ঝিনাইদহ সদর

ঝিনাইদহে ৩০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি ৫০ টাকায় খাসি!

ঝিনাইদহের চোখঃ

শুনতে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। এক প্লেট সাদা ভাত আর ডাল-সবজির দাম যেখানে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা, সেখানে মাত্র ৩০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি ও ৫০ টাকায় খাসির বিরিয়ানি পাওয়া যাচ্ছে। আর ক্রেতারা তা কিনেছেন সারিবদ্ধ হয়ে, লাইনে দাঁড়িয়ে। বিষয়টি নিরেট সত্য।

ঝিনাইদহ শহরের প্রাণকেন্দ্র জেলা পোস্ট অফিস মোড়ের ঐতিহ্যবাহী সুইট হোটেলের বিপরীতে একটি রিকশাভ্যানের ওপর থরে থরে সাজানো রয়েছে সাদা-সাদা প্যাকেট। সব বিরিয়ানিতে ভর্তি। ভ্যানে সাজানো খাবারের প্যাকেটের ওপরের দিকে লাল কালিতে লেখা ‘৩০ টাকায় চিকেন বিরিয়ানি, ৫০ টাকায় খাসি’। ক্রেতারা থমকে দাঁড়াচ্ছেন, কিছুক্ষণ পর সংবিত ফিরে পাচ্ছেন। নিজের চোখে পরীক্ষা করে নিচ্ছেন লেখার সঙ্গে কাজের সামঞ্জস্য।

ঝিনাইদহ শহরের পার্কপাড়ার দুই যুবক কামাল ও তার সহযোগী এ বিরিয়ানি বিক্রি করছেন। শহরের বেপারিপাড়ার আনিস আহমেদ আর তার বন্ধু সোহান পড়ালেখা করেন রাজধানীর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে। প্রথমে অবাক হলেও দরদাম করে কিনলেন দুটি বিরিয়ানির প্যাকেট। বললেন, চমৎকার। চাকলাপাড়ার গৃহবধূ মোমিনা খান আর স্বপ্না বিশ্বাস এসে চাইলেন দুটি প্যাকেট। তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, কিছুক্ষণ আগে তাদের এক প্রতিবেশী দু’প্যাকেট বিরিয়িানি নিয়ে গেছেন বাড়িতে। কৌতূহলবশত বেশ কয়েকজন জিভ দিয়ে তা চেখে দেখেছেন, তাজ্জব বনে গেছেন। আর তাই ওই দুই গৃহবধূ শহরে ছুটে এসেছেন। ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই নিঃশেষ হয়ে গেল ভ্যানের ওপরের সব প্যাকেট। খুশি ও তৃপ্তিতে উজ্জ্বল হলো বিক্রেতাদের মুখ।

তারা জানালেন, শুধু রোজাকে সামনে রেখে তারা এ উদ্যোগ নিয়েছেন। তুলনামূলকভাবে কম দামে সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে এ বিরিয়ানি তৈরি করেছেন তারা। বেশি দামে নামিদামি হোটেল থেকে বিরিয়ানি কেনার সামর্থ্য যাদের নেই, তাদের জন্য এ আয়োজন। একই সঙ্গে নিজেদের আয়-রোজগারের ব্যবস্থাও করেছেন তারা। ওই দুই যুবক জানালেন, আমরা প্রতিদিন প্রায় ৩০০ প্যাকেট বিরিয়ানি তৈরি করছি। চাহিদা বাড়লে আরও তৈরি করব। প্রতি প্যাকেট বিরিয়ানিতে আধা প্লেট রাইস আর ছোট এক টুকরো ব্রয়লারের মাংস দিয়ে দাম নেন ৩০ টাকা। আর খাসির বিরিয়ানি প্যাকেটের দাম ৫০ টাকা। প্রতি প্যাকেটে এক টুকরো শসা আর একটা করে কাঁচামরিচ দেওয়া হয় সালাদ হিসেবে।

তাদের মতে, প্রতি প্যাকেট বিরিয়ানিতে তারা তিন থেকে চার টাকা লাভ করেন। এতে দিনে প্রায় এক হাজার টাকা আয় করেন তারা। সৎভাবে বেঁচে থাকার জন্য এ অর্থ একেবারে কম নয়, জানিয়েছেন তারা। যেসব তরুণ কাজের অভাবে বেকার জীবনযাপন করছেন, এ ধরনের কাজ করে তারা অন্তত বেঁচে থাকার অবলম্বন পেতে পারেন বলে তারা মনে করেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button