সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে টিসিবির পেঁয়াজ কালোবাজারে আড়তে বিক্রির সময়ে জনগনের ধাওয়ায় তা পন্ড হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে কালীগঞ্জ শহরের নিমতলা বাসস্ট্যান্ডে। এ সময় পিকআপের চালক গাড়ি ফেলে পালিয়ে রক্ষা পেলেও বেরিয়ে এসেছে থলের বিড়ালের তথ্য। পরে ঘটনাস্থলে কালীগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উপস্থিত হয়ে সাড়ে ১৪ বস্তা টিসিবির পেঁয়াজ ও তা বহনকারী পিকআপ জব্দ করে থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করেছেন।
জানাগেছে, কালীগঞ্জ শহরের তরকারীর পাইকারী এক আড়তে চুরি করে পেঁয়াজ নামানোর সময়ে পেছন থেকে ধাওয়া করে স্থানীয়রা। গাড়িটি তারা নিমতলা বাস স্ট্যান্ডের ধানের হাটায় গিয়ে আটক করে প্রশাসনের খবর দেয়। পরে প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে আসেন। তারা ইতোমধ্যে নিশ্চিত হতে পেরেছেন যে, পিকআপটিতে সরোয়ার হোসেন শিপন মৃধা নামের এক টিসিবি ডিলারের টিসিবি পণ্য তার লোকজন কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা চালাচ্ছিল।
এটাও নিশ্চিত হয়েছেন যে,শিপন মৃধার পরিচালিত মেধা জেনারেল ষ্টোর থেকে তার লোকজন ৩’শ কেজি চিনি,৩’শ কেজি ডাল, ৪’শ কেজি তেল, ৪০ কেজি ওজনের সাড়ে ১৪ বস্তা পেঁয়াজ বোঝায় দিয়ে সকালে বের হয়। যা কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা করছিল। জনগন তা রুখে দিয়েছে। এরমধ্যে ৬’শ কেজি পেঁয়াজ শহরের এমইউ কলেজ রোডের ইমা বাণিজ্য ভান্ডার নামের অলোক বিশ্বাসের তরকারী আড়তে নামানোর চেষ্টাকালে জনগন ধাওয়া করে। তারা ওই পিকআপ ভর্তি পেঁয়াজ আটক করে। এখন জনগনের প্রশ্ন পেঁয়াজ পাওয়া গেলো কিন্ত চিনি, ডাল, তেল গেলো কোথায় ?। আবার টিসিবির পন্য কালোবাজারে বিক্রি করলেও দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার বলছেন কিছুই জানেন না।
স্থানীয়রা বলছেন,সম্প্রতি সময়ে বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়ে যাওয়ায় বেশি লাভ করার জন্য ওই ডিলার কালোবাজারে বিক্রির চেষ্টা করেছেন। সরকার যে উদ্দেশ্যে টিসিবিতে মাল বিক্রি করছেন কতিপয় কিছু ডিলার নিজেদের পেট ভরাতে হতে দিচ্ছে না। তাদের দাবি- এই ডিলার দফায় দফায় এভাবে ধরা পড়েছে কিন্ত সবশেষে কিছুই হয়নি। জনগনের ভাষ্য,এ ধরনের ডিলারসীপ বাতিল করা উচিৎ।
ইমা বাণিজ্য ভান্ডারের ম্যানেজার ফিরোজ হোসেন জানান, সকালে টিসিবির ডিলার সরোয়ার হোসেন শিপন ফোন করে পেঁয়াজগুলো কিনতে অনুরোধ করে আড়তে পাঠিয়ে দেন। এ সময় লোকজনে তাড়া করে এতটুকু জানি। পরে কি হয়েছে আমি জানিনা।
টিসিবির ডিলার মৃধা জেনারেল স্টোরের মালিক সরোয়ার হোসেন শিপন মৃধা জানান, সকালে তিনি পন্য উত্তোলনের কথা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছিলেন। সকালের প্রথম দিকে বারবাজার এলাকায় চিনি, তেল ও ডাল বিক্রি করেছেন। পিয়াজগুলো কালীগঞ্জ শহর থেকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।
এদিকে মুঠোফোনে দায়িত্বপ্রাপ্ত ট্যাগ অফিসার ও উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা অফিসার তরুন কুমার দাসের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান,সরকারি নিয়ম আছে কোন ডিলার টিসিবি পন্য উত্তোলন করলে অবশ্যই ট্যাগ অফিসারকে জানাতে হবে। কিন্তু শিপন মৃধা পন্য উত্তোলন করলেও আমাকে কিছুই জানাননি।
কালীগঞ্জ উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভ‚মি) ভ‚পালী সরকার জানান, মঙ্গলবার সকালে ঝিনাইদহ থেকে টিসিবির ডিলার মৃধা জেনারেল স্টোরের মালিক সরোয়ার হোসেন শিপন ৩০০ কেজি চিনি, ডাল ৩০০ কেজি, তেল ৪০০ লিটার ও ৬০০ কেজি পেঁয়াজ উত্তোলন করেন। কিন্তু পিকআপে চিনি, ডাল ও তেল পাওয়া যায়নি। ১৪ বস্তায় ৬০০ কেজি পিয়াজ পিকআপে ছিল। সেগুলো জব্দ করা হয়েছে। টিসিবির পন্য কেউ এভাবে বিক্রি করতে পারেন না।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিয়া জেরিন জানান, ডিলার সরোয়ার হোসেন শিপন মৃধা পন্য উত্তোলনের কোন তথ্য আমাকে জানাননি। এটা অবশ্যই অনিয়ম। এভাবে বিক্রিরও কোন নিয়ম নেই। ফলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা অবশ্যই নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, এর আগেও এই টিসিবি ডিলার কালোবাজারে রাতের আধারে টিসিবি পন্য বিক্রির অপরাধে জেল জরিমানা করেছিলেন সে সময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সূবর্ণা রানী সরকার। সেটা কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই আবার করলেন টিসিবি’র পণ্য নিয়ে আরেক অনিয়ম। আসলে তিনি প্রভাবশালী হওয়ায় কোন কিছুই তোয়াক্কা করেন না।