কালীগঞ্জ

কালীগঞ্জে গাছ কাটা দূর্বৃত্তরা বেপরোয়া/ এ কেমন শত্রুতা

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-

মাঠে চাষযোগ্য জমি বলতেই মাত্র ৯ শতক। এ জমিতে গত আবাদে শসা চাষে প্রাকৃতিক দূর্যোগে মার খেয়েছি। পরে নতুন উদ্যোম আর নতুন আশায় ধারদেনার মাধ্যমে বেগুনের চাষ করেছিলাম। ক্ষেতে বেগুনের ধরও এসেছিল। বর্তমান দামের বাজারে কয়েক দিন পরেই বেগুন বিক্রি করা যেতো। যার মাধ্যমে ধারদেনা পরিশোধ করতে পারতাম। সংসারে আসতে স্বচ্ছলতা। কিন্ত ধরন্ত এ গাছগুলো রবিবার ভোরে কে বা কারা কেটে সাবাড় করে দিয়েছে। এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাবো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের হতদরিদ্র কৃষক বাপ্পি মোল্ল্যা। সমানে ক্ষেতে বসে কাঁদছেন তার স্ত্রী গোলাপী বেগমও। আর নিরীহ মানুষটির এমন ক্ষতি হওয়ায় এলাকার মানুষও ক্ষেতটিতে গিয়ে তাদের সান্তনা দিচ্ছেন। ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক বাপ্পি মোল্যা উপজেলার সাইটবাড়িয়া গ্রামের আনছার মোল্যার ছেলে।

রবিবার সকালে বাপ্পির মোল্যার ক্ষেতে সরেজমিনে গেলে দেখা যায়, ক্ষেতের সব বেগুন গাছ ধারালে কিছুর মাধ্যমে মাটির সমান করে কেটে দেয়া হয়েছে। আর ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক দম্পতি ওই ক্ষেতের মাঝখানে বসে আহাজারি আর চোখের পানি ফেলছেন। এলাকাবাসী নিরীহ এই পরিবারকে সমবেদনা জানাতে ওই ক্ষেতেই ভীড় করছেন। তারা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক কৃষাণীর কষ্ট আর আহাজারিতে ফিরছেন চোখের কণায় পানি নিয়ে।

কৃষক বাপ্পি মোল্ল্যা জানান,একমাত্র এই ১০ শতকই আমার চাষযোগ্য জমি। আমি পরের ক্ষেতে কামলার কাজ করে সংসার চালাই। পাশাপাশি এ বছরের প্রথম দিকে এনজিও থেকে ঋন তুলে জমিটিতে শসার চাষ করেছিলাম। কিন্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগে শসা গাছ মারা গিয়েছিল। এরপর নতুন উদ্যোমে নতুন আশা নিয়ে ধারদেনার মাধ্যমে বেগুনের চাষ করেছিলাম। এবার রাতের আঁধারে কে বা কারা ক্ষেতের সমস্ত বেগুন গাছ কেটে আমার পাজর ভেঙে দিয়েছে। আমার জানা মতে, আমি কারও ক্ষতি করিনি। সারাদিন মাঠে কাজ করি রাতে বাড়ি এসে ঘুমায়। আবার সকালে চলে যায় ক্ষেতের কাজে। এরপরও আমার শত্রæ কারা ? আর যারা এটা করেছে তাদেরই বা কি লাভ হয়েছে ?। এখন কি করে সারাবছর সংসার চালাবো আর কি করেই বা এনজিওর টাকাসহ ধারদেনা পরিশোধ করবো এ কথাগুলো বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন।

ওই গ্রামের বাসিন্দা ইউপি সদস্য শহিদুল ইসলাম জানান, সকালে খবর পেয়ে বাপ্পির বেগুনক্ষেত দেখতে গিয়েছিলাম। ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতের মধ্যে বসে বাপ্পি মোল্যাসহ তার স্ত্রী যেভাবে কান্নাকাটি করছে এতে মাঠের বাতাস ভারি হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জসহ কৃষি কর্মকর্তারা ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন। আর গ্রামের সব বয়সী মানুষ তো আছেই।
উপজেলা উপসহকারী কৃষিকর্মকর্তা আনিসুর রহমান জানান, খবর পেয়ে আমি বাপ্পি মোল্যার ক্ষেতে গিয়েছিলাম। ধরন্ত গাছগুলো যেভাবে কেটে দেয়া হয়েছে তা কোন ভাবেই পুরন হওয়ার নয়। তারপরও ওই কৃষকের পাশে থাকবে কৃষি অফিস। তিনি বলেন, একজন মানুষের বিভিন্ন দিকে কোন ভূলত্রæটি থাকতেই পারে। কিন্ত ভরা ক্ষেত কেটে দেয়া এ কেমন শত্রæতা ?
কালীগঞ্জ থানার ওসি মাহাফুজুর রহমান মিয়া জানান, বাপ্পির মোল্যার বেগুন ক্ষেত কেটে দেয়ার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ওই এলাকার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জকে পাঠিয়েছিলাম। তিনি বলেন, একজন কৃষকের ভরাক্ষেত কেটে দিলে তার যে ক্ষতি হয় তা তিনি কোন ভাবেই পুষিয়ে উঠতে পারেন না। শুনেছি বাপ্পি একজন হতদরিদ্র নিরীহ প্রকৃতির মানুষ। এমন ক্ষতি অমানবিক। লিখিত অভিযোগ না পেলেও মুঠোফোনে জানার পর থেকেই পুলিশ বিষয়টি আমলে নিয়ে তদন্ত করছে। দোষী যেই হোক রেহাই পাবে না।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button