যেখানে আদিকাল থেকেই প্রচলিত ছেলে সন্তান মানেই একটি লাঠি
শেখ সবুজ আহমেদ, ঝিনাইদহের চোখঃ
ঝিনাইদহের শৈলকুপায় যত মানুষ আছে প্রায় ততটা ঢাল তলোয়ার আছে। এ এলাকায় কোনো ছেলে সন্তান জন্মনিলে লোকে বলে একটি লাঠি বাড়লো। অবসরে গ্রামবাসী হিসাব করে কোন গোষ্ঠীতে কতগুলো লাঠি। লাঠি বলতে বুঝায় কতজন ছেলে সন্তান।
মোল্লা বাড়ি বা মন্ডল বাড়ি ছেলে বেড়ে গেলে খা বাড়ি বা বিশ্বাস বাড়ি বা জোয়াদ্দার বাড়ির লোকেরা ব্যতিব্যস্ত হয় তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে। যে গোষ্ঠীতে ছেলে সন্তান জন্ম নেয় বিপরীত গোষ্ঠীর লোকেরা খুবই অসন্তুষ্ট হয় আবার মেয়ে হলে তারা অনুরুপ খুশি হয়। কারণ মেয়েকে লাঠি হিসেবে গন্য করা হয় না।
এমন কোনো বাড়ি নেই যে বাড়িতে ঢাল তলোয়ার নেই! এ এলাকার লাঠিখেলাকে ঐতিহ্য হিসেবে গন্য করা হয়। এলাকার পরিবেশ কিছুটা সুস্থ থাকলে এবং মাঠে কাজ কর্ম কম থাকলে বাদ্যযন্ত্র ভাড়া করে তালে তালে লাঠি খেলা করা হয়। লাঠিখেলা অনুষ্ঠানে আবার ঢাল তলোয়ার খেলাও চলে। খেলতে খেলতেই শেখে আমাদের শিশুরা। এই শিশুরা যখন একটু বড় হয় স্কুলে কলেজে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে শারিরীকভাবে বেড়ে উঠলেও তাদের ভিতরের আদিমতা রয়েই যায়।
যেমন এই করোনাকালে ১২ দিনের ব্যবধানে ৪ টি খুনের ২ জনই ছাত্র। করোনার ছুটি না হলে হয়তো অন্তত এই দুটি প্রাণ অকালে ঝরতো না। গ্রামের লেখাপড়া না জানা লোকের চেয়ে লেখাপড়া জানা লোকগুলো বেশী খারাপ। অবশ্য এদের শিক্ষিত বলা যায় না। চাকুরী ব্যবসা বা অন্যান্য কারনে শহরে যারা থাকে গ্রামে এসে এরাও লাঠিয়াল হয়ে যায়।
সম্প্রতি ধুলিয়াপাড়া গ্রামের দুটি খুনের ব্যাপারে একথা বলতেই পারি। এমনো কথা শোনা যাচ্ছে শহরে থাকা লোকগুলো গ্রামে এসে টাকার গরম দেখিয়ে মানুষ খুনে গ্রামবাসীদের উদ্বুদ্ধ করেছে। এবার গ্রামে এসে দেখলাম গ্রাম বদলে গেছে। প্রতি বাড়িতে নতুন নতুন দালান উঠছে। গ্রামে কোনো অভাব নেই। করোনাকাল দীর্ঘায়িত হলেও একজন মানুষও না খেয়ে মরবে না। গ্রামের মানুষের মধ্যে করোনা কোনো প্রভাব ফেলেনি। সবকিছু চলছে স্বাভাবিক।