কালীগঞ্জজানা-অজানাটপ লিডদেখা-অদেখা

গেন্ডারী চারা কুড়িয়ে নিজের ভাগ্য ঘুরালো ঝিনাইদহের সাগর

সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
মহামারি করোনার ধাক্কায় যখন সারা পৃথিবী টালমাটাল। তখন কলেজ ছুটি মধ্যে কুড়ানো গেন্ডারী আখের আগা ক্ষেতে লাগিয়ে সে আজ সফলতার কিনারে। সাগর ঝিনাইদহ কালীগঞ্জের মহেশ্বরচাঁদা গ্রামের আশরাফুল ইসলামের ছেলে এবং ফরিদপুর রাজেন্দ্র কলেজে সমাজ বিজ্ঞান বিভাগের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। উৎপাদিত গেন্ডারী বিক্রি করে ইতোমধ্যে বিক্রির মাধ্যমে প্রায় ২ লক্ষাধিক টাকা হাতে এসেছে। তার বিশ্বাস এ আখ বিক্রি করেই চলতি বছরে কমপক্ষে ৩ লক্ষাধিক টাকা আসবে।

সাগর জানান, দিনমজুর বাবার সন্তান তিনি। ৫ সদস্যের সংসার চালাতে বাবাকে হিমশিম খেতে হয়।
শৈশব হতে অভাবের সাথে যুদ্ধ। একদিকে দারিদ্রতার যুদ্ধে হয়েছে বাবার সঙ্গী। অন্যদিকে চালিয়ে গেছে নিজের লেখাপড়াও। মাঠে তাদের অল্প কিছু জমি আছে। সংসারে লাগাতর অনাটন। তাই বাবার সাথে কথা বলে শুরু করেন বাজারে ফেলে দেওয়া গেন্ডারী কুড়ানো। বুদ্ধি খাটিয়ে বাজারে অন্যের বিক্রি করা গেন্ডারী আখের আগা কুড়িয়ে তা প্রায় দেড় বিঘা জমিতে লাগানোর মাধ্যমে সফল হয়েছে।

সাগর আরো জানায়, বাজারে মানুষ যেখান থেকে আখ কিনে নিয়ে যায় আগার অংশ তেমন মিষ্টি না হওয়ায় কিছু অংশ কেটে ফেলে দেয়। এ আগাগুলো কুড়িয়ে বাড়িতে সংরক্ষন করেছে সে। এভাবে এক মাসের অধিক সময় ধরে গেন্ডারী আখের আগা কুড়িয়েছে। পরে তা সংরক্ষন করে ক্ষেতে লাগিয়েছে।

প্রতিবেশি কৃষক হেলাল উদ্দীন জানান, সাগর বাজার বাজার ঘুরে আগের আগা কুড়িয়ে তা ক্ষেতে চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছে। যা অন্যদের জন্যও অনুকরনীয়।

সাগরের বাবা আশরাফুল ইসলাম জানান, ৩৩ শতকের এক বিঘা জমিতে প্রায় ২৫’শ থেকে ২৮’শ চারা লাগে। সে হিসেবে দেড় বিঘা জমির জন্য প্রায় সাড়ে ৪ হাজার চারা লেগেছে। এর সবই প্রায় সাগরের কুড়ানো আগায় রোপন হয়েছে। তারমধ্যে মাত্র ৩ ’শ চারা প্রতিপিচ ২৫ টাকা দরে কিনতে হয়েছে। ওই মাঠে এর আগে কোনদিন গেন্ডারী আখের চাষ হয়নি। সাগরই প্রথম। এ জাতের আখ সাধারনত ১২ থেকে ১৪ ফুট লম্বা হয়। মোটা হয় মাঝারি। আখ ভালো হলে একটা আখ ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হয়। কড়া মিষ্টি হওয়ায় পাইকাররা ক্ষেত থেকেই আখ কিনে নিয়ে যাচ্ছে।

নিয়ামতপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহম্মেদ রনি জানান, অনেক শিক্ষার্থী অভাবের সম্মুখীন না হয়েও লেখাপড়া ধরে রাখতে পারে না। সে ক্ষেত্রে সাগর অন্যদের জন্য এক উজ্জল দৃষ্টান্ত।

কালীগঞ্জ উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা শিকদার মুহা,মোহায়মেন আক্তার জানান, আখ মুলত ২ ধরনের। একটিতে চিনি গুড় হয়। আর গেন্ডারী জাতের আখ মানুষ মুখে চিবিয়ে খায়। বাজারে এগুলোর চাহিদাও বেশ। অথচ কুড়ানো আখের আগা লাগিয়ে সাগর সকলকে চমকে দিয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button