ঝিনাইদহে ‘করোনাকালীন স্বাস্থ্যসেবা: চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক ওয়েবিনার অনুষ্ঠিত
ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহ ১০ সেপ্টেম্বর ২০২০ : স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়নে ঝিনাইদহ জেলা স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ এবং সেবাগ্রহীতাদের মধ্যে এক ওয়েবিনার আজ জুম মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় সেবাগ্রহীতাদের উত্থাপিত চিহ্নিত সমস্যা, প্রস্তাবনা ও সুপারিশসমূহ সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণের প্রতিশ্রæতি দেন প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ। এ সময় তিনি বলেন, প্রস্তাবনাসমূহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সভায় আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে। সদর হাসপাতাল ও ডেডিকেটেড কোভিড হাসপাতালের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও উপকরণ নিশ্চিতকরণের জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে আবেদন করতে হবে। অংশীজনদের মতামতকে ইতিবাচক ভাবে বিবেচনায় নিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষকে পরামর্শ ও নির্দেশনা দান করেন। জনগণকে যথাযথভাবে মাস্ক পরিধান, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার ও ছোট সাবান ব্যাগে রাখার আহŸান জানান।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগম বলেন, বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা ও জনবল সংকটের মধ্যেও সেবা প্রদানে সর্বাধিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। সবাইকে সন্তুষ্ট করা খুবই কঠিন। করোনা টেস্টের সীমাবদ্ধতার কারণে স্যাম্পল কালেকশন চাহিদার তুলনায় কম হয়। রোগীদের সহনশীলতা ও সচেতনতা বাড়ানো খুব দরকার। আজকের সুযোগের মাধ্যমে দুর্বলতা গুলো জানতে পেরে উপকার হলো, যা পরিকল্পনা ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়ক হবে।
সভায় করোনা ও সাধারণ রোগীসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন পর্যায়ের অংশীজনের আলোচনায় ঝিনাইদহের প্রেক্ষাপটে প্রাপ্ত বিভিন্ন ইতিবাচক উদ্যোগের পাশাপাশি বিদ্যমান ঘাটতিসমূহ আলোচনায় গুরুত্ব পায় এবং সুপারিশ প্রস্তাব করা হয়। বিভিন্ন ইতিবাচক পদক্ষেপ যেমন ৫০টি আইসোলেশন শয্যা বিশিষ্ট “ডেডিকেটেড হাসপাতাল ফর কোভিড-১৯” স্থাপন করা হয়েছে, করোনা পজিটিভ রোগীদের অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেবা দেওয়া হয়েছে, সদর হাসপাতাল ও কোভিড হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপ্লাই শুরু হয়েছে, জনবল সংকট মোকাবিলায় চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নিয়োগের উদ্যোগ গ্রহণ এবং সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ওয়েবসাইটে ও করোনা মূখপাত্র কর্তৃক ফেসবুকে তথ্য প্রকাশ উল্লেখযোগ্য।
সেবাগ্রহীতাগণ কর্র্তৃক উত্থাপিত ঘাটতিসমূহ হলো ৪০ জনের বেশি স্যাম্পল কালেকশনে সীমাবদ্ধতা থাকা, ক্ষমতাসীনদের অধিক গুরুত্ব দেওয়া, করোনা রোগীর সেবা প্রদানে ক্ষমতাসীন রোগীর ঘরে অন্যকে না রাখার উচ্চ পর্যায়ের সুপারিশ, একজনের স্যাম্পল কালেকশনের পর অন্য জনের স্যাম্পল কালেকশনের সময় গোøবস চেঞ্জ না করা বা স্যানিটাইজার ব্যবহার না করা, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে সেবামূল্য সম্পর্কিত চার্ট না থাকা, বেসরকারি ক্লিনিকে সাধারণ রোগীর টেস্ট রিপোর্টে নাম ও বয়স ভূল আসা, ডাক্তারের চেম্বারে রেফার করা এবং এখনও অনেকগুলো শুন্যপদে ডাক্তার নিয়োগ না দেওয়া উল্লেখযোগ্য।
ঘাটতিসমূহ চিহ্নিতকরণের সাথে সাথে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশ প্রস্তাব করেন সেবাগ্রহিতাগণ। সুপারিশসমূহ হলো করোনা স্যাম্পল প্রদান স্থান সম্পর্কিত নির্দেশনা বোর্ড স্থাপন, স্যাম্পল কালেকশন রুম পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা ও রোগীর বসার ব্যবস্থা করা, সরকারি হাসপাতালে আধুনিক যন্ত্রপাতি ও উপকরণের ব্যবস্থা করা, করোনা ভ্যাকসিন প্রদানে পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ ও জনবল নিয়োগ, ফোন মারফতা সেবা প্রদান চালুকরণ, বেসরকারী ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলোতে যথাযথ সেবা ও মনিটরিং নিশ্চিতকরণ, পারস্পরিক ধৈর্য বাড়ানো, সম্মিলিতভাবে প্রচেষ্ঠা অব্যাহত রাখা, পাকলিক ট্রান্সপোর্টে মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিতকরণ, ডাক্তার ও নার্সদের ব্যবহার উন্নয়ন এবং সর্বপরি স্বাস্থ্য খাতে বাজেট বৃদ্ধিসহ ইত্যাদি ক্ষেত্রে পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি উত্থাপন করেন সেবাগ্রহীতাগণ।
সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সদর হাসপাতাল ঝিনাইদহের উদ্যোগে সচেতন নাগরিক কমিটি (সনাক) এর সহযোগিতায় আয়োজিত অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব ও সঞ্চালনা করেন সনাক সভাপতি মো. সায়েদুল আলম। বিশেষ অতিথি ছিলেন সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক ডা. মোঃ হারুন-অর-রশিদ ও ঝিনাইদহ সদরের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ বদরুদ্দোজা শুভ। এছাড়াও মূল্যবান বক্তব্য প্রদান করেন ২ জন নারী ও ৮ জন পুরুষ নাগরিকসহ ডা. জাকির হোসেন, টিআইবি’র সিভিক এনগেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক ফারহানা ফেরদৌস ও সনাক স্বাস্থ্য উপকমিটির আহŸায়ক এম. সাইফুল মাবুদ প্রমূখ ।