শ্রমে ঘামে ফলানো সোনালী ধানে হাসছে ঝিনাইদহের কৃষক
মোমিনুর রহমান মন্টু, ঝিনাইদহের চোখ-
করোনায় যখন দেশে অস্থিরতা, তখন ঝিনাইদহ গ্রামে গ্রামে চলছে অন্য রকম উৎসব। কৃসকের শ্রম-ঘামে ফলানো সোনার ফসল (ধান) গোলায় তোলার উৎসব লেগেছে। রাত-দিন ধান কাটা, মাড়াই ও শুকাতে ব্যস্ত এখন কৃষক-কৃষিাণীরা। প্রচন্ড দাবদাহে যে কোন সময় ঝড় বৃষ্টি হতে পাওে এমন আশঙ্কায় চিন্তিত ছিল এ জেলার কৃষকরা। ইতোমধ্যে মাঠে ৮০ ভাগ জমির ধান বাড়িতে চলে এসেছে। ফলে চিন্তা কেটে গেছে, এখন হাসছে কৃষকরা।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের দেয়া তথ্যমতে, চলতি ইরি-বোরো মৌসুমে জেলার ৬ উপজেলায় ধান রোপন হয়েছে ৭৭ হাজার চারশত ৪০ হেক্টর জমিতে। আবহাওয়া অনুকূল থাকা আর পরিমিত পরিচর্যার কারণে এবার ধানের ভালো ফলন হয়েছে। তবে গত ৪ এপ্রিল বিকালে হঠাৎ ঝিনাইদহসহ আশেপাশের জেলাগুলোর উপর দিয়ে কালবৈশাখী ঝড় বয়ে যায়। ঝড়ের আগে পরে বৃষ্টি না হলেও গরম হাওয়া বইতে থাকে। গরম হওয়ায় কারনে কিছু কিছুৃ কৃষকের জমির ধান নষ্ট হয় বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্তারা।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার হলিধানি গ্রামের কৃষক লাল্টু মিয় বলেন, এবছর তিনি পাঁচ বিঘা জমিতে ধান রোপন করেন। ফলন ভালো হয়েছে। এখন পর্যন্ত ধান কাটা হয়েছে তিন বিঘা। আর কয়েকদিন সময় পেলে সব ধান ঘরে তুলতে পারবেন। একই মাঠে দুপুরে কড়া রোদ মাথায় নিয়ে মাঠে ধান মাড়াই ও শুকানোর কাজ করছিলেন হাফিস।
তিনি বলেন, ধান লাগানোর পর মাঝামাঝি সময়ে বৃষ্টি হলে ফলন ভালো হয়। এবার সেটা হয়নি। তাই খরায় ফলন কিছুটা কম হয়েছে। তবে এতে কৃষকদের কোনো আক্ষেপ নেই। তিনি বলেন, কয়েক বছরের মধ্যে এবছর আবহাওয়া অনেকটা ভালো থাকায় কৃষকেরা নির্বিঘেœ ধান তুলতে পারছে। অন্যবার বৈশাখে টানা বৃষ্টির সঙ্গে ঝড় ও শিলাবৃষ্টি থাকে। বজ্রপাতও বেশি হয়। এতে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে সমস্যা হয়। পাশাপাশি শ্রমিক সংকটে কৃষকদের মধ্যে একটা অস্থিরতা কাজ করে। কিন্তু এবার এসব নেই। সব দিক দিয়ে এ বছর ভালো। আমরা সবাই খুশি মনে ধান ঘরে তুলছি। এভাবে আর এক সপ্তাহ সময় পেলে ধান কাটা ও মাড়ায় কাজ শেষ হয়ে যাবে।
মহেশপুর উপজেলার ভৈরবা গ্রামের কৃষক শহিদুল ইসলাম জানায়, চলতি ইরি মৌসুমে মাঠে ৩০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছিলাম। প্রথম দিকে কালবৈশাখী ঝড়ে প্রতিটা জমির কিছু জাগায় জাগায় ধান সাদা বর্ণ হয়ে চিটা হয়েছে। যার কারনে এবছর ফলনে কিছুটা কম হয়েছে। তবে মোট উৎপাদনের উপর তার কোন প্রভাব পড়েনি বলে যোগ করেন এই কৃষক।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের ধানচাষী শফিকুর রহমনা বলেন, আমি দুই বিঘে জমিতে ধানা লাগাইছিলাম। আজ ধান কাটছি। এবার খরার কারনে পানি খরচ একটুু বেশি হয়েছে। তার পরও ফলন ভালো। ৩৩ শতকের বিঘেই আমার ২৫ মন হারে ফলন হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলার বালিডাঙ্গা গ্রামের কৃষক কামাল উদ্দিন বলেন, আমি এবার ৬৩ জাতের ধানের আবাদ করেছি। ধানের জমিতে চাষ দেওয়া, লাগানো, সেচ, সার, ধান কাটা, বাড়িতে নিয়ে যাওয়া সব মিলিয়ে সর্বোচ্চ ১৫-১৬ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৬৩ জাতের ধান বিঘা প্রতি ৩০-৩৫ মণ হারে ফলন হয়েছে। এখন যে বাজারদর এক মণ ধান এক হাজার টাকার ওপরে বিক্রি হচ্ছে। আর ধানের যে বিচালি বা খড় আছে তার দাম পাঁচ হাজার টাকা। মোটামুটি এবার ধান চাষ করে কৃষক লাভবান হয়েছে।
ঝিনাইদহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মোঃ মোশাররফ হোসেন জানান, যেকোন সময় বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। ধান ৮০ ভাগ পেকে গেলে আমরা কৃসকদের ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছি। তিনি জানান, গত ৪ এপ্রিল বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী ঝড়ের আগে গরম দমকা বাতাস বয়ে যায়। অতিমাত্রায় গরম বাতাসের কারণে দুধভাত হওয়া শীষগুলো পুড়ে যায়। আর এতে কৃষক যেনো ক্ষতি পুষিয়ে ফলন ভালো পায়। এজন্য শুরু থেকে আমরা প্রান্তিক পর্যায়ে গিয়ে কৃষকদের নানা প্রযুক্তিগত পরামর্শ দিয়েছি। এতে কৃষকরা ফলন ভালো পেয়েছেন।