ঝিনাইদহ কোটচাদপুরে প্রশাসনের আপত্তি সত্বেও দ্রুত গতিতে চলছে পাঁকা দোকান নির্মান
ঝিনাইদহের চোখ-
পাড়াগায়ের ছোট্ট একটি বাজার কাঠালিয়া। মাত্র ৭০ শতক সরকারি আর পাশ^বর্তী ব্যক্তি মালিকানার কিছু জমি নিয়ে গড়ে উঠেছে বাজারটি। বাজারে অর্ধশত পাঁকা-সেমিপাঁকা দোকান রয়েছে। আর সরকারি ৭০ শতক জমিতে সপ্তাহে দুইদিন ট’বাজার বসে।
সরকারি সেই জমি কিছু অংশ দখল করে পাঁকা দোকান নির্মান করছেন স্থানীয় এক স্কুল শিক্ষক ও ব্যবসায়ী আছির উদ্দিন। সেখানে তিনি দুইটি দোকান ও সঙ্গে একটি গুদাম নির্মান করছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এই ঘর নির্মানে বাঁধা দিলেও কাজ বন্ধ হয়নি, উল্টো দ্রæততার সঙ্গে দিন-রাত কাজ করে নির্মান এগিয়ে নেওয়ার কাজ চলছে।
বাজারের একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ ও কোটচাঁদপুর উপজেলার একটি সীমান্তবর্তী এলাকা কাঠালিয়া। মূল বাজারটি যে কাঠালিয়ায় সেটি কোটচাঁদপুর উপজেলার মধ্যে পড়েছে। এই বাজারে আরো যে সব গ্রামের লোকজনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তার মধ্যে আছে কালীগঞ্জ উপজেলার কালুখালী, সুন্দরপর ও কোটচাঁদপুর উপজেলার শিশেরকুন্ডু গ্রাম। বাজারের সন্নিকটে রয়েছে সুন্দরপুর রেলওয়ে ষ্টেশন। সপ্তাহে শুক্র ও সোমবার কাঠালিয়ায় খোলা বাজার বসে। এই দুইদিন শতাধিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী খোলা বাজারে দোকান বসিয়ে কেনাবেচা করেন। এছাড়া বাজারে অর্ধশত পাঁকা-সেমিপাকা দোকান রয়েছে। এগুলো ব্যক্তি মালিকানায় গড়ে উঠেছে। আবার কিছু কিছু ব্যবসায়ী বাজারের জায়গায় সেমিপাকা ঘর করে ব্যবসা করছেন।
ব্যবসায়ীরা জানান, পাঁকা রাস্তার ধারের বাজারের এই জায়গার কিছু অংশ দখল করে আছির উদ্দিন পাঁকা দোকান নির্মান করছেন। মাত্র ২৫ দিনের ব্যবধানে তিনি পাঁকা ছাদ দিয়ে ফেলেছেন। সেখানে দুইটি দোকান আর সঙ্গে একটি গুদাম তৈরী করছেন। আছির উদ্দিন এলাকার প্রভাবশালী, সাবেক ইপি মেম্বার ও পাশ^বর্তী কালুখালী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি সরকার দলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। যে কারনে এলাকার কেউ প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে পারছেন না।
বাজারের এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করে জানান, আছি উদ্দিনের নির্মানাধীন ঘরটি বাজারের শোভা নষ্ট করছে। পাশাপাশি পাশের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বাচ্চাদের খেলাধুলা ও ছুটাছুটির বিঘœ সৃষ্টি করবে। যে কারনে তারা প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করতে না পারলেও প্রশাসনকে অবহিত করেছিলেন। কোটচাঁদপুর উপজেলার সদ্য বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান রিপন সরেজমিনে এসে নির্মান কাজটি বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। শুধু বন্ধ নয় নিজ দায়িত্বে ভেঙ্গে ফেলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এরপর দুইদিন কাজ বন্ধ রাখা হলেও ভেঙ্গে ফেলার কাজ শুরু করেনি দখলদার। পরে হঠাৎ করেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান রিপন বদলী হয়ে যান। এই সুযোগে দখলদার রাত-দিন কাজ করে চলেছেন। ইতিমধ্যে ঘরের ছাদ দেওয়া শেষ হয়েছে। এখন পাল্টার ও ফ্লোর এর কাজ চলছে। কোনো বাঁধাই তার কাজ বন্ধ করতে পারছে না।
এ বিষয়ে আছির উদ্দিন অবশ্য স্বীকার করেন জায়গাটি বাজারের এবং সরকারি। তারপরও কেন ভবন করছেন জানতে চাইলে বলেন, তিনি সিমেন্টের ব্যবসা করেন। বাজারের মধ্যে তার যে দোকান রয়েছে সেখানে ধুলা হয়। তাই বাজারের অন্যরা পৃথক স্থানে ঘর করে নিতে বলেছেন। এই কারনে তিনি এক পাশে ঘর করে নিচ্ছেন। তিনি বলেন, নির্মান কাজে একদফা বাঁধাগ্রস্থ হয়েছিলেন, পরে একটা সমঝোতা করে আবার নির্মান করছেন।
এ বিষয়ে কাঠালিয়া বাজার কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় এলাঙ্গী ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য মোঃ জাহাঙ্গীর আলম জানান, নির্মানাধীন ঘরটি ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য ইতিপূর্বে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। তারপরও কাজ হচ্ছে তিনি দেখেছেন, তবে এ নিয়ে নতুন করে কোনো কথা কেউ বলেনি বলে জানান।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ দেলোয়ার হোসেন জানান, বাজারের জমি দখল করে কেউ ঘর করতে পারবে না। বিসয়টি তিনি দ্রæত খোজ নিয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানান।