অন্যান্য

শ্রীলঙ্কা হামলা: অধিকাংশ হামলাকারী ‘উচ্চ-শিক্ষিত, ধনী ঘরের সন্তান’

ঝিনাইদহের চোখ ডেস্কঃ

শ্রীলঙ্কার ডেপুটি প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান ভিজেবর্ধনে আজ (বুধবার) এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, রোববার গির্জা ও হোটেলে আত্মঘাতী হামলায় অংশ নেওয়া তরুণ-যুবকদের অধিকাংশই উচ্চ-শিক্ষিত এবং উচ্চ-মধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান।

“তারা অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্ট স্বাবলম্বী। পরিবারগুলোর যথেষ্ট টাকা-পয়সা রয়েছে, অর্থনৈতিকভাবে তারা স্থিতিশীল।”

হামলাকারীদের একজন ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চশিক্ষা শেষ করে দেশে ফিরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছিলো।

শ্রীলঙ্কান মন্ত্রী বলেন, “খুবই উদ্বেগের বিষয় এটি।”

যে আটজন আত্মঘাতী হামলাকারীকে এখন পর্যন্ত সনাক্ত করা হয়েছে, তাদের মধ্যে দুজন সহোদর। এই দুই ভাই কলম্বোর ধনী এক মসলা ব্যবসায়ীর দুই ছেলে বলে তদন্তকারীদের উদ্ধৃত করে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে বলা হচ্ছে।

এই দুই ভাই কলম্বোর দুটো হোটেলে হামলা চালায়। তদন্তকারী একজন কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে বার্তা সংস্থা এএফপি বলছে, এক ভাইয়ের নাম-ঠিকানা পাওয়ার পর তার বাড়িতে কম্যান্ডো পুলিশ গেলে ভেতরে এক ভাইয়ের স্ত্রী বিস্ফোরণ ঘটায়। বিস্ফোরণে ঐ নারী এবং তার দুই ছেলে মারা যায়। সাথে নিহত হয় তিনজন পুলিশ কম্যান্ডো।

একজন তদন্তকারী এএফপিকে বলেছেন, “একটি পরিবার তাদের বাড়ীতে সন্ত্রাসী সেল প্রতিষ্ঠা করেছিল।”

কলম্বোতে বিবিসির সাংবাদিক আজাম আমিন বলছেন, তদন্তকারীরা হামলাকারীদের পরিবারের সদস্যদের দিকেও নজর রাখছেন। পরিবারের সদস্যদের পরিচয়, গতিবিধি বিশ্লেষণ করছেন।

তিনি জানান, যে ৬০ জনের মত সন্দেহভাজনকে এখন পর্যন্ত আটক করা হয়েছে তাদের মধ্যে হামলাকারীদের কয়েকজন স্ত্রীও রয়েছে।
এ প্রবণতা বিশ্বের সর্বত্র
ঢাকায় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসবাদের শীর্ষ গবেষক শাফকাত মুনির বলছেন, বিশ্বজুড়েই দেখা যাচ্ছে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাই প্রধানত এ ধরনের সহিংস সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়ছে।

“এটি একটি কমন প্যাটার্ন। উচ্চ-মধ্যবিত্ত পরিবারের, পশ্চিমা দেশগুলোতে লেখাপড়া করা অনেক তরুণ যুবকদের সন্ত্রাসে জড়িয়ে পড়তে দেখা যাচ্ছে।”

২০১৬ সালে বাংলাদেশে হোলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় জড়িতদের মাত্র দুজন বাদে সবাই বিদেশে লেখাপড়া করেছিল।

বাংলাদেশের পুলিশও বিভিন্ন সময় বলেছে, ধর্মীয় উগ্রপন্থায় জড়িতদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া, ধনী ঘরের সন্তান।
শ্রীলঙ্কায় হামলা: বাংলাদেশ কতটা শঙ্কামুক্ত?

সন্ত্রাস-বিরোধী নাগরিক হোন: ব্রিটিশ পুলিশ

কেন এই প্রবণতা?
শাফকাত মুনির, যিনি বাংলাদেশ সেন্টার ফর টেররিজম রিসার্চের প্রধান, মনে করেন, অধিকাংশ সময় ‘আইডেনটিটি ক্রাইসিস’ বা আত্মপরিচয়ের সঙ্কট থেকে এই ধর্মীয় উগ্রপন্থায় দীক্ষার সূচনা হয়।

“ধনী ঘরের অনেক সন্তান জীবনের একটি পর্যায়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবন- যাপন করে। একটা পর্যায়ে এসে তাদের মধ্যে অনুশোচনা তৈরি হয়। আত্মশুদ্ধির চিন্তা ঢোকে তাদের মাথায়। এই অবস্থায় তাদেরকে ধর্মীয় উগ্রবাদে দীক্ষিত করা সহজ হয়ে পড়ে।”

মি মুনির বলছেন, “প্রধানত ইন্টারনেটের মাধ্যমে যারা জেহাদি ‘রিক্রুট’ করার কাজে লিপ্ত, তারা বিভিন্ন দেশের মুসলিম সমাজের এই ধরনের উচ্চবিত্ত পরিবারের মানসিকভাবে নাজুক অবস্থায় পড়া তরুণ-যুবকদের টার্গেট করে।”

বিশ্বের বিভিন্ন সঙ্কট সম্পর্কে বিকল্প ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের অভাবে অনেক মুসলিম তরুণ যুবক ধর্মীয় উগ্রবাদীদের দেওয়া ন্যারেটিভে আকর্ষিত হয়ে পড়েছে।

“এই সঙ্কট বুঝে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে এখন সামাজিক-মনস্তাত্ত্বিক গবেষণা অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button