কোটচাঁদপুরজানা-অজানা

ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর পৌরসভাকে মডেল বানাতে কী কী করতে চান মেয়র

ঝিনাইদহের চোখ-
মাইকেল মধুসূদন দত্তের স্মৃতি বিজড়িত কপোতাক্ষ নদের পাশ ঘেষে বয়ে চলা এ পৌরসভার মোট আয়তন ১৭.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। পৌরসভার মোট জনসংখ্যা ৫৬ হাজার ৯০। ১৯৯৯ সালের ২৪ জানুয়ারি মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশে কোটচাঁদপুর পৌরসভাকে ক শ্রেনিতে উন্নীত করা হয়।

কোটচাঁদপুর পৌর মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বলেছেন, আমার মেয়াদে শহরে একটি কলেজিয়েট স্কুল, সুইমিং পুল, অডিটোরিয়াম, চ্যারিটেবল, ডিসপেন্সারি করারও পরিকল্পনা রয়েছে।

সেলিম জানান, দায়িত্ব নেয়ার পর সাবেক মেয়রদের রেখে যাওয়া প্রায় দশ কোটি টাকা দেনা আমাকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। যা পৌরসভার স্বাভাবিক উন্নয়নে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। তারপরও আমি পৌরসভার সার্বিক উন্নয়ন ও নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছি।

তিনি বলেন, দায়িত্বে আসার পর পৌর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গড় ২৭ মাসের বেতন বকেয়া ছিল। বিগত সময়ের কাউন্সিলরদের সম্মানী বছরের পর বছর দেয়া হয়নি। তারপরও আমি সাধ্যমত উন্নয়ন কর্মকান্ডের পাশাপাশি কর্মচারীদের বেতন মাস শেষে পরিশোধ করছি। কাউন্সিলরদের সম্মানীও বকেয়া নেই। সকল অকেজো ড্রেন সংস্কার করে চালু করা হয়েছে। শীঘ্রই নতুন টেন্ডার করে কালভার্ট ও ড্রেন নির্মাণ করে জলজট নিরসন করা হবে। নতুন করে পৌর এলাকায় দু’টি পানির পাম্প সংযুক্ত করার কারণে পৌরবাসীর দীর্ঘ দিনের পানির ভোগান্তি লাঘব হয়েছে। বৈদ্যুতিক পিলারে ৭শ’ বাল্ব লাগানো হয়েছে। ৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বিভিন্ন রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। বিগত মেয়রদের রেখে যাওয়া ৩ কোটি টাকা বিদ্যুৎ বিলের মধ্যে ২৫ লক্ষ টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। পোস্টপেইড কার্ডের মাধ্যমে আমরা পৌর এলাকায় বিদ্যুৎ ব্যবহার করছি। যে কারণে আমার আমলে একটি টাকাও বিদ্যুৎ বিভাগে বকেয়া নেই। বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানেও আর্থিক অনুদান দেয়া হয়েছে। জুলাইয়ের ১ম সপ্তাহ থেকে অতি মাত্রায় পৌর এলাকায় মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন। সাধারণ নাগরিকদের অক্সিজেন সেবা দিতে মেয়র পৌরসভার পক্ষ থেকে স্থানীয় হাসপাতালে ১৬টি অক্সিজেন সিলিন্ডার দেন। সাথে সাথে হাসপাতালের সকল অক্সিজেন সিলিন্ডার রিফিলের অর্থায়নও করছেন। তাছাড়া ব্যক্তিগত উদ্যেগে বিনামূল্যে অক্সিজেন সিলিন্ডার সরবরাহ অব্যাহত রয়েছে। দেয়া হচ্ছে বিনামূলে ওষুধ।

মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বলেন, দায়িত্ব পাওয়ার সাথে সাথে সাবেক মেয়রদের আমলের আর্থিক লেনদেনের হিসাব সিএ ফার্ম দিয়ে অডিট করানো হয়েছে। রিপোর্ট পেলে আমি তা পৌরবাসীর সামনে তুলে ধরবো। হিসাবে অসঙ্গতি থাকলে প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবো। কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। তিনি কোটচাঁদপুরকে দুর্নীতিমুক্ত মডেল পৌরসভা করার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এটি বাস্তবায়নে যা যা প্রয়োজন তাই করবেন।

এক সময় বৃহত্তর যশোর জেলার সমৃদ্ধ থানা ছিল কোটচাঁদপুর। তখন ছোট কলকাতা হিসাবে এ শহরের খ্যাতিও ছিল। এখানকার খেজুরের গুড় থেকে তৈরি দলুয়া চিনি কলকাতা হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশে রফতানি হত। ১৯৬১ সালে বৃটিশ ঔপনিবেশিক শাসনামলে কোটচাঁদপুরকে মহকুমা করা হয়। দীর্ঘ আড়াই বছরেরও বেশি সময় সরকারিভাবে কোটচাঁদপুরে মহকুমার কার্যক্রম চলার পর ১৮৬৩ সালের শেষের দিকে কোটচাঁদপুরকে বিলুপ্ত করে বর্তমান ঝিনাইদহ জেলাকে মহকুমা করা হয়। মহকুমা বিলুপ্তির দু’দশক পর ১৮৮৩ সালের ১ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয় দেশের অন্যতম প্রাচীন এ পৌরসভা। এ পৌরসভার প্রথম চেয়ারম্যান ছিলেন যশোরের জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ক্যাসল। তিনি ১৮৮৩ থেকে ১৮৯২ সাল পর্যন্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। আজীবন পারিবারিকভাবেই বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শের অনুসারি বর্তমান মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম। তিনি দীর্ঘ দেড় যুগ ধরে কোটচাঁদপুর পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহবায়ক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে তার পিতা আসাদুজ্জামান কাটু মিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সংঘটিত ও সহযোগিতা করার অভিযোগে তিনি পাক সেনাদের হাতে গ্রেফতার হন। তার আপন বড় চাচা মরহুম দাউদ হোসেন বিষু মিয়া বঙ্গবন্ধু হত্যার পর তিনি কোটচাঁদপুর থানা আওয়ামী লীগের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। সহিদুজ্জামান সেলিম এর আগে দু’বার দলীয় মনোনয়নে পৌর নির্বাচন করেন।

চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারির নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে বর্তমান মেয়র সহিদুজ্জামান সেলিম বিপুল ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করেন। ২৮ ফেব্রæয়ারি তিনি মেয়র হিসাবে আনুষ্ঠানিকভাবে দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তিনি এ পৌরসভার ৪২তম মেয়র।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button