ঝিনাইদহে বিলে অবৈধ পুকুর খনন/জলাবদ্ধতায় দিশেহারা কৃষক (ভিডিও)
ঝিনাইদহের চোখ-
বিলে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করায় ঝিনাইদহ সদরের সাধুহাটিসহ কয়েকটি ইউনিয়নের ধানের মাঠে জমি চাষ করতে পারছে না কৃষক। পুকুরের কারণে পানি জমে থাকছে শুষ্ক মৌসুমেও । বর্ষার পানি নিষ্কানের সব পথও বন্ধ হয়ে গেছে। সম্প্রতি ধানের জমি ডুবে যাওয়ায় কাওছার নামের এক কৃষক আত্মহত্যা করেছেন। অবৈধ পুকুর খননকারিদের শাস্তির আওতায় আনার দাবি কৃষকদের। এ অবস্থা চলতে থাকলে খাদ্যে উদ্বৃত্ত জেলার স্থলে খাদ্য ঘাটতি জেলায় পরিণত হবে ঝিনাইদহ।
জেলার সদর উপজেলার সাধুহাটি,মধুহাটি সাগানা ইউনিয়নের যেসব এলাকায় আগে ধান,গম,পাট,আখ, ছোলা মুগ,মসুর ও নানা জাতের শাকসবজি আবাদ হতো এখন তা পানিতে তলিয়ে রয়েছে। এলাকার বিলে ও মাঠে পুকুর খনন করে মাছ চাষ করায় এ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যক্তিগত জমির পাশাপাশি সরকারি খাস জমিতে পুকুর খনন করায় পানি বেড়ে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের সব রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। তাতে ফসলি জমিতে পানি জমে থাকার পাশাপাশি নবগঙ্গা, চিত্রা ,বেগবতি নদীর সাথে পানি চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
সাধুহাটি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নাজির উদ্দিন আহমেদসহ জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয়রা বলছেন,পুকুর মালিকরা রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের রোধ করা যাচ্ছে না। সম্প্রতি রাঙ্গিয়ার পোতা গ্রমের কৃষক কাওছার আলী ধানের জমি ডুবে যাওয়ায় আত্মহত্যা করেছেন। ভবিষ্যতে হয়তো আরো কৃষক এমন পথ বেছে নেবেন।
কৃষক কাওছার আলী স্ত্রী ও মা জানান,পাকা ধানের ৫ বিঘা জমি পানিতে ডুবে যাওয়ায় কাওসার মনোকষ্টে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। ধানের জমিতে পানি উঠে যাবার কারণে কেউ কেউ বাধ্য হয়েও ফসলি জমিখেকো পুকুর খননকারীদের কাছে জমি লিজ দিচ্ছেন। এসুযোগ কাজে লাগিয়ে তারা বাড়িয়ে চলেছে পুকুর খনন ও মাছ চাষ। ফলে ফসলি জমি বিলুপ্ত হতে চলেছে।
সাধুহাটি বীজ উৎপাদন খামারের কৃষি কর্মকর্তা জানান, বিলে ও মাঠে পুকুর খননের বিষয়ে কোনা ব্যবস্থা না করা হয় তবে এই সাধুহাটি বীজ উৎপাদন খামারসহ পুরো এলাকা তলিয়ে যাবে। ফসল ও মানুষের চরম ক্ষতি হবে। তিনি আরো বলেন, ফার্মের ১২ একর বিজতলা পানির নীচে তলিয়ে আছে । বর্ষায় ২২ একর তলিয়ে যায়। ফলে কৃষি খামার খেকে বিজ সরবরাহ ব্যাপক হারে কমে যাচ্ছে।
ঝিনাইদহ জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, জেলা প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কেউ জমির শ্রেণীর পরিবর্তন করতে পারেন না। ধানের মাঠে ও বিলে বুকে খাস জমিতে পুকুর কেটে ফসলহানি ও পানি প্রবাহ রুদ্ধ কারিদের আইনের আওতায় আনা হবে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ফসল চাষের নিশ্চিত পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে। কোনোভাবেই কুকুর খননকারি প্রভাবশালীরা ছাড় পাবেন না।
পর্যন্ত গ্রেফতারও করা হয়নি। পুকুর কাটার অভিযোগ দিলে উল্টো কৃষককেই হয়রানি করছে প্রশাসন।
এলাকাবাসির অভিযোগ, সুবিধাবাদি মাছ চাষিদের সহযোগিতায় প্রভাবশালি নেতা, সরকারি আমলারা আছেন। কৃষক মরলে তাদের কি?
এলাকাবাসি জানায়, এক সময় চরমপন্থি, আরেক সময় সরকারি দলের ছত্রছায়ায় থাকে এরা। সবসময় দাপট এদের । আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ। বৈধ-অবৈধ টাকার মালিক বনে গেছে।
সাধুহাটি বীজ উৎপাদন খামারের উপ-পরিচালক জানান, এবিষয়ে তিনি জেলা প্রশাসক ও কৃষি বিভাগকে অবহিত করেছেন। তবে এখনও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট পুকুর মালিক সাধুহাটি কৃষিফার্ম সংলগ্ন জমিতে নতুন করে মেশিন লাগিয়ে রাতে পুকুর কেটেছে ।
সাগান্ন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দীন আল মামুন জানান, ওইসব পুকুর কাটার কারণে তার এলাকার স্বাভাবিক ফসলের জমি পানিতে ডুবে যাচ্ছে।
প্রভাবশালী আনার হোসেন নল বিলের মাঝে বিশাল অট্টালিকা বানিয়ে ২০০ বিঘা জমিতে পুকুর কেটে অন্যের ক্ষতি করে মাছের চাষ ও ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। তিনি জেলা প্রশাসনের বিনা অনুমতিতে বিলের বুকে বিশাল প্রশাদ তৈরি করেছেন। পাশে বিলের বুকে পানি প্রবাহের পথ বন্ধ করে মাছ চাষ করছেন।