ঝিনাইদহ পৌরসভা নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিজলের নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা
ঝিনাইদহের চোখ-
পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হলে পরামর্শক কমিটি গঠনের মাধ্যমে জনগণের অংশীদারিত্বমূলক পৌরসভা পরিচালনা করবেন বলে ইশতেহারে ঘোষণা করেছেন স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজল।
আজ বৃহস্পতিবার (৯ জুন) ইশতেহার বিলি করার সময় ঝিনাইদহ পৌরসভাকে তিলোত্তমা নগরী গড়ে তুলতে চান বলে মন্তব্য করেন স্বতন্ত্র এই মেয়র প্রার্থী।
নির্বাচনী ইশতেহারে তিনি উল্লেখ করেন, বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রতিনিধির সমন্বয়ে পরামর্শক কমিটি গঠন করে পৌরবাসীর চাওয়া-পাওয়া অভাব-অভিযোগ শোনার জন্য ত্রৈমাসিক নাগরিক সভা আয়োজন করা হবে। পৌরসভার সবক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা তার প্রধান দায়িত্ব হবে। সমস্যার গুরুত্ব অনুসারে স্বল্প, মধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ করে পৌরসভার ওয়ার্ড পর্যায়ের কার্যপরিধি বৃদ্ধি করা হবে। পৌরসভার উদ্যোগে গুরুত্বপূর্ণ স্থানে হেলথ চেকআপ বুথ স্থাপন করে অসচ্ছল মানুষের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা প্রদান, প্রাথমিক চিকিৎসা সহজলভ্য করতে সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ, হাসপাতালগুলোকে আরো যুগোপযোগী ও আধুনিকায়ন করা, বয়স্কদের জন্য বিশেষ চিকিৎসা সেবা প্রদান, ভেজাল খাদ্য বিক্রয় রোধ এবং মানসম্মত ও নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ, শহরের জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় যত্রতত্র খাবারের দোকানগুলো স্বাস্থ্যসম্মত ফুডকোর্টে রূপান্তর করা, বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ, গ্রাহক পর্যায়ে মাসিক বিল একটা যৌক্তিক পর্যায়ে আনার চেষ্টা করা, নলকূপ বসানোর ক্ষেত্রেও যৌক্তিক সর্বনিম্ন ফি ধার্য করা হবে।
নাগরিক সেবা ও কর, ট্যাক্স না বাড়িয়ে সেবার মান বৃদ্ধি করা, সকল কর বা ফি যৌক্তিক ও সহনীয় পর্যায়ে রাখা, সকল কর বা ফিস অনলাইনে প্রদানের ব্যবস্থা করা, সবক্ষেত্রে বয়স্কদের জন্য সিনিয়র সিটিজেন সার্ভিস চালু করা, বাড়ি তৈরি প্লানের ফি সর্বনিম্ন পর্যায়ে নির্ধারণ করা এবং দ্রুততম সময়ে অনুমোদন দেওয়া, সকলের জন্য সহজ ও ঝামেলামুক্ত সেবা প্রদান, পৌর এলাকায় জননিরাপত্তা ও মাদকমুক্ত পরিবেশ তৈরি করা।
চাঁদাবাজি, মাদক ও সন্ত্রাসমুক্ত নগর গড়ে তোলার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, প্রতিটি সড়ক লেনে পর্যায়ক্রমে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, শহরে পর্যাপ্ত স্ট্রিট লাইট ও নাইটগার্ডের ব্যবস্থা করা, পুলিশের সহযোগিতায় অপরাধপ্রবণ এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো, সকলকে নিয়ে মাদকবিরোধী ও নিরাপত্তা বিষয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা। পরিচ্ছন্ন ঝিনাইদহ গড়ে তুলতে পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা। ই-বর্জ্য ও মেডিকেল বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বিশেষ পরিকল্পনা গ্রহণ করা, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫ টার মধ্যে শহরের আবর্জনা অপসারণ, বিশ্বের উন্নত শহরগুলোর মতো বাড়ি বাড়ি থেকে ময়লা সংগ্রহের ব্যবস্থা করা হবে। সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলার বিকাশ ঘটানো হবে। ওয়ার্ডভিত্তিক বিনোদন কেন্দ্র তৈরির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হবে।
পাঠাগার ও জাদুঘর সমৃদ্ধকরণ, শিশুপার্ক ও বিনোদন কেন্দ্র আধুনিকায়ন করা, পায়ে হাঁটার উপযোগী পথ তৈরি করা, কর্মমুখী শিক্ষা ও দক্ষ জনশক্তি তৈরি করে শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ কার্যক্রম গ্রহণ করা হবে। পৌরসভার অধীনস্থ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামোগত উন্নয়ন করা, মেধাবী ও দরিদ্র শিক্ষার্থীদের জন্য পৌর শিক্ষাবৃত্তি প্রদান, বেকার যুবক-যুবতীদের কম্পিউটার, ট্যুরিজম, ইংরেজি শিক্ষাসহ কর্মমুখী ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে কর্মসংস্থান করা, শিক্ষিত তরুণদের জন্য ফ্রি আইসিটি, ইংরেজি প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ফ্রিল্যান্সিং কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা, অবসরপ্রাপ্ত অসচ্ছল শিক্ষকদের জন্য ভাতা চালু করা, তথ্যপ্রযুক্তি ও ডিজিটালাইজেশনের উন্নয়ন ঘটানো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে