ঝিনাইদহের চোখ-
হতদরিদ্র আফজাল-আরজিনা দম্পতি। ১১ বছরের সংসারে কোন সন্তান না হওয়ায় বিভিন্ন জাতের ভেড়া পালতে শুরু করে গত ৫ বছর ধরে। স্বামী-স্ত্রী মিলে সারাক্ষণ সেবা-যতœ করতেন ভেড়াগুলোকে। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানোর পর তাঁদের ভেড়ার মধ্যে ১৩টি মারা গেছে। বাকি বেশ কয়েকটি অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ কালীগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রাম কমলাপুর। এ গ্রামের হতদরিদ্র আফজাল হোসেন ও আরজিনা বেগম নিঃসন্তান দম্পতি। আয়ের কোন উৎস না পেয়ে গত প্রায় ৫ বছর আগে ১৪ হাজার টাকা দিয়ে ১টি মাত্র মাদী ভেড়া কেনেন। সেখান থেকে গতকাল পর্যন্তও তার ৩০টি ভেড়া ছিল। কিন্তু আজ আছে মাত্র ১৭টি। ভেড়া পালা ছিল তাদের আয়ের প্রধান উৎস। আশা ছিল, আর ছয় মাস পর এগুলো বিক্রি করে ৫ লক্ষাধিক টাকা আয় করবেন।
অসহায় আফজাল হোসেন জানান, ভেড়াগুলোর স্বাভাবিক পায়খানা হচ্ছে না। এ অবস্থায় মঙ্গলবার সকালে তিনি কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে যান। সেখানকার চিকিৎসকের পরামর্শে কৃমিনাশক ওষুধ রেনেটা ফার্মাসিউটিক্যালের “এভিনেক্স” দেন। পরেরদিন বুধবার সকালে তিনি ওষুধের অর্ধেকটা পানিতে মিশিয়ে ১৮টি ভেড়াকে খাইয়ে দেন। এরপর ভেড়াগুলোর মুখদিয়ে গ্যাজা বের হয়ে একে একে ১৩টি ভেড়া চোখের সামনে মারা যায়। আমার সব শেষ হয়ে গেছে।
ভিকটিম আরজিনা বেগম জানান, আমাদের কোন সন্তান হয়নি। ভেড়াগুলোই ছিল আমাদের সন্তান। ওরা আমাদের কথা যেন বুঝতে পারতো। এনজিও থেকে লোন নিয়ে করেছি ছোট্ট একটা ভেড়ার শেড। এখন তো সব শেষ। কিভাবে আবার শুর হবে আর কিভাবেইবা লোন পরিশোধ করবো তা বুজতে পারছি না।
গ্রামবাসীরা জানান, ওদের দিকে সরকরের নজর দেওয়া খুবই জরুরী। গ্রামের হতদরিদ্রদের মধ্যে এ পরিবারটি। নেই কোন অবলম্বন। ভেড়াগুলোই ছিল সবকিছু।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো. আতিকুজ্জামান জানান, ভেড়ার মালিক মঙ্গলবার তাঁদের অফিসে এসেছিলেন। সবকিছু শুনে কৃমির ওষুধ দেওয়া হয়। কেন মারা গেল, তা নিশ্চিত হতে তাঁরা নমুনা সংগ্রহ করে ঢাকায় পাঠিয়েছেন। এই নমুনা পরীক্ষার পর বোঝা যাবে মৃত্যুর কারণ।