ঝিনাইদহের চোখ-
সাকিমা ও সাবিদ সম্পর্কে দুই ভাইবোন। প্রায় সারাটা দিন বাড়ির উঠানে ও আঙিনার ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে তারা দুই ভাই-বোন। তাদের পদচারণা থেমে নেই শুধু নিজের বাড়ির উঠান অব্দি। আশপাশের বাড়িগুলোতেও একইসঙ্গে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এই শিশু দু’টি।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ বড় ঘিঘাটি গ্রামের প্রয়াত আবদুল মুজিদ দম্পতির পরিবারে প্রথমে জন্ম নেয় মেয়ে সাকিমা ও তার চার বছর পরে জন্ম নেয় সাবিদ। গত ২৪শে ফেব্রুয়ারি সংসার ও সন্তানের মায়াজালকে ছিন্ন করে তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে চলে যান। তবুও ছেলে ও মেয়েকে নিজ বুকে আগলে রেখে চলছিলেন তিনি। এরইমধ্যে মার্চ মাসের ২০ তারিখ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা যান আবদুল মুজিদ।
এতে করে তাদের সন্তানরা শুধু এতিমই হয়নি অভিভাবক শূন্যও হয়েছে।
৯ বছরের শিশুকন্যা সাকিমা খাতুন বড় ঘিঘাটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েরর তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। তার ভাই পাঁচ বছরের সাবিদ হোসাইন এ বছরই ঐ একই স্কুলের প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে মাত্র। কীভাবে চলবে এতিম দুই শিশুর লেখাপড়ার খরচ? ভরণ-পোষণের সার্বিক খরচ কে বহন করবে?
বর্তমানে এই দুই এতিম সন্তান তার বড় চাচা আবদুল আজীজের তত্ত্বাবধানে রয়েছে। তিনি জানান, আমার পরিবার ও সন্তানদেরকে নিয়ে বেশ টানাটানির মধ্যেই দিন যায়। এখন আবার বাপ-মা হারা এই দুই সন্তানের সার্বিক খরচ করার ব্যাপারটাও বেশ চাপ হয়ে যাচ্ছে। তবুও সাধ্যমতো চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি তাদেরকে সন্তানের মতো দেখভাল করার। মহান রাব্বুল আলামিন জানেন এই দুই এতিম বাচ্চার ভবিষ্যৎ কি? এখন তারা বায়না ধরেছে বাজারে নিয়ে গিয়ে ঈদের পোশাক, কানের দুল, চুড়ি, টিপ কিনে দেয়ার। তারা এখনো বাবা মা হারানোর ব্যাপারটা বোঝেই না।
এ ব্যাপারে ত্রিলোচনপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ঋতু জানান, এলাকার এই শিশু বাচ্চা দু’টির জীবনে ঘটে যাওয়া ঘটনাটি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক। এত অল্প বয়সে অভিভাবকহীন হয়ে পড়ায় তাদের জীবন চলার পথ অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। সাধ্যমতো ইউনিয়ন পরিষদ ও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে তাদেরকে সাহায্য করার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো।
কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদিয়া জেরিন জানান, শিশু দুটির জীবনের গল্প খুবই কষ্টের। কালীগঞ্জ উপজেলা পরিষদ থেকে তাদের জন্য ঈদ উপহার পোষাক, খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়েছে। বর্তমান পরিবারের সাথে ওদের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা করা হয়েছে।