ইজিবাইকের জটলায় ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে রোগীদের ভোগান্তী
ঝিনাইদহের চোখ-
হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র নিয়ে বের হচ্ছেন রোগীর স্বজনরা। আর সে সময়ই তাদেরকে নিজেদের ইজিবাইকে ওঠাতে ঘিরে ধরছেন চালকরা। এতে অনেকটাই নাস্তানাবুদ স্বজনরা। চিত্রটি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের মূল ভবনের সামনের। এমনিভাবে প্রতিদিনই ইজিবাইকচালকদের নানা হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে সেবা নিতে আসা শত শত মানুষকে।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, প্রতিদিন সকাল থেকে রাত অবধি ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের নতুন ভবন, পুরাতন ভবনসহ হাসপাতাল চত্বরের বিভিন্ন স্থানে যত্রতত্র দাঁড় করিয়ে রাখা হয় ইজিবাইক। জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন সকাল থেকে এসে হাসপাতাল চত্বরে ভিড় করেন তারা। কখনো কখনো দীর্ঘলাইনে দাঁড় করিয়ে ইজিবাইকে যাত্রী উঠানোর চেষ্টা করা হয়।
হাসপাতালে সেবা নিয়ে ফেরার সময় রোগী ও তাদের স্বজনদের ঘিরে ধরেন ইজিবাইকচালকরা। এরপর বাইকে উঠতে না চাইলে চালকরা ওই রোগীর এলাকায় বাড়ি বলে নিজেদের পরিচয় দিয়ে যাত্রী ওঠায়। পরে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করেন।
কিছু কিছু সময় পরিস্থিতি এমন হয় যে, হেঁটে হাসপাতাল ভবনে প্রবেশের জায়গাও থাকে না। অথচ এই হাসপাতালটিতে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে ১২০০ রোগী চিকিৎসাসেবা নিয়ে থাকেন।
অন্যদিকে হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনেও দেদারছে দাঁড় করিয়ে রাখা হয় মোটরসাইকেল। ফলে গুরুতর অস্বুস্থ রোগী, ফায়ার সার্ভিস কিংবা অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশেও বাধা সৃষ্টি হয়।
দীর্ঘদিন ধরে এমন পরিস্থিতি চললেও তা নিরসনে দেখা মেলেনি কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর পদক্ষেপ। ফলে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সেবা নিতে আসা হাজারো মানুষ।
সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়ে সেবা নিয়ে বাড়ি ফেরার সময় ভোগান্তির শিকার সুখিরন বেগম বলেন, আমার মেয়ের সিজার করে ভর্তি রেখেছিলাম চার দিন। পরে বাড়ি ফেরার সময় হাসপাতালের সিঁড়ি দিয়ে নামার পরই ৩/৪ জন ইজিবাইকচালক এসে আমাদের গাড়িতে ওঠেন, আমাদের গাড়িতে ওঠেন বলে মালামাল টানাটানি শুরু করে। আমরা যেতে রাজি না হওয়ায় শেষে তারা বকাবকি শুরু করে দেয়।
জেলার তমালতলা এলাকার রাবেয়া বেগম বলেন, হাসপাতাল থেকে নামার পরই ইজিবাইকচালকরা ঘিরে ধরল। তাদের বললাম আমরা যাব না, কিছুটা পথ হেঁটেই যাব। তবুও তারা সরতে চায় না। এমন পরিবেশ যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে তো হাসপাতালে সেবার পরিবর্তে আমাদের ভোগান্তিটাই বেশি হয়ে যায়।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগে সেবা নিতে আসা রুবেল হোসেন বলেন, গতকাল শনিবার বেলা ১১টার দিকে জরুরি বিভাগে গেলাম রোগী দেখাতে। দেখি জরুরি বিভাগের গেটের দুই পাশে পাঁচটি মোটরসাইকেল রেখ দিয়েছে। আর জায়গা না থাকায় মাঝে মাহিন্দ্র থেকে একটা গুরুতর অসুস্থ রোগীকে নামাতে সময়ক্ষেপণ হচ্ছিল স্বজনদের।
‘বিষয়টা দেখে অনেক কষ্টই পেলাম। কারণ একটা জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে এমন হতে পারে না। এই বিষয়টা শিগগিরই গুরুত্বের সঙ্গে সমাধান করার জন্য কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। তা না হলে সেবার ক্ষেত্রে যে সম্মানটা সদর হাসপাতাল রাখার চেষ্টা করছে, সেখানে সম্মানের পরিবর্তে ভোগান্তিটাই বেশি দাঁড়াবে’, বলেন রুবেল হোসেন।
সদর হাসপাতালের নতুন ভবনের সামনে থেকে ইজিবাইকচালক রায়হান বলেন, হাসপাতালে যাত্রী বেশি পাওয়া যায়। তাই এখানেই আসি। অনেক সময় যাত্রীদের গাড়িতে উঠানোর চেষ্টা করি। তবে তাদের হয়রানি করি না।
আরেক চালক রমেশ বিশ্বাস বলেন, ‘আগে হাসপাতালে এলে এখানকার কিছু মানুষ নিষেধ করত। কিন্তু এখন আর করে না। তবে কিছু ইজিবাইকচালক আছে যারা যাত্রীদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে।’
ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. সৈয়দ রেজাউল ইসলাম বলেন, ইজিবাইকের দাঁড়ানো কিংবা জরুরি বিভাগের সামনের সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।