কালের বিবর্তনে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য
বেলাল হুসাইন বিজয়, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-
গ্রামবাংলা সমৃদ্ধির প্রতীক ধানের গোলা এখন বিলুপ্ত প্রায়।
কালের বিবর্তনে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার প্রসারের ফরে বিলুপ্তির পথে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্য। হারিয়ে যাচ্ছে কৃষিক্ষেত ও কৃষকের ঐতিহ্যবাহী গোলা শিল্প। মাঠের পর মাঠ ধান ক্ষেত থাকলেও অধিক কৃষকের বাড়িতে নেই ধান মজুদ করে রাখার বাঁশ বেত ও কাতা দিয়ে তৈরি গোলাঘর। এ সব স্মৃতিচারণ করতে যেয়ে অনেক বয়োবৃদ্ধ হঠাৎ থমকে যান, ফিরে যান তার শৈশব আর কৈশরে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের শাহাজাহান আলী জানান, গোলায় ধান রাখা কৃষকের জন্য খুবই ভালো। কিন্তু এগুলো আমাদের সমাজ থেকে হারিয়ে যাচ্ছে। গোলাগুলো আমাদের পরিবারের ঐতিহ্য বহণ করে। আমার দাদার আমল থেকে দেখে এসেছি এগুলো। ধান রাখার পাশাপাশি ঐতিহ্য রক্ষায় তাই এখনো রেখে দিয়েছি।
উপজেলার বারবাজারের খালেক মন্ডল (৯৫) তিনি বলেন, শৈশব আর কৈশরের কথা মনে উঠলে বড্ড খারাপ লাগে। কি ছিল আর এখন কি হয়েছে। বছরে দুই বার আমরা মাঠে ধানের আবাদ করেছি। বাকি সময়ে মাঠের পর মাঠ খালি পড়ে থাকত। সে সময়ে ছিল না কোন প্রতিবন্ধকতা, ছিল না হানাহানি সকলের ভিতরে ছিল অন্য রকমের এক আনন্দ। পুকুর,খাল বিল, নদ নদীতে ছিল মাছের সমারোহ, এখন সব কিছুই যেন স্মৃতি।
উপজেলার রঘুনাথপুর গ্রামের কৃষক ওহেদুল বিশ^াস সাথে কথপোকথনে বোঝা গেল এখন গোলা ঘরের কদর নেই। তিনি জানান যে ধান পাই, তা তো বিক্রি করে আর খেতেই ফুরিয়ে যায়। গোলায় রাখবো কি ? তবুও অযতœ- অবহেলায় বাড়িতে রেখে দিয়েছি। একদিন এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।
প্রবীণেরা বলছেন, প্রবাদের সেই গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এখনো আছে। দেশের প্রতিটি কৃষক পরিবারে রয়েছে কমপক্ষে একটা, দুটি গরু, পুকুরও আছে অনেকের। শুধু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা।
বৃদ্ধ কৃষক আলী হোসেন জানালেন আগে আমরা গোলাতেই ধান রাখতাম। প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই গোলা থাকতো। তবে এখন আর নেই। নাতিদের কাছে বললে তারা বিশ^াসও করতে চায় না।