পাঠকের কথা

করোনার আতঙ্কে আর্তনাদ ও স্বপ্নে দেখা অগ্রিম বিদায়—মিঠুন কুমার কর্মকার

ঝিনাইদহের চোখঃ

করোনার কলাড় থাবায় আতঙ্কিত মানুষের আর্তনাদ। হুম, এটি বাঙালির আর্তনাদ। একটু ভালো থাকার আর্তনাদ। দু’মুঠো খেয়ে বেঁচে থাকার আর্তনাদ। ঘরবন্দী জীবন থেকে বাঁচবার আর্তনাদ। প্রিয় মানুষ গুলোর পাশে থাকার আর্তনাদ। মধ্যবিত্ত জীবনে হাত পেতে না পাওয়ার আর্তনাদ। পৃথিবীর বিশুদ্ধ, স্বচ্চ পরিবেশে ঘুরতে না পারার আর্তনাদ। কর্মজীবী মানুষের কর্ম না করতে পারার আর্তনাদ। খেটে খাওয়া দিনমুজুরদের ঘরে বসে থাকার আর্তনাদ। কৃষক, কামার, কুমোর, জেলে, শ্রমজীবী মানুষদের রৌদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে সঠিক ত্রাণ না পাওয়ার আর্তনাদ। অনাহারে জর্জরিত ছোট্ট শিশুটিকে খেতে দিতে না পারা মায়ের আর্তনাদ। মহান পেশাজীবী মানুষদের সঠিক প্রোণোদনা না পাওয়ার আর্তনাদ। আপন জনের মৃত্যুতে পাশে না থাকতে পারার আর্তনাদ। পরিবারের একমাত্র কর্মজীবী মানুষটিকে হারানোর আর্তনাদ। ক্ষুধার জ¦ালা সহ্য করতে না পারার আর্তনাদ। পাশে থাকা ডাক্তার, পুলিশ, সাংবাদিক ভাইকে হারানোর ভয়ের আর্তনাদ। দেশের চালকসহ চালিকা শক্তি থেমে যাওয়ার ভয়ের আর্তনাদ। রাজনীতি জীবনে মহৎ কাজে উজ্জীবিত হয়ে আপনজন থেকে দূরে চলে যাওয়ার আর্তনাদ। সত্যের সন্ধানে কলমকে ভালোবেসে পরিবারকে সময় দিতে না পারার আর্তনাদ। নি¤œ, মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষদের চোখের জল মুছাতে না পারার আর্তনাদ। স্মৃতিময় অনাবিল আনন্দকে আলিঙ্গন না করতে পারার আর্তনাদ। সবাই মিলে উৎসব না করতে পারার আর্তনাদ। মুক্তজনসভায় গিয়ে মিছিল, মিটিং করতে না পারার আর্তনাদ। ধর্মীয় স্থানে গিয়ে সবাই মিলে ধর্ম পালন না করতে পারার আর্তনাদ। প্রিয় পাঠশালায় বন্ধুদের সাথে পড়তে না পারার আর্তনাদ। প্রিয় স্থানে আড্ডা বা প্রিয় মাঠে খেলতে না পারার আর্তনাদ। পরিশেষে বেঁচে থাকার লড়াইয়ে পরাজিত হওয়ার আর্তনাদ। চারিদিকে শুধুই আর্তনাদ আর আর্তনাদ।

তবুও স্বপ্ন দেখি…
কালো মেঘে ঢাকা সব ভয় কেটে যাবে। পৃথিবী একদিন সেজে উঠবে নিজস্ব নব রুপে। নতুন পৃথিবীতে ভরে উঠবে অনাবিল আনন্দে। নতুন সূর্য উদিত হবে। পাখির কলোকাকলিতে মুখোরিত হবে চারিদিক। কৃষক, কামার, কুমোর, জেলে, শ্রমজীবী মানুষেরা হাসিমাখা মুখে নিজের কর্মে উজ্জীবিত হবে। প্রেরণা ফিরে পাবে সব মহৎ পেশার কর্মজীবী মানুষেরা। অহংকার, গর্ব বিলীন হয়ে ভালোবাসায় ভরে উঠবে নতুন রুপের পৃথিবী। গোলা ভরা ধানে ভরে উঠবে কৃষকের উঠান। অনাহার থেকে মুক্তি পাবে মায়ের কোলের ছোট্ট শিশুটি। আপনজনদের নিয়ে সুখে থাকবে খেটে খাওয়া মানুষগুলো। ক্লান্ত সাহসী রাজনীতিবিদ, পুজনীয় ডাক্তার, যোদ্ধা পুলিশ, সত্যের বার্তাবাহক সাংবাদিক ভাই ফিরে পাবে তাদের আপন নীড়, আপন স্বজনকে। প্রিয় স্থানগুলো, মাঠ, ধর্মশালা, জনসভা, উৎসব অঙ্গনগুলো ভরে উঠবে প্রিয় মানুষগুলোর সমাগমে। কর্মচঞ্চলতায় ভরে উঠবে দেশ ও পৃথিবী। প্রিয় পাঠশালায় আবার বন্ধুদের সাথে আড্ডা হবে, শোনা হবে প্রিয় শিক্ষকের মনোমুগ্ধকর চমৎকার আলোচনা। আবার জয়গান হবে রমণার বটমুলে, বৈশাখী উৎসবে সাজা হবে পাঞ্জাবি আর শাড়িতে। আবার বাংলার বাঘদের উৎসাহিত করা হবে স্টুডিয়ামে। খেলার মাঠে গলা ফাটিয়ে চিৎকার করে বলা হবে ‘সাবাস.. বাংলাদেশ… সাবাস….গর্জে ওঠো’। আবার বিজয়ের মিছিল হবে। আবার দেশের জয়গান হবে ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি……’।

হ্যাঁ, আমরা জিতবো। বাঙালি জাতি; বীরের জাতি। মাথা নোয়ানোর নয়। তাজা রক্তের বিনিময়ে আমরা মায়ের মুখে হাসি ফুটাতে অস্ত্র ধরে স্বাধীনতা ছিনিয়ে এনেছি। ভয়কে জয় করায় সাহসী বাঙালির প্রেরণা। একদিন করোনা তোমাকে পরাজিত করে বিজয়ের হাসি হাসবো আমরাই। শুধু অপেক্ষায় রইলাম। আশা জাগানো স্বপ্নকে বাস্তবায়িত হোক নতুন সূর্য উদয়ের মাধ্যমে। বীর শহীদদের আত্মত্যাগে অগ্রিম বিদায় জানাই হে করোনা….

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button