ঝিনাইদহের রাস্তা অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে দিচ্ছে পরিবার
ঝিনাইদহের চোখ-
দরিদ্র সুজন মণ্ডলকে (২৫) পথে বসিয়ে দিল কাদার রাস্তা। ঋণ করে কিনেছিলেন একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যান। রাস্তায় কাদার কারণে বাড়ি নিতে না পারায় মাঝপথের এক মাদ্রাসার আঙিনায় রাখতেন সেটিকে। সেখান থেকে ভ্যানটি সম্প্রতি চুরি হয়ে গেছে। আয়ের একমাত্র অবলম্বন ভ্যানটি হারিয়ে এখন সুজন পথে পথে ঘুরছেন। স্ত্রী-শিশুপুত্র নিয়ে কষ্টে কাটছে তাঁর জীবন।
সুজন মণ্ডল ঝিনাইদহ সদর উপজেলার চন্দ্রজানী গ্রামের আমিরুল ইসলাম মণ্ডলের ছেলে। তাঁরা দুই ভাই, পৃথক সংসার তাঁদের। বাবা আমিরুল ইসলাম মণ্ডলও খান পৃথক হাঁড়িতে।
সুজন মণ্ডল বলেন, তাঁদের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। বাবা অন্যের জমিতে কৃষিশ্রমিকের কাজ করেন। তবে তিনি ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজ করতে পারেন না। বাবার সঙ্গে মাঝেমধ্যে মাঠে গেলেও দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়তেন। এদিকে বিয়ের পর বাবা পৃথক সংসার করে দেন। এ অবস্থায় সংসার চালাতে তিনি দুটি এনজিও থেকে ১ লাখ ১০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে একটি ইঞ্জিনচালিত ভ্যানগাড়ি কেনেন। এটি চালিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন তিনি।
সুজন বলেন, তাঁদের গ্রামসহ তিনটি গ্রামের ওপর দিয়ে যাওয়া একমাত্র রাস্তাটি পাকা হয়নি। তাঁদের গ্রামটি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার শেষ মাথায় পড়েছে। এরপরই শুরু হয়েছে শৈলকুপা উপজেলার ব্যাসপুর গ্রাম। তাঁদের গ্রামের তিন কিলোমিটার দূরে ঝিনাইদহ সদরের পরানপুর গ্রামে পিচের রাস্তা রয়েছে আর শৈলকুপা উপজেলার হাট থেকে ফাদিলপুর বাজার পর্যন্ত পিচের রাস্তা আছে। মাঝের চার কিলোমিটার রাস্তা দুই উপজেলার টানাটানিতে পাকা হয়নি। তিনি বলেন, বর্ষা মৌসুম এলেই কাদার কারণে পায়ে হেঁটেও তাঁরা বাজার থেকে বাড়ি ফিরতে পারেন না। সেখানে যানবাহন চলার প্রশ্নই ওঠে না। এ অবস্থায় তাঁর ভ্যানটিও কাদার জন্য বাড়িতে নিতে পারেননি।
সুজন কাঁদতে কাঁদতে বলেন, গত তিন মাস তিনি ভ্যানটি ব্যাসপুর গ্রামের মধ্যে থাকা একটি মসজিদসংলগ্ন মাদ্রাসার ক্যাম্পাসে রেখে আসছিলেন। সেখানে আবাসিক ছাত্ররা রাত যাপন করে, যে কারণে তিনি সেখানকার মাঠে ভ্যান তালাবদ্ধ করে রেখে আসতেন। গত ১৪ আগস্ট রাতে ভ্যানটি সেখানে তালাবদ্ধ করে রেখে আসেন। পরদিন সকালে ভ্যান নিতে গিয়ে দেখেন, তালা কেটে চোরেরা ভ্যান নিয়ে গেছে।
সুজন বলেন, তিনি খুবই অর্থকষ্টে জীবন কাটাচ্ছিলেন। একটু ভালো থাকার আশায় দুটি এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে ভ্যানগাড়িটি কেনেন। এরপর থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ টাকা আয় হচ্ছিল, যা দিয়ে তাঁদের তিনজনের সংসার চলছিল। কিন্তু ভ্যানটি চুরি হওয়ায় এখন কষ্টের শেষ নেই। এখনো ৪০ হাজার টাকা ঋণের বোঝা তাঁর মাথায়। পাশাপাশি শিশুপুত্র আর স্ত্রীকে নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর হয়ে পড়েছে। এখন দিনের বেশির ভাগ সময় বাড়িতে কাটে। মাঝেমধ্যে মাঠের কাজে যান। কিন্তু শরীর কুলায় না। তিনি তারপরও বাধ্য হয়ে মাঠে যাচ্ছেন।
গ্রামের বাসিন্দা জালাল উদ্দিন বলেন, সুজন মণ্ডল খুবই দরিদ্র পরিবারের সন্তান। ভ্যানটি ছিল তাঁর বেঁচে থাকার একমাত্র অবলম্বন। গ্রামের রাস্তায় কাদার কারণে ভ্যানটি বাড়ি নিতে পারতেন না। আর এ কারণেই তাঁর ভ্যানটি চুরি হয়। এখন তাঁর দিন কাটছে খুবই কষ্টে। ঋণ পরিশোধ করবেন, না স্ত্রী-পুত্রের মুখের খাবার জোগাড় করবেন তিনি?
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাসুম বলেন, ঘটনাটি খুবই দুঃখজনক। চন্দ্রজানী, সীতারামপুর ও ব্যাসপুর গ্রামের মানুষের দুর্ভোগ দূর করতে রাস্তাটি দ্রুত পাকা হওয়া প্রয়োজন। রাস্তাটি পাকা থাকলে হয়তো সুজন মণ্ডল তাঁর ভ্যানটি বাড়ি নিতে পারতেন, তাহলে এই ক্ষতি হতো না।