শৈলকুপার সন্তান প্রভাষক মনোয়ার হোসেন বেতনের টাকায় বানাচ্ছেন বৃদ্ধাশ্রম
ঝিনাইদহের চোখঃ
নিজের বেতনের টাকা দিয়ে সমাজে আলোর মশাল জ্বালিয়ে চলেছেন প্রভাষক মনোয়ার হোসেন মনু। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি করোনাভাইরাসে সমাজের সুবিধাবঞ্চিত ও কর্মহীন মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ, প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা ও বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য ক্রয় করেছেন জমি।
পাশাপাশি মেধাবি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি প্রদান, টাকার অভাবে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পারা শিক্ষার্থীদের সহযোগীতা, বিনা বেতনে শিক্ষার্থীদের পড়ানো, সনাতন ধর্মের মেয়েদের বিবাহ কাজে সহযোগীতা, মসজিদ উন্নয়ন, কবরস্থান উন্নয়ন, ঈদগাহ মাঠ উন্নয়ন নিরবে এ কাজগুলো করে যাচ্ছেন এই শিক্ষক।
তিনি হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রী কলেজের পদার্থবিজ্ঞান ও আইসিটি বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা উপজেলার ত্রিবেনী গ্রামের মো. শাহজাহান মিয়া ও মোছা. কুলসুমা বেগমের সন্তান মনোয়ার হোসেন মনু ত্রিবেনী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাশ করেন। তারপর রামচন্দ্রপুর কিসমত আলী মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাশ করে ভর্তি হন ঝিনাইদহ সরকারী কেসি কলেজে।
তারপর শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় সিলেট থেকে অনার্স (সম্মান) নিয়ে পড়াশুনা করেন।
লেখাপড়া শেষ করে তিনি একটি কলেজে গেস্ট টিচার (অতিথি শিক্ষক) হিসাবে কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ২০১২ সালে তিনি মৌলানা আছাদ আলী ডিগ্রী কলেজে পদার্থ বিজ্ঞান বিষয়ে প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৩ সালে আইসিটি ক্লাস শুরু করেন।
কলেজে যোগদানের পর থেকে তিনি গরীব ও অসহায় শিক্ষার্থীদের বিনা বেতনে প্রাইভেট পড়ানো শুরু করেন। এছাড়া তিনি কমপক্ষে ৩০/৪০ জন শিক্ষার্থীকে বিনা বেতনে পড়ান। কিছু শিক্ষার্থী তাকে নামেমাত্র বেতন দেন। টিউশনির টাকা ও বেতনের টাকা দিয়ে তিনি শুরু করেন সমাজ উন্নয়ন মূলক কার্যক্রম।
প্রভাষক মনোয়ার হোসেন মনু জানান, মানুষ ও সমাজের জন্য কিছু করা তার নেশা। কোন মানুষ ও শিক্ষার্থীদের উপকার করতে পারলে তার ভাল লাগে। নিজ জন্মস্থানের প্রতিও টান রয়েছে তার। তাই নিজ এলাকার উন্নয়ন করার জন্য তিনি সবর্দা চিন্তা করেন।
নিজ গ্রামে একটি প্রাইমারি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার জন্য প্রায় ৫ শতক জমি কিনেছেন তিনি। সেখানে তিনি প্রাইমারি স্কুল গড়ে তুলবেন।
স্বপ্ন দেখছেন একটি বৃদ্ধশ্রম করার। বৃদ্ধাশ্রম করার জন্য ২ শতক জমি তিনি ক্রয় করেছেন। ২০১৮ সালে তার বাবা-মার নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাহজাহান–কুলসুম কল্যাণ তহবিল’ যার উদ্দেশ্য ছাত্র-ছাত্রীদের সেই তহবিল থেকে আর্থিক সাহায্য ও উৎসাহ প্রদান করা।
এই তহবিলের মাধ্যমে বিভিন্ন স্কুলের এসএসসি পাশকৃত শিক্ষার্থীদের এককালিন বৃত্তি প্রদান করা হয়। প্রতিটি স্কুলের সর্বোচ্চ রেজাল্টধারীদের মধ্য থেকে ৩ জন করে বৃত্তি প্রদান করা হয়।
প্রথম স্থান অধিকারী ৩ হাজার, দ্বিতীয় স্থান অধিকারী ২ হাজার ৫ শ টাকা। তৃতীয় স্থান অধিকারীকে ২ হাজার টাকা করে দেওয়া হয়। এলাকার ৪টি মসজিদে ইনডোর সাউন্ড সিস্টেম কিনে দিয়েছেন তিনি।
সনাতন ধর্মের যারা অসহায় মানুষ রয়েছে তাদের মেয়ে বিয়েতে তিনি যতটুকু সম্ভব সহযোগীতা করে থাকেন। এবারের করোনাভাইরাস মহামারীর সময় ২ শত পরিবারের মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন তিনি।
২০১৯ সালে তার বাবা-মায়ের নামে প্রতিষ্ঠা করেন ‘শাহজাহান–কুলসুম ফাউন্ডেশন’। ভবিষ্যতে এ প্রতিষ্ঠানের কার্যপরিধি আরও বাড়াতে চান তিনি। এছাড়া তিনি মাধবপুর উপজেলার অনেক মসজিদে নগদ অর্থ প্রদান করেন।
প্রভাষক মনোয়ার হোসেন জানান, কেউ যদি বলে তার আর্থিক অবস্থা ভাল নয় তাহলে তার কাছ থেকে তিনি বেতন নেন না। যাদের সামর্থ রয়েছে তারা যে বেতন দেন সেগুলো দিয়েই তিনি এই প্রতিষ্ঠানগুলো পরিচালনা করেন।
তিনি বলেন- ‘আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে অর্থাভাবে এগুলো করে উঠতে পারছি না। অতিরিক্ত কাজ ও পরিশ্রম করে স্বপ্নগুলো পূরণের ইচ্ছে আমার। অনেকে ভাবতে পারেন এগুলো বলার কি দরকার; কিন্তু আমার মনে হয়েছে আমি যদি আমার ইচ্ছেশক্তির দ্বারা এগুলো করতে পারি তবে অন্যরা পারবে না কেন? তারাও পারবে এবং করবে।’