ক্যারিয়ারের প্রথম আসরেই ঝিনাইদহের অর্থির বাজিমাত
ঝিনাইদহের চোখ-
জাতীয় খেলা কাবাডিই তার ধ্যান-জ্ঞান। মাত্র কয়েক মাস আগে খেলাটা শুরু করেছেন। বলা যায় এখনও তিনি খেলাটা শিখছেন। এ পর্যন্ত ঠিক আছে। কিন্তু যখন শুনবেন ঢাকার পল্টনের আউটার স্টেডিয়ামে সদ্যসমাপ্ত আইজিপি কাপ জাতীয় যুব কাবাডিতে নিজ জেলা দল ঝিনাইদহের হয়ে অংশ নিয়ে জীবনের প্রথম টুর্নামেন্টেই শিরোপার স্বাদ পেয়েছেন, তাহলে নিশ্চয়ই অবাক হবেন।
হ্যাঁ, যার কথা বলা হচ্ছে তিনি ঝিনাইদহ দলের সুদর্শনা কাবাডি খেলোয়াড় আরিয়ান আরাফ অর্থি।
২০ ডিসেম্বর, ২০০৭ সালে জন্ম নেয়া এবং ঝিনাইদহের ফজর আলী গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী অর্থি বলেন, ‘এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়ার আগে বলতে গেলে আমাদের কোন প্রস্তুতিই নেয়া হয়নি। শুধু স্কুলের এক কোনায় সামান্য একটু অনুশীলন করেছি।’
অর্থি আরও বলেন, ‘আমাদের দলের অধিকাংশই নতুন। কেউই এর আগে কাবাডি খেলেনি। আমিও তাই। এখানেই এসে প্রথম খেলেছি।’
এ প্রতিযোগিতার আঞ্চলিক পর্বেও নড়াইলের মুখোমুখি হয়ে হেরেছিল ঝিনাইদহ। আবার ঢাকায় অনুষ্ঠিত চূড়ান্ত পর্বের গ্রুপ ম্যাচেও নড়াইলের কাছে হেরেছিল ঝিনাইদহ। কিন্তু কথায় আছে, ‘শেষ ভাল যার, সব ভাল তার।’ ফাইনালে গিয়ে কিন্তু ঠিকই এবার নড়াইলকে হারাতে সক্ষম হয় ঝিনাইদহের মেয়েরা। এ প্রসঙ্গে অর্থির ভাষ্য, ‘আমার তো এখনও বিশ্বাস হচ্ছে না যে আমরা নড়াইলের মতো শক্তিশালী ও ফেভারিট দলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়েছি। সবকিছু যেন স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে। নড়াইল তো বেশ অনেক দিনের প্রস্তুতি নিয়ে খেলেছে। তাই ওদের হারিয়ে আনন্দটা অনেক বেশি।’
তবে ফাইনালের আগে যেহেতু নড়াইলের বিপক্ষে দুবার খেলার অভিজ্ঞতা হয়ে গিয়েছিল, সেহেতু মনে মনে ঠিকই আত্মবিশ্বাসের জন্ম হয়েছিল অর্থির মনে, ওদের সঙ্গে দুবার খেলে তাদের শক্তিশালী ও দুর্বল দিকগুলো সব জানা হয়ে গিয়েছিল। এটাই অর্থিদের ফাইনালে জয়ী হতে অনেক সাহায্য করেছে।
গত রবিবার ফাইনাল ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যার পর। বেশ কুয়াশা পড়ে। ফলে কাবাডি ম্যাট পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। এতে দুই দলের খেলোয়াড়রাই খেলতে গিয়ে অসুবিধায় পড়েন। অনেকেই বলেছেন, কুয়াশার এই সমস্যাকে কাজে লাগিয়েই নাকি বাড়তি সুবিধা আদায় করে নিয়েছে ঝিনাইদহ!
এ নিয়ে প্রশ্ন- আপত্তি জানান অর্থি, ‘মোটেও না। আমরা প্রায় প্রতিটি ম্যাচই এমন কুয়াশাচ্ছন্ন পিচ্ছিল ম্যাটে খেলেছি। প্রথম ম্যাচেই তো আমরা নড়াইলের কাছে হেরে গেলাম। তাহলে ফাইনালে তারা কেন পারল না? আসলে আমরা ভাল খেলেছি, আমাদের চেষ্টা ছিল, ভাগ্যও সুপ্রসন্ন ছিল… সবমিলিয়ে আমরা শিরোপা জিততে পেরেছি।’
ফাইনালে শুরু থেকেই এগিয়ে ছিল ঝিনাইদহ। কিন্তু একপর্যায়ে টেকনিক্যাল কিছু ভুল করার কারণে পয়েন্টে সমতা নিয়ে আসে নড়াইল। তখন তাদের যেমন আত্মবিশ্বাসী মনে হচ্ছিল, পক্ষান্তরে ঝিনাইদহ দলের খেলোয়াড়দের আত্মবিশ্বাস যেন টলে গিয়েছিল খানিকটা! এই দুরবস্থাটা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠে আবারও পয়েন্টের লিড নিয়ে ফেলে ঝিনাইদহ। এই প্রসঙ্গে অর্থি বলেন, ‘ওই সময় আমাদের কোচ আমাদের প্রয়োজনীয় নিদের্শ দেন, আশপাশের অনেকেই সমর্থন জানান। এভাবেই আমরা ওভারকাম করি।’
কাবাডি খেলার পাশাপাশি হকিও খেলেন অর্থি। ২০২০ সালের বাংলাদেশ গেমসে নিজ জেলার হয়েও খেলে রানার্সআপ হন। ২০১৮ সালে যুব গেমসেও হকি খেলেছেন। তবে সেবার তার দলের কোন সফলতা ছিল না। হকি নিয়ে ভবিষ্যৎ লক্ষ্য প্রসঙ্গে অর্থি জানান, সুযোগ পেলে হকিতে আরও ওপরের লেভেল পর্যন্ত, অর্থাৎ জাতীয় দলের ক্যাম্পে ডাক পেয়ে খেলতে চাই।’ আর কাবাডিতে? জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপে খেলতে চাই।’ হকি, না কাবাডি-কোন্ খেলাকে প্রাধান্য দেবেন? ‘অবশ্যই কাবাডি প্রাধান্য দিতে চাই।’ অর্থির আত্মপ্রত্যয়ী জবাব।
অর্থির খেলা দেখতে ঝিনাইদহ থেকে এসেছিলেন তার ফুপু রিক্তা পারভীন। ম্যাচ শেষে আবেগে আপ্লুত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ঝিনাইদহ থেকে পাঁচ-ছয়জন এসেছি ঢাকায় খেলা দেখতে। শুরুতে ভেবেছিলাম আমরাই জিতব। মাঝে নড়াইল ভাল খেলতে শুরু করায় একটু ভয়ই পেয়ে গিয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত ঝিনাইদহ চ্যাম্পিয়ন হওয়াতে খুবই ভাল লাগছে।’ অর্থিরা তিন বোন। তিনি মেজ। ছোট বোনও কাবাডি খেলেন মাঝে মধ্যে। নিজের পরিবার নিয়ে অর্থি বলেন, ‘আমার খেলাধুলা নিয়ে শুরুতে আব্বু (বিজিবি থেকে অবসরপ্রাপ্ত, আব্দুর রাজ্জাক) একটু আপত্তি করত। এখন আর করে না। তবে আম্মু (রাফেজা খাতুন, গৃহিণী) খুবই উৎসাহ দেয়।’
জীবনের প্রথম কাবাডি খেলতে এসেই শিরোপার স্বাদ পাওয়া অর্থি আগামীতে এই খেলা খেলে কতটা সাফল্য পান, সেটাই এখন দেখার বিষয়।