বিয়ের পর বিয়ে করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে ঝিনাইদহের প্রতারক জিয়া/আদালতে মামলা
ঝিনাইদহের চোখ-
দেড় বছর ধরে সৌদি আরবে গৃহকর্মীর কাজ করে কথিত স্বামী জিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন সকল টাকা। জিয়া সেই টাকা নিয়ে আবার জড়িয়েছেন নতুন সম্পর্কে, করেছেন বিয়ে।
ঝিনাইদহ পৌর এলাকার শিকারপুর(শেখ পাড়া) গ্রামের নফর আলী সর্দারের মেয়ে রিনা বেগম(৩৯) নামের এক প্রবাস ফেরত ভুক্তভোগী রিনা নারী ও শিশু স্পেশাল ট্রাইবুনালে ২০২১ ডিসেম্বরের ১৫ তারিখে দায়ের করা এক মামলার আর্জিতে এমন অভিযোগ করেছেন। মামলা নং এনটিসিপি- ৩৮১/২১। মামলার বাদি প্রবাসী রিনা বেগমের ১৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে ও ১৬ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে।
ভুক্তভোগী রিনা জানান, প্রায় কুড়ি বছর আগে তার বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের মির্জাপুর গ্রামে। ২টি সন্তান জন্মের পর স্বামী প্রবাসে যেয়ে আর ফিরে আসেনি। এদিকে অভাবের সংসারে এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কষ্টেই কাটছিল রিনা বেগমের সংসার। ছেলেকে ঝিনাইদহ শহরের বাইপাসে জিয়ার গ্যারাজে কাজ করতে দেন। এখান থেকেই একাকী বসবাসকরা রিনা বেগমের সাথে সম্পর্ক তৈরি হয় প্রতারক জিয়া সাথে। জিয়া শহরতলীর কালীচরণপুর ইউনিয়নের হাটবাকুয়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মুন্সির ছেলে।
এরপর ঝিনাইদহ শহরের হোটেল রেডিয়েশন ইনন’এ নিয়ে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে রিনাকে বিয়ে করেন জিয়া। এর পর ঝিনাইদহ ও ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে রাত কাটায় এক সাথে। সৌদি আরবে চলে যায় রিনা বেগম। এরপর অনেক দিন যোগাযোগ ছিল না রিনা বেগমের সাথে। ৩ বছর বিদেশ থেকে ছুটিতে এসে রিনা বেগমের নতুন করে আবার যোগাযোগ হয় জিয়ার সাথে। জিয়ার পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের কাছে রিনা বেগমকে স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দিত। ২০২০ সালের ২৭ জানুয়ারিতেও ঢাকার হোটেলে একসাথে থেকেছেন জিয়া এবং রিনা। বিদেশে যেয়ে ইসলামী ব্যাংকে গোপন পিনের মাধ্যমে জিয়ার নামে দেড় বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা পাঠিয়েছে রিনা বেগম। সেই টাকা রিনা বেগমের ছেলে মেয়েকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছে জিয়া। আর্জিতে এমন অভিযোগ করেছেন বাদি রিনা বেগম।
সৌদি আরবের তাবিল আল রাঝি ব্যাংক থেকে ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডে গোপন নাম্বারে ২০২০ সালের মার্চের ৩ তারিখে ৪৪ হাজার ৫৩৫ টাকা ৫৪ পয়সা, মে মাসের ৩ তারিখে ৩৭ হাজার ৪৬৯ টাকা ৭৫ পয়সা,জুন মাসের ৭ তারিখে ১৯ হাজার ৫১২ টাকা ৯২ পয়সা,আগস্ট মাসের ১০ তারিখে ৪১ হাজার ৪৪০ টাকা ৭০ পয়সা,সেপ্টেম্বরের ১ তারিখে ১৭ হাজার ৩৮৩ টাকা ২৫ পয়সা এভাবে বিভিন্ন মেয়াদে মোট ২ লাখ ৭৭ হাজারের বেশি টাকা জিয়ার নামে পাঠিয়েছে রিনা বেগম।
২০২১ সালের জুন মাসের দিকে রিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় জিয়া। তার মোবাইল নাম্বার করে ব্ল্যাক লিস্ট। ডিসেম্বরের ৮ তারিখে দেশে ফিরে আসে রিনা বেগম। এর মধ্যে ২১ সালের প্রথম দিকেই জিয়ার খালাতো বোন নুপুরের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়ায় জিয়া। নুপুর কুষ্টিয়া জেলার হরিনারায়ণপুর গ্রামের আজিজের মেয়ে। নুপুরের আগের সংসারে দুটি বাচ্চা রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জিয়া মোট বিয়ে করেছেন ৪টা। এর মধ্যে ৩টায় পরকীয়ার বিয়ে। খালাতো বোন নুপুরকে বিয়ে করার পরে বিভিন্ন সালিশ দরবারে বসতে হয়েছে।
রিনা বেগম জানান, তিনি দেশে ফিরে এসে জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। অস্বীকার করেন তাদের সম্পর্ক।রিনা বেগম অভিযোগ করেন, তার পাঠানো টাকাতেই বাইপাসে নতুন গ্যারাজ করে জিয়া। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন।
আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আঃ রব মামলার তদন্ত করেছেন। ইতঃমধ্যে মামলার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহে মাঠে নেমেছেন তিনি। জিয়ার প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৩ সন্তান, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২টি প্রতিবন্ধী সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী বর্তমানে ঝিনাইদহ শহরে হোটেলে কাজ করে খায়। প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষের কারোরি ভরণপোষণ করে না জিয়া।
প্রথম স্ত্রী বেবী অভিযোগ করেন, তার স্বামী দুঃচরিত্রের লোক। তার প্রথম ৩ স্ত্রীই এই নারী লোভী ব্যক্তির বিচার দাবি করেছেন।