বহুমুখী প্রতিভার বিস্ময় বালক দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ঝিনাইদহের সাদ
ঝিনাইদহের চোখ-
ইংরেজিতে বলে দিচ্ছে পৃথিবী নামক গ্রহের মানচিত্রে থাকা সব দেশের ভূমি, পাহাড়, পর্বত আর সাগর মহাসাগরের অবস্থান। চোখের পলকে এঁকে দিতে পারছে যে কোনো দেশের মানচিত্র। বলে দিচ্ছে মহাকাশের সব গ্রহ-উপগ্রহ আর নক্ষত্রের নাম,
অবস্থান আর দূরত্ব। নিমিষেই করে দিচ্ছে বীজগণিত ও জ্যামিতির জটিল সমস্যার সমাধান। নিজের নামে ইউটিউব চ্যানেল খুলে তাতেই প্রকাশ করছে নিজের নানা প্রতিভার ভিডিও। এমনই বিস্ময়কর প্রতিভার সামিউন আলিম সাদের বয়স মাত্র সাড়ে সাত বছর।
২০২০ সালে স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণিতে সাদকে ভর্তি করে দেন তার বাবা। করোনার মহামারির কারণে দুই বছরের স্কুল জীবনের এক মাসও ক্লাসে যাওয়া হয়নি শিশু সাদের। তবে এ দু’বছরে সামিউন আয়ত্ত করেছে আন্তর্জাতিক ভাষা ইংরেজি। ভিনদেশি এ ভাষাতেই বলে দিচ্ছে বিভিন্ন দেশের ভূমি, পাহাড়, পর্বত আর সাগর মহাসাগরের অবস্থান। প্রতিটি দেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর বর্ণনা। পৃথিবীর গঠন প্রকৃতি ভূমিকম্প ও আগ্নেয়গিরির বর্ণনা করছে অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের মত। মহাকাশের সব গ্রহ-উপগ্রহ আর নক্ষত্রের নাম অবস্থান আর দূরত্বও সে বলতে পারে। নিমিষেই করে দিতে পারে বীজগণিত ও জ্যামিতির মতো বিষয়ের জটিল সব সমস্যার সমাধান। শুধু নিজেই
পারে বা বুঝে এমন না, সাবলীল ইংরেজিতে বুঝিয়ে দিচ্ছে অপরকেও। এতটুকু বয়সে সাদ নিজেই ংধসরঁহ ধষরস ংধধফ নামে একটি ইউটিউব চ্যানেল খুলে তার বর্ণনায় মহাকাশ, গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়ের কনটেন্ট আপলোড করেছে। তার স্বপ্ন বড় হয়ে একজন বিজ্ঞানী, গণিতবিদ অথবা মহাকাশ বিজ্ঞানী হবে।
এমনই প্রতিভাবান সামিউন আলিম সাদ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলা শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী এএইচএম আলীমের ছোট ছেলে। কলেজ শিক্ষক আয়েশা আক্তার চার্লি তার মা। ২০১৪ সালের ৬ জুলাই তার জন্মদিন। তার বড় বোন সামিয়া আলীম প্রমি ২০২২ সালের এইচএসসি পরীক্ষার্থী। তাদের বসবাস কালীগঞ্জ শহরের মধুগঞ্জ বাজার এলাকার একটি ভাড়া বাড়িতে।
