এক মাসেও সন্ধ্যান মেলেনি কালীগঞ্জের মোক্তার মৃধার
সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
সারাদিন গ্রাম গ্রাম ঘুরে ডাব কিনে শহরে পাঠান মোক্তার মৃধা (৪৫)। বাবা ফেরার আগ পর্যন্ত মেইন বাসস্ট্যান্ডে ভ্যানে সাজিয়ে বিক্রি করে বড় দুই ছেলে। গত ১৫ ই জানুয়ারী ডাব কেনার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেননি। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। পরিবারের পক্ষ থেকে খোঁজাখুঁজি করেও না পেয়ে বাবার ছবি বুকে নিয়ে পথে পথে ঘুরছে তিন ছেলেসহ স্ত্রী রাজিয়া বেগম। নিখোঁজের পরিবারের দাবি,মোক্তার মৃধা একজন সহজ সরল খেটে খাওয়া মানুষ। কাজেই তার কোন শত্রæ থাকার কথা নেই। এ ব্যাপারে পরিবারের পক্ষ থেকে গত ২৬ জানুয়ারী কালীগঞ্জ থানায় একটি জিডিও করা হয়েছে। কিন্ত একমাস পার হতে চললেও পুলিশও অদ্যোবধি তার কোন হদিস মেলাতে পারেনি। এদিকে নিখোঁজ বাবাকে ফিরে পেতে বাবার ছবি বুকে চেপে ৩ ছেলে ঘুরছে দুর-দুরান্তে। নিখোঁজ মোক্তার মৃধা আসল বাড়ী পাবনার বেড়া থানার খানপুরার মধ্যপাড়াতে হলেও অনেক ধরেই কালীগঞ্জ শহরে বসবাস করেন। বর্তমানে তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ শহরের ঢাকালে পাড়ার আরজুল ইসলামের বাড়িতে ভাড়ায় বসবাস করেন।
নিখোঁজ ডাব বিক্রেতা মোক্তার মৃধার তিনটি ছেলে। বড় ছেলে রাহাত (১৮) বাবার সাথে গ্রাম গ্রাম ঘুরে গাছে উঠে ডাব পেড়ে ভ্যানে করে শহরে বয়ে নিয়ে আসে। বাবার সাথে বিক্রির কাজে সহযোগিতা করে। মেজো ছেলে রাকিব (১৬) শহরের সরকারী নলডাঙ্গা ভূষন হাইস্কুলের চলতি বছরের এস.এসসি পরীক্ষার্থী। সেও লেখাপড়ার পাশাপাশি বাবার ডাব বিক্রিতে সহযোগীতা করে। আর ছোট ছেলে রিফাত (১১) একই স্কুলের ৬ষ্ট শ্রেনীর ছাত্র। সংসারের একমাত্র অভিভাবক বাবা নিখোঁজ হওয়াতে বাবার ছবি বুকে নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়ে খুঁজছেন আর ঠুকরে ঠুকরে কাঁদছেন। তারা জানেনা তার বাবা কোথায় আছে কেমন আছে। কোন বিপদে বা আদৌ বেঁচে আছেন কি না ? এমন অবস্থার মধ্যদিয়ে পরিবারটির সদস্যদের মধ্যে সময় কাটছে। এদিকে তিন ছেলেকে সাথে নিয়ে গত বুধবার কালীগঞ্জ প্রেসক্লাবে এসে নিখোঁজের স্ত্রী রাজিয়া বেগম কাঁদতে কাঁদতে সাংবাদিকদের জানান, তার স্বামী একজন পরিশ্রমী ভাল মানুষ। ফলে তার তো কোন শত্রæ থাকতে পারেনা। গেলো ১৫ জানুয়ারী সকাল সাড়ে ৭ টার দিকে বাড়ী থেকে বের হয়ে এখনো ফিরেনি। কাছে থাকা মোবাইল সেটটিও বন্ধ রয়েছে।
বড় ছেলে রাহাত জানায়, অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারের সন্তান তারা। সে ৫ শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করেছে। অভাবের সংসারে বাবাকে সাহায্য করতেই লেখাপড়া বন্ধ করেছে সে। বাবা ছাড়া এখন সংসারে নেমে এসেছে অন্ধ্যকার। সেই সাথে তার ছোট দুটির ভাইয়ের লেখাপড়াও যেন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
স্ত্রী রাজিয়া বেগম আরও জানান,তার তিন ছেলেই অল্প বয়সী। এখন সংসারের খরচ, বাড়ী ভাড়া ও ছেলেদের লেখাপড়ার খরচ কিভাবে আসবে কিভাবে স্বামীর সন্ধ্যান মিলবে ভেবে কোন কুল কিনারা পাচ্ছেন না। তার স্বামীর আসল বাড়ী পাবনা বেড়া থানার খানপুরার মধ্যপাড়াতে। সংসারের অভাব ঘোচাতে জীবিকার টানেই তারা বহু বছর আগে কালীগঞ্জে এসেছেন। স্বামী নিখোঁজের পর দেশের বাড়িতেও অনেকবার খোঁজ নিয়েছেন। কিন্তু সন্ধান মিলেনি। তার বিশ^াস সাংবাদিকরা পত্রিকার পাতায় ছবি তুলে ধরলে হয়তোবা বেঁচে থাকলে সন্ধ্যান মিলাতে সহযোগীতা হবে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার্স ইনচার্জ মাহফুজুর রহমান মিয়া জানান, মোক্তার মৃধার নিখোঁজের বিষয়ে পরবারের পক্ষ থেকে থানাতে একটি জিডি করা হয়েছে। পুলিশের পক্ষ থেকেও তাকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।