভিটামিন সি ভাইরাসের সাথে যুদ্ধ করে। ফলে শরীর সুস্থ রাখার জন্য লেবুর গুরুত্ব অপরিসিম বলে তিনি যোগ করেন।