তার বাবা আব্দুল আলিম বলেন, তিন থেকে সাড়ে তিন বছর বয়স থেকেই ইংরেজি বই পড়তে চাইত সাদ। এসময় তাকে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে ইংরেজি অক্ষর শেখার একটি অ্যাপস ডাউনলোড করে দিই। তখন থেকে সে আমাদের ব্যবহৃত ফোন নিয়ে ইংরেজি ও আরবি ভাষা শেখা শুরু করে। এছাড়া লক্ষ্য করতাম ইউটিউবে বিভিন্ন স্পিকারদের বক্তৃতা শুনছে। আমরা বুঝতাম না ও কি করছে। কয়েক মাসের মধ্যে সাদ সবাইকে অবাক করে দিয়ে শুদ্ধ উচ্চারণে ইংরেজি পড়তে শিখে যায়। চার থেকে পাঁচ বছর বয়সে তার বড় বোনের গণিত বই থেকে যে কোনো জটিল বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান করে দিয়ে বাড়ির সবাইকে অবাক করে দেয়। এভাবে পরিবারের সবার নজরে আসতে থাকে তার বিস্ময়কর মেধার। ২০২০ সালে স্কুলে ভর্তির পর থেকে শুরু হয় শ্রেণির পাঠ্যবই অধ্যয়ন। স্কুল জীবনের এই দেড় বছরে একে একে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির গণিত বইয়ের সব বীজগণিত ও জ্যামিতির সমাধান সে করে দেখায়। আয়ত্ত করে মহাকাশ ও পৃথিবীর সবদেশের ভৌগোলিক অবস্থানও।
সাদের মা আয়েশা আক্তার চার্লি বলেন, প্রথম শ্রেণিতে ভর্তির পর স্কুল থেকে পাওয়া বই সামিউন তিন দিনে শেষ করে ফেলে। তিন দিন পর সামিউন বলে- বাবা আমার পড়া শেষ। ছেলের কথা শুনে প্রথমে গুরুত্ব দেইনি। পরে মনে করলাম পরীক্ষা করেই দেখি। তার মুখস্থ ক্ষমতা দেখে আমরা অবাক হয়ে যাই। এরপর সে বাহানা শুরু করে দ্বিতীয় শ্রেণির বই এনে দিতে। কৌতূহলী হয়ে আমরাও সে বই এনে দিই। এবারও দুই তিন দিনের মধ্যে সব বই পড়া শেষ। এভাবে মাত্র দেড় বছরে প্রথম থেকে নবম শ্রেণির সব বই পড়ে শেষ করে ফেলে সাদ। কিন্তু তার বেশি আগ্রহ জিওগ্রাফি, ম্যাথ ও জ্যামিতি, স্পেস ও পস্নানেটস, ফিজিকস এবং বিভিন্ন ধরনের রোগব্যধি মানুষের শরীরে কিভাবে কাজ করে এবং কি ক্ষতি করে তা নিয়ে।
স্থানীয় মোস্তবাপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিতের শিক্ষক মো. মিজানুর রহমান জানান, শিশু সাদ অসাধারণ প্রতিভার অধিকারী। সে ক্লাস নাইনের বীজগণিত এবং জ্যামিতির সমাধান খুব সহজেই করতে পারে। সব থেকে বড় কথা ও সবকিছু বলে ইংরেজিতে। বিস্ময়কর প্রতিভার অধিকারী সাদ বাংলাদেশের সম্পদ।
ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের সাবেক অধ্যাপক শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার অলোক কুমার সাহা বলেন, এমন সুপার ট্যালেন্ট ছেলে খুব কমই জন্মায়। এ ধরনের ট্যালেন্টরা এমবিবিএস ডিগ্রি শেষ করার এক বছরের মধ্যে অধ্যাপক হতে পারে। তবে সে সুপার ট্যালেন্ট কিনা তা পরিমাপ করা ছাড়া বলা যাচ্ছে না।
সাদের মামা চাঁপাইনবাবগঞ্জের জেলা প্রশাসক ডিসি মঞ্জুরুল হাফিজ বলেন, ‘সম্প্রতি সাদ তার বাবা-মা’র সঙ্গে আমার এখানে বেড়াতে এসেছিল। আমি আমার অফিসের প্রথম শ্রেণির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সাক্ষাৎ করিয়ে দিই। সবাই সাদের সঙ্গে কথা বলেছে। বিভিন্ন রকম প্রশ্নও করেছে। সাদের মেধা দেখে সবাই বিস্মিত হয়েছে।’