ঝিনাইদহের চোখ-
পড়ালেখার পাশাপাশি আয়-রোজগারের জন্য মুদির দোকান দিয়েছিলেন তিনি। পুঁজির জন্য দারস্থ হয়েছিলেন স্থানীয় এক মহাজনের। সুদের টাকা পরিশোধ করতে তাঁকে ধার করতে হয়েছিল অন্য মহাজনের কাছ থেকে। পৈতৃক জমি বিক্রি করেও তিনি আর ঋণ পরিশোধ করতে পারেননি।
ঋণের জালে জড়িয়ে নিঃস্ব এই তরুণের নাম সুজন বিশ্বাস (২৫)। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার উল্লা-জয়নগর গ্রামের মহন বিশ্বাসের ছেলে। মহাজনি সুদ ব্যবসার প্রতিবাদ ও জনসচেতনতা বাড়াতে সুজন সাইকেল চালিয়ে প্রচারণা শুরু করেছেন। গতকাল বুধবার নিজ গ্রাম থেকে তিনি ঢাকার উদ্দেশে রওনা হয়েছেন।
গতকাল সকাল ১০টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার নিমতলা এলাকায় সুজনের সঙ্গে কথা হয়। তাঁর সাইকেলের সামনে ও পেছনে লাঠি বাঁধা। মাথার ওপর নৌকা আকৃতির পলিথিনের ছাউনি। পেছনে ও এক পাশে ব্যানার টানানো।
সুজন বলেন, তিনি ২০০৪ সালে এসএসসি পাস করেন। কলেজে পড়ার পাশাপাশি তিনি মুদির দোকান দেন। গ্রামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন। মাসে সুদ দিতে হতো ৮ হাজার টাকা। সুদের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে আরও অনেকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছেন। একপর্যায়ে তাঁর ব্যবসা বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু ঋণের জাল থেকে তিনি আর বের হতে পারেননি। সুদখোর মহাজনেরা তাঁকে ছাড়ছেন না। তাঁর মতো ঋণ নিয়ে উপজেলার জামালপুর ইউনিয়নের কয়েক শ মানুষ বিপদে আছেন। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে এবং মহাজনি সুদ ব্যবসার বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি করতে তিনি সাইকেল ভ্রমণে বেরিয়েছেন। মাগুরা, ফরিদপুর, মানিকগঞ্জ হয়ে তিনি ঢাকায় যাবেন। পথে তিনি লোকজনের সঙ্গে সুদ ব্যবসার কুফল নিয়ে কথা বলবেন।
সুজন আরও বলেন, ‘মহাজনি সুদ ব্যবসার শিকার আমি একা নই। এলাকার অসংখ্য মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছে। ঢাকায় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে বিষয়টি জানানোর চেষ্টা করব।’
জামাল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোদাচ্ছের হোসেন বলেন, তাঁর ইউনিয়নে সুদ ব্যবসা চলে, এটা তিনি শুনেছেন। যাঁরা এগুলো করেন, তাঁরা অত্যন্ত গোপনে করে থাকেন। এ কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেওয়া হবে।