পাঠকের কথা

মৃত্যুর আলিঙ্গনে লাশ এবং অনুতপ্ত—মিঠুন কুমার কর্মকার

ঝিনাইদহের চোখঃ

আসুন মৃত্যুর সাথে আলিঙ্গন করি। কি! থমকে গেলেন।
ভাবছেন, এটা কি করে সম্ভব? ক্ষণেকের জন্য হলেও বিবেক নাড়া দিয়ে বলছে যদি মৃত্যু হয়! মৃত্যু কি সব মিথ্যাকে গ্রাস করে সব সত্যকে সবার সামনে উপবিষ্ট করবে? নাকি মৃত্যুর পর সব সত্যকে মিথ্যা দ্বারা ঢেকে দেবে এই সুন্দর জীবনটাকে?

ভাবছেন! সত্যিই কি ভাবছেন? কি! বিবেক কি সত্যিই নাড়া দেচ্ছে আপনাকে?
যদি নাড়া দিয়ে থাকে তবে সত্যি সত্যি প্রস্তুত হন মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে। না জানি কখন, কোন মুহুর্তে হাজির হতে পারে এই মৃত্যু রুপি ভয়াল গ্রাস। আর সঙ্গে সঙ্গে এক নিমিষেই আপনার সব অহংকারকে দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে মাটির সাথে মিশিয়ে দিতে পারে এবং আপনি যতই অর্থ সম্পদের কালো পাহাড়ের উচুতে দাড়িয়ে মিথ্যা বুলিতে বলার চেষ্টা করেন ‘আমি সমাজ এবং রাষ্ট্রের শক্তিশালী মানুষ’। কিন্তু আপনাকে মনে রাখতে হবে যে সর্বশক্তিমান ¯্রষ্টার কাছে আপনি কিছুই না।

কি! এখনও ভাবছেন। একটু তাকিয়ে দেখেনতো এই সুন্দর পৃথিবীর মায়ায় আবদ্ধ হয়ে আমরা সবাই মিথ্যা বড়াইয়ে দাম্ভিক হচ্ছি শুধুমাত্র। কিন্তু যখন এই মায়ার পৃথিবী থেকে আমাদের আত্মা ত্যাগ করবে শুধু পড়ে থাকবে মানুষ রুপি দেহের কাঠামো। সব পরিচয় মুছে যেয়ে মিলবে নতুন পরিচয়ে। যে পরিচয়ে আমাদের কোনো দাম্ভিকতা থাকবে না। থাকবে না কোনো স্বাদের নাম! যে নাম হয়তোবা আমাদের পিতা-মাতা বা নিকট আত্মীয় অতি আপন করে রেখেছিল এবং মিষ্টি করে ডাকতো। কিন্তু মৃত্যুর পর আমাদের একটি নামই থাকবে সেটি হলো ‘লাশ’। হ্যাঁ, লাশ!!! আমাদের যে প্রিয় স্বজনেরা মিষ্টি নাম ধরে ডাকতো তারাও বলবে গতকাল ‘অমকের’ লাশটাকে সমাধি করে আসলাম। দুচোখ বেয়ে অশ্রæ ঝরা জন্মদাতা পিতা মাতাসহ আপন স্বজনেরা বার বার মুর্ছা যাবে এবং পাগলের মতো প্রলাপ করবে। হয়তোবা মৃত দেহের পাশে একটু থাকতেও চাইবে। কিন্তু পাড়া প্রতিবেশীরা বাঁধা দিয়ে বলবে লাশের পাশে বেশিক্ষণ থাকতে নেই। যে পাড়া প্রতিবেশীরা জীবিত অবস্থায় নাম ধরে ডাকতো তারাও এতো বছরের স্বাদের ডাক নামটাকে মৃত্যুর পর ‘লাশ’ বলে আখ্যায়িত করবে।

মৃত্যুর সাথে সাথে নিয়ে যাবে নির্জন নিশ্চতব্দ সমাধি স্থলে। যে স্বাদের দেহটাকে নরম গদিতে শুয়িয়ে রাখতাম। একটু গরমেই এসি বা ফ্যান ছেড়ে দিতাম। শীতের প্রকোপ থেকে বাঁচতে লেপটাকে আসটেপিসতে জড়িয়ে নিতাম একটু প্রশান্তি লাভের জন্য কিন্তু মৃত্যুর পর আমাদের স্বাদের দেহটা রক্তে পচে গলিত হয়ে পোকায় পরিণত হবে বা অগ্নি কান্ডের কুন্ডলিতে ভেনিশ হয়ে যাবে।

কি! সত্যি সত্যি বিবেক নাড়া দিলো। একটু থমকে গেলেন। হ্যাঁ, মৃত্যু তো এমনি! সব সময় ভালো কাজের স্বাক্ষী হয়ে থাকে আর খারাপ কাজকে বিলিন করে দেয় এই মায়ার পৃথিবী থেকে। যে পৃথিবীতে কোনো এক সময় আমাদের অস্তিত্ব ছিল।
তাই আসুন বিবেককে জাগ্রত করি। ভুলের জন্য ক্ষমা চাই সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তার কাছে। বেঁচে থাকতে সময় দিই মা-বাবা, স্ত্রী, সন্তান এবং আপনজনকে। নিজেদের অস্তিত্ব রেখে যায় ভালো কাজের মাধ্যমে।

কি! এখনও ভাবছেন।
কিভাবে অন্যের সমালোচনা করা যায় নাকি আত্ম সমালোচনা?
কিভাবে অন্যকে দমানো যায় নাকি বন্ধুর হাত বাড়ানো যায়?
কিভাবে অন্যকে অপকার করা যায় নাকি উপকার করা যায়?
কিভাবে অশ্রদ্ধা করা যায় নাকি শ্রদ্ধা?
যাইহোক সব ভাবনার শেষে মৃত্যুর পর জয় হোক সত্যের এবং সব ভালো কাজের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button