বিয়ে নিয়ে তুলকালাম চুয়াডাঙ্গায় তালাক/২৪ ঘন্টার পর ঝিনাইদহে আবারো বিয়ে
ঝিনাইদহের চোখ-
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় নববধূকে তালাক দেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মাথায় আবারও বিয়ে করেছেন বর-কনে। সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে পাঁচ লক্ষ টাকা দেনমহোরে সুমি আক্তারকে বিবাহ করেন বর সবুজ আলী। এর আগে বিভিন্ন গণমাধ্যমে রোববার (২৪ অক্টোবর) অনুষ্ঠানের দিন দুপুরে বরপক্ষের লোকজন বারবার মাংস চাওয়ায় বরপক্ষের তিনজনকে পিটিয়ে জখম করে। রাতেই দুপক্ষের সমঝোতায় বিয়েবিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত হয়।
তবে বর সবুজ আলী বলেছেন, মাংস চাওয়াকে কেন্দ্র করে কথা কাটাকাটি হলেও মূল গোলযোগটা বাঁধে হাত ধোয়ানোকে কেন্দ্র করে। এই নিয়ে আমাদের তিনজনকে পিটিয়ে আহত করেছে কনেপক্ষ।
বর সবুজ আলী ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ২নং মধুহাটি ইউনিয়নের কালীপুতা গ্রামের মৃত আব্দুর রহিমের ছোট ছেলে। কনে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার দশমি গ্রামের নজরুলের ছোট মেয়ে সুমি আক্তার।
সবুজ আলী বলেন, সুমি আক্তার সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমি আপনার কাছে চলে আসতে চাই। আপনি কি আমাকে গ্রহণ করবেন। তখন আমি একমহুর্ত দেরি না করে তাকে চলে আসতে বলি। এরপর আমি ওই এলাকার কাছাকাছি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারে তার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। সেখানে সুমি আসলে ডাকবাংলা কাজী অফিসে ৫ লক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে পূনরায় আমাদের বিবাহ হয়। এখন আমরা বাড়িতেই আছি। আমরা সুখে শান্তিতে সংসার করতে চাই।
সবুজের পরিবারের সদস্যরা জানায়, সবুজের সঙ্গে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বদরগঞ্জ দশমিপাড়ার সুমির মোবাইল ফোনে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। ২০১৯ সালে পারিবারিক ভাবে দেখাশুনা করে মোবাইলের মাধ্যমে একলক্ষ টাকা দেনমোহর ধার্য করে তাদের বিবাহ হয়। গত ১৩ অক্টোবর সবুজ দীর্ঘ ৪ বছর যাবৎ সৌদিআরব থেকে দেশে ফেরেন। বিবাহের দুই বছর পরে দেশে ফিরে আনুষ্ঠানিকভাবে বউকে আনতে গিয়ে শ্বশুর বাড়ির লোকজনের হাতে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে তাদের। তারপরও মেয়ের পিতা জোর করে দু-জনের ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর নিয়ে আলাদা করতে চেয়েছিলো। কিন্তু দুই বছরের গভীর ভালবাসায় আবারো এক হলো সবুজ-সুমি দম্পতি।
সবুজ আলী বলেন, তিনি দির্ঘ ৪ বছর যাবৎ সৌদিআরব প্রবাসি। দেশে তার মাতা মালেকা বেগম অসুস্থ হয়ে পড়েন। মায়ের সেবাযতœ করাবার জন্য পরিবারের লোজন মেয়ে খুজতে থাকে। এরপর চুয়াডাঙ্গা জেলার দশমি গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে সুমির সাথে মোবাইল ফোনের মাধ্যমে গত দুই বছর আগে বিবাহ হয়। কনে আমাদের বাড়েতি আসা যাওয়া করতো। দু-জনের পছন্দের একটি বাড়িও করেছে সুমি নিজে দেখাশুনা করে।
তিনি আরো বলেন, আমি গত ১৩ অক্টোবর দেশে ফিরে আসি। দেশে ফিরলে শশুর ও শ্বাশুড়ি আসে আমাদের বাড়িতে। তারা দিনখান ঠিক করে কনেকে উঠিয়ে আনার জন্য। ৭০জন বরযাত্রী নিয়ে ২৪ অক্টোবর কনেকে আনতে যাওয়ার কথা ঠিক হয়। সেখানে খাওয়া দাওয়ার শেষে কনে পক্ষের লোকজন আমাদের হাত ধোয়াতে আসলে ওই সময় আমার বন্ধুদের সাথে কথা কাটাকাটি হয়। এর আগে মাংস খাওয়াকে কেন্দ্র করে বাকবিতন্ডায় জড়িয়ে পড়ে উভয় পরিবারের লোকজন। এ সময় কণের বাবা এসে গোলযোগ শুরু করে এবং আমার সাথে থাকা তিন বন্ধুসহ আমাকে ও কণে সুমিকে বেধরক মারধর করে।
তিনি আরো বলেন, মেয়ের বাবা গোলযোগের পরে কিছুতেই সুমিকে আমার সাথে আসতে দিতে চাইনি। আমরা অনেক বুঝিয়েও কোন ফল হয়নি। উল্টো আমাকে ও আমার বউ সুমিকে ঘরের ভিতর আটকে রেখে আমাদের অসম্মতি-তে ডিভোর্স পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে নেই। আমরা হতাশা গ্রস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি। পরের দিন সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকালে সুমি আমাকে ফোন দিয়ে বলে, আমি আপনার কাছে চলে আসতে চাই। আপনি কি আমাকে গ্রহণ করবেন। তখন আমি একমহুর্ত দেরি না করে তাকে চলে আসতে বলি। পরে সদর উপজেলপার ডাকবাংলা বাজারে কাজী অফিসে ৫ লক্ষ টাকা দেনমহর ধার্য করে আমাদের আবারো বিবাহ হয়। এখন আমরা বাড়িতেই আছি, সুখে শান্তিতে সংসার করতে চাই।
সবুজের চাচাতো ভাই শাহজাহান আলী জানান, বিয়ের দিন বরের থেকে আলাদা ভাবে আমরা সাবাই সবে খাওয়া দাওয়া করছিলাম। বরের তিন বন্ধু মিলে তারা একই টেবিলে খাচ্ছিল। এসময় মাংস ফুরিয়ে গেলে তারা কণের লোকজনের কাছে মাংস চাই। দিতে দেরি হলে উভয়ের মাধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। এরপর কণে পক্ষের লোকজন আবারো মাংস নিয়ে আসে এবং খেতে দেয়। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বরের হাত ধোয়াকে কেন্দ্র করে তার বন্ধুরা উত্তজিত হয়ে পড়ে। বরের বন্ধুরা ওই এলাকার স্থাণীয় হওয়ায় তাদের সাথে দুই-এক কথায় গোলযোগরে সৃষ্ঠি হয়। একপর্যায়ে তাদের বেধরক মারধর করে কণে পক্ষের লোকজন।
আহতরা হলেন চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার কুতুবপুর ইউনিয়নের বোয়ালিয়া গ্রামের আলমগীর আলীর ছেলে শাহা জামাল (২৮), ফারুক হোসেন (৩৫) ও আব্দুর রহিমের ছেলে আসমান আলী (৩৫)। শাহা জামালের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হয়।
তিনি আরো জানান, পরে আমরা কণেকে নিয়ে আসতে চাইলে মেয়ের বাবা দিতে আপত্তি জানায়। অনেক বোঝানোর পরও মেয়ের বাবা কোন কর্ণপাত করেন না। সেখান থেকে আমাদেরকে বলা হয় এলাকার মেম্বরকে নিয়ে যেতে হবে। তখন আমাদের ওয়ার্ড মেম্বার গোলাম রসুলকে নিয়ে যায়। পরে তারা মেম্বরের কথাও না শুনে উল্টো বর ও বউকে দিয়ে ডিভোজ পেপারে স্বাক্ষর করিয়ে নেই। এতে আমরা ক্ষুদ্ধ হয়ে বাড়ি ফিরে আসি।
কনের বাবা নজরুল ইসলাম জানান. বিয়ের দিন বর পক্ষ খুব খারাপ আচরণ করে আমাদের সঙ্গে। খাবার নিয়েও প্রশ্ন তোলে বর পক্ষের লোকজন। একপর্যায়ে আমাদের সঙ্গে তাদের গোলযোগ হয়। তিনি আরও জানান, ঘটনার পর রাতেই উভয় পক্ষ বসে, কোনো সমাধান না হওয়ায় বিয়ে বিচ্ছেদ হয়। এরপর গত সোমবার আমার মেয়ে আবারও সবুজের কাছে চলে যায়।
২নং মধুহাটি ইউপি সদস্য মোঃ গলাম রসুল বলেন, রোববার (২৪ অক্টোবর) রাত সাড়ে ৮টার দিকে আমাকে মোবাইলে ফোন করে সবুজের মামা ও চাচারা। তারা আমাকে জানায় সবুজের বউ আনতে তারা চুয়াডাঙ্গার দশমী এলাকায় গিয়েছে। সেখানে কনে পক্ষের লোকজনের সাথে গোলযোগ হওয়ায় কনেকে দিতে চাইছে না তারা, তাই আমাকে যেতে হবে। আমি সেখানে গেলে আমার মাধ্যমে তারা কনেকে দিবে। এরপর আমি দশমি গ্রামে যায়। কনের বাবাকে অনেক বুঝানোর পরও কনের বাবা ও বোনজামাই কিছুতেই কনেকে আমাদের সাথে আসতে দেয়নি। তারা জোর করে বর ও কনের কাছ থেকে ডিভোজ পেপারে সাক্ষর নিয়ে নেই। এরপর কাল সন্ধায় শুনতে পায় কনে সবুজের আড়িতে চলে এসেছে। বর্তমানে ওই দম্পতি তাদরে বাড়িতে আছে। তাদের ভালোবাসার জয় হয়েছে।