ঝিনাইদহ সদরটপ লিডদেখা-অদেখা

সংরক্ষণের অভাবে ধ্বংসের পথে ঝিনাইদহের মিয়ার দালান

ঝিনাইদহের চোখঃ

সংরক্ষণ আর তদারকির অভাবে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে ২০০ বছর আগে নির্মিত ঝিনাইদহের মিয়ার দালান।

কয়েক বছর আগেও এ স্থাপত্য দেখতে দর্শনার্থীরা ভিড় করলেও এখন কেউ সেদিকে পা বাড়ান না। স্থানীয়দের মতে, যথাযথভাবে সংরক্ষণের উদ্যোগ নিলে এ স্থাপনা হয়ে উঠতে পারে অন্যতম পর্যটন স্পট।

জানা গেছে, মিয়ার দালানের অবস্থান ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মুরারীদহ গ্রামের নবগঙ্গা নদীর ধারে। ১২২৯ বঙ্গাব্দে ভবনটির নির্মাণকাজ শুরু করেন তত্কালীন জমিদার সলিমুল্লাহ চৌধুরী। ৭৫ হাজার টাকা ব্যয়ে বাড়িটির নির্মাণকাজ শেষ হয় ১২৩৬ বঙ্গাব্দে। সলিমুল্লাহ চৌধুরী স্থানীয়দের কাছে মিয়া সাহেব নামে পরিচিত ছিলেন। সেজন্য বাড়িটি মিয়ার দালান বলে পরিচিতি পায়।

কথিত আছে, সলিমুল্লাহ চৌধুরীর পিতা বধুই বিশ্বাস ছিলেন নলডাঙ্গা রাজবংশের দেওয়ান। বধুই বিশ্বাসের মৃত্যুর পর সলিমুল্লাহ নলডাঙ্গা রাজবংশের কর্মচারী হিসেবে যথেষ্ট উন্নতি করেন এবং তাকে চৌধুরী উপাধি দেয়া হয়। তিনি মুরারী নামে এক হিন্দু রমণীর প্রেমে মুগ্ধ হয়ে তাকে বিয়ে করেন। পরবর্তী সময়ে ওই নারীর নাম পরিবর্তন করে বিবি আশরাফুন্নেসা রাখা হয়। মিয়ার দালানের প্রধান ফটকে খোদাই করা লেখায় তার কথাসহ নির্মাণের বিষয় উল্লেখ রয়েছে।

তাতে লেখা আছে, ‘শ্রী, শ্রী রাম, মুরারীদহ গ্রাম ধাম, বিবি আশরাফুন্নেসা নাম, কি কহিবা হুরির বাথান। ইন্দ্রের অমরাপুর নবগঙ্গার উত্তর ধার, ৭৫,০০০ টাকায় করিলাম নির্মাণ। এদেশে কাহার সাধ্য বাধিয়া জল মাঝে কমল সমান। কলিকাতার রাজ চন্দ্র রাজ, ১২২৯ সালে শুরু করি কাজ, ১২৩৬ সালে সমাপ্ত দালান।’

বাড়িটি দেখলে মনে হয় এটি নদীগর্ভে দাঁড়িয়ে আছে। চুন-সুরকির সঙ্গে ইটের গাঁথুনিতে এ বাড়ি তৈরি করা হয়েছে। বাড়িটির দেয়াল ২৫ ইঞ্চি পুরু। উত্তর-দক্ষিণে দৈর্ঘ্য প্রায় ৮২ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় ৬৬ ফুট। এ ভবনে ছোট-বড় ১৬টি কক্ষ রয়েছে। দ্বিতীয় তলার ছাদের ওপর রয়েছে একটি চিলেকোঠা। শ্বেতপাথর দিয়ে আচ্ছাদিত এই চিলেকোঠা নামাজ ঘর হিসেবে তৈরি করা হয়েছিল। এ বাড়ির পাশে বেশ পুরনো একাধিক খেজুর গাছ আছে।

স্থানীয়রা জানায়, ১৯৪৭ সালে ভবনটি বিক্রি করা হয় সেলিম চৌধুরী নামের এক ব্যক্তির কাছে। তাই ভবনটিকে স্থানীয়ভাবে কেউ কেউ সেলিম চৌধুরীর বাড়ি বলেও জানে। আগে কেউ বেড়াতে এলে এ দালান দেখতে যেত। কিন্তু ঝোপঝাড়ে ভরে ওঠায় এখন কেউ যেতে চায় না। সংরক্ষণ আর তদারকির অভাবে এর বিভিন্ন অংশ ভেঙে পড়ছে। সরকারিভাবে উদ্যোগ নেয়া গেলে বাড়িটি রক্ষা করা যাবে। একই সঙ্গে এটি হয়ে উঠতে পারে অন্যতম পর্যটন স্পট।

এ ব্যাপারে ঝিনাইদহের জেলা প্রশাসক সরোজ কুমার নাথ বলেন, মিয়ার দালানটি সংরক্ষণের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। আশা করছি দ্রুত কাজ শুরু হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button