কালীগঞ্জ

কালীগঞ্জে আবারো ফসলের সাথে শত্রুতা!

ঝিনাইদহের চোখ-

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে এক কৃষকের ৫০ শতক জমির লাউ ক্ষেতের সবুজ গাছগুলো কেটে দিয়েছে দুবৃত্তরা। সোমবার রাতে কে বা কারা এই গাছুগলো কেটে দেওয়া হয়েছে। কৃষক বলছেন এই জমিতে তার ২৫০ টি লাউ গাছ ছিল। যেগুলোতে লাউ আসতে শুরু করেছিল।
ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আতিয়ার রহমান এর দাবি এতে তার কমপক্ষে আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তার এই ক্ষেত দেখে সকলেই হতবাক হয়েছেন। অনেকেই তার চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার চাপালী গ্রামের মাঠে এই লাউ ক্ষেত কেটে দেওয়া হয়েছে।

কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, তিনি ৬ বিঘা জমি নিজ নিয়ে নানা ফসলের চাষ করেন। যার মধ্যে বেশির ভাগই থাকে সবজি। এবছর এক বিঘা জমিতে বেগুন, দুই বিঘা জমিতে মুলা, কিছু অংশে ওল, হলুদ আর ৫০ শতকে লাউ এর চাষ করেছিলেন। গত আগষ্ট মাসের শুরুর দিকে এই লাউ ক্ষেতে বীজ বপন করা হয়। ডায়না নামের হাইব্রিড জাতের লাউ হওয়ায় অল্পদিনের মধ্যে গাছগুলো বড় হয়ে যায়। প্রায় ৫৫ হাজার টাকা ব্যয় করে সেখানে টাল দেন তিনি। গাছগুলো টালে যাবার পর ফুল আসতে শুরু করে। কিছু কিছু গাছে লাউও ধরেছে। এ পর্যন্ত তার এই ক্ষেতে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৯০ হাজার টাকা। যার বেশির ভাগ তিনি ধার-দেনা করে চাষ করেছেন।
কৃষক আতিয়ার রহমান আরো জানান, গত দেড় মাস তিনি এই ক্ষেতে পড়ে থেকেছেন। সবকিছু নিজেই তদারকি করতেন। প্রতিটি গাছেই তার হাতের ছোয়া রয়েছে। তিনি জানান, সোমবার রাত ১২ টা পর্যন্ত তিনি এই ক্ষেতে ছিলেন। এরপর বাড়িতে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। মঙ্গলবার বেলা ১১ টার দিকে তিনি ক্ষেতের মধ্যে গিয়ে দেখেন সবগুলো গাছের পাতা টালের উপর নুইয়ে পড়েছে। কারন খুজতে গিয়ে গাছের গোড়ায় হাত দিয়ে দেখেন গাছগুলোর গোড়া থেকে কাটা রয়েছে। একে একে সবগুলো গাছ কাটা দেখতে পান। এ সময় তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। পরে সংবাদকর্মীদের নিকট দুঃখ করে বলেন, আশা করেছিলেন এই ক্ষেত থেকে আড়াই লাখ টাকার লাউ বিক্রি করবেন। কিন্তু তার সব শেষ হয়ে গেছে। এখন ভাবনা কিভাবে দেনা পরিশোধ করবেন।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক আতিয়ার রহমান জানান, এভাবে ফসলের ক্ষতি করবে তার তেমন কোনো শত্রæ নেই। তারপরও যারা এটা করেছে তারা আর্থিক ভাবে শেষ করে দিতে চায়। তিনি বলেন, ফসলের সঙ্গে এভাবে কেউ শত্রæতা করতে পারে তা না দেখলে বিশ^াস হবে না। তিনি এই বিষয়ে প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন।

গ্রামের বাসিন্দা আব্দুর রহিম জানান, এই ক্ষতি কোনো ভাবেই মানা যায় না। গাছগুলো কৃষকের কাছে তার সন্তানের মতো। সেভাবেই তিনি বড় করেছেন। যারা এই ফসলের ক্ষতি করেছে প্রশাসন তাদেি চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসবেন এটাই সকলের প্রত্যাশা।

এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সিকদার মোঃ মোহাইমেন আক্তার জানান, তিনি ক্ষতিগ্রস্থ ক্ষেতটি পরিদর্শন করেছেন। কৃষক যেন ঘুরে দাড়াতে পারে সে বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন। এছাড়া কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকেও তাকে সার্বিক সহযোগিতার আশ^াস দেওয়া হয়েছে বলে জানান। আর কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুবর্ণা রাণী সাহা জানান, ওই কৃষক লিখিত অভিযোগ করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button