থাই পেয়ারা চাষে সফল কালীগঞ্জের কৃষক ইদ্রিস আলী
সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
৪ ভাইয়ের পৈতৃক সম্পত্তি মাত্র বিঘে খানেক। ফলে সংসারের অভাব অভিযোগ ছিল নিত্যসঙ্গী। তাই এক সময় গ্রাম গ্রাম ঘুরে বিভিন্ন ধরনের ফল কিনে বাজারে বিক্রি করতেন। পরবর্তীতে ফলের ব্যাপারীদের মাল কিনে দিয়ে পয়সা রোজগার করে সংসার চালাতেন। কিছু পয়সা জোগাড় করে তিনি নিজেও একদিন কৃষকদের ফলের বাগান কিনতে শুরু করেন। বিগত ৩৫ বছর ধরে ফল নিয়ে কারবার করে জীবনের গতি পাল্টে ফেলেছেন। এমন সফল ব্যক্তির নাম ইদ্রিস আলী। তিনি ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার বলরামপুর গ্রামের সামছদ্দীন লস্করের ছেলে।
সরেজমিনে সোমবার সকালে তার পেয়ারা বাগানে গেলে দেখা যায় সারি সারি লাগানো রয়েছে পেয়ারা গাছ। গাছগুলো মাটি থেকে আড়াই থেকে ৩ ফুট উচু। কিন্ত ডালপালাগুলো বড় বড় পেয়ারার ভারে মাটিতে নুইয়ে পড়ছে। বাঁশের চটা দিয়ে ঠেকানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। পেয়ারা বাগানে মোট ৫ জন কৃষি শ্রমিক কাজে লেগে আছেন। কেউ সারা জমি ঘুরে বিক্রয়যোগ্য পেয়ারাগুলো তুলছেন। কেউ ক্ষেতের মাঝের আগাছাগুলো তুলছেন। আবার একজন পেয়ারার নুইয়েপড়া ডালগুলো তুলে বাঁশের চটার সাথে বেধে উচু করে দিচ্ছেন। আর ক্ষেতের মাঝখানে দাঁড়িয়ে কৃষি শ্রমিকদের দেখিয়ে সমস্ত কাজ পরিচালনা করছেন ইদ্রিস আলী।
ক্ষেতে দাঁড়িয়েই কথা হয় ফলচাষী ইদ্রিস আলীর সাথে। তিনি জানান, তারা ৪ ভাই। তাদের মাঠে মাত্র ১ বিঘা জমি আছে। এতোটুকু চাষযোগ্য জমির ফসলে পরিবারের খরচ চালানো কষ্টকর ব্যাপার ছিল। সংসারের অভাব অভিযোগের মধ্যদিয়েই ভাইয়েরা সকলেই পৃথক হয়ে যান। এরপর সংসারের ঘানি টানতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে গ্রাম গ্রাম ঘুরে দেশী বিভিন্ন ফল কিনে স্থানীয় বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করতে শুরু করেন। এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর শহরের ফল কেনা ব্যাপারীদের চুক্তিতে ফল কিনে দিতে থাকেন। এভাবে কিছু পয়সার মালিক হয়ে শুরু করেন নিজে ফলচাষীদের কাছ থেকে ফলের বাগান কেনা। এভাবে প্রায় ৮ বছর ব্যবসা করেন। এখন নিজে গ্রামের কিছু লোকজনের কাছ থেকে প্রতি বিঘা বাৎসরিক ১০ হাজার টাকা চুক্তিতে মোট ১২ বিঘা ফলের চাষ করেছেন। এরমধ্যে ৮ বিঘা রয়েছে পেয়ারা। তিনি আরো জানান, নিজে ফল চাষের পাশাপাশি আম লিচুর সময়ে লাভজনক মনে করলে চাষীদের নিকট থেকে বাগানের গাছে থাকা অবস্থায় ফল কিনে ব্যবসা করেন।
পেয়ারা চাষ সম্পর্কে কৃষক ইদ্রিস আলী জানান,মাঠে তার নিজের মাত্র ৮ কাঠা চাষযোগ্য জমি আছে। প্রতিবিঘা বাৎসরিক ১০ হাজার টাকার চুক্তিতে তার গ্রামের আবু জাফর, মনোয়ারা বেগম, মনা মিয়াসহ বেশ কয়েকজন কৃষকের কাছ থেকে ৫ বছরের মেয়াদে ইজারা নিয়ে ৮ বিঘা জমিতে গোল্ডেন-৮ , থাই-৭, থাই ফারাং-২ জাতের পেয়ারার চাষ করেছেন। তিনি বলেন, এ জাতের ১ হাজার পেয়ারা গাছের ডাল ভারত থেকে গত ২ বছর আগে এনে এখানে অঙ্গজ বংশ বিস্তারের মাধ্যমে চারা উৎপাদন করে জমিতে লাগানোর পর ৬ মাসের মধ্যেই ফল আসতে শুরু করে। বর্তমানে ক্ষেত থেকেই প্রতিকেজি ৩৫ টাকা দরে পেয়ারা বিক্রি করছেন।
তিনি বলেন, মোট ৮ বিঘা জমিতে পেয়ারা লাগানো থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লক্ষ টাকা খরচ হয়েছে। পেয়ারাটা পোকামাকড় থেকে বাঁচাতে এ পর্যন্ত ৬০ হাজার পেয়ারার পলি ব্যাগ জড়ানো হয়েছে। আগামী সপ্তাহে আরও কমপক্ষে ৪০ হাজার পেয়ারার পলি ব্যাগ ভরার কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, এ জাতের পেয়ারাগুলো অত্যন্ত সুস্বাদু আকারে বেশ বড়।
গাছের কিছু পেয়ারা প্রতিকেজি ৩৫ টাকা দরে পাইকারদের কাছে বিক্রি করেছেন। এখনও কিছু ছোট রয়েছে। আবার কিছু কিছু ডালে এখনও ফুল আসছে। তিনি বলেন,দাম ভালো থাকলে পেয়ারা থেকে যাবতীয় খরচ বাদে তার কমপক্ষে ১০ লক্ষ টাকা লাভ আসবে।
কৃষক ইদ্রিস আরো জানান, ক্ষেতে পেয়ারার চারা লাগানোর পর থেকে প্রতিদিন কমপক্ষে ১০ জন করে কৃষি শ্রমিক নিয়মিত কাজ করে যাচ্ছে। এ বাগান থেকে কমপক্ষে ৫ বছর ফল পাবেন বলে তার আশা। এ চাষে প্রথম বছরে বেশি খরচ হয়। পরে খরচ কমতে থাকে। তিনি জানান, এখন দেশে অনেক জাতের পেয়ারার চাষ হচ্ছে তবে তার এ জাতের পেয়ারাগুলো বেশ মিষ্টি হওয়ায় বাজারে দাম ও চাহিদা উভয়ই বেশি। প্রতি পিচ ৪২ টাকা দরে এ পর্যন্ত ৪০ হাজার কলমের চারার অর্ডার পেয়েছেন। আরও অর্ডার পাবেন বলে আশা করছেন। ফলে বাগানে কলমের চারা থেকেও বেশ টাকা আসবে। মোট মিলিয়ে এই পেয়ারার বাগান থেকেই তার জীবনে সাফল্যের গতি আরও ত্বরান্বিত হবে বলে তিনি মনে করছেন।
কালীগঞ্জ উপজেলা উপসহকারী কর্মকর্তা এমদাদ হোসেন জানান, এ উপজেলায় ইদ্রিস আলী একজন প্রতিষ্ঠিত ফলচাষী। তার ফলের বাগানে তিনি গিয়েছেন। সমস্ত কাজই যতেœ ভরা অত্যন্ত আধুনিক। তিনি বলেন কুষক ইদ্রিস আলীকে কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে যাবতীয় সহযোগীতা করা হচ্ছে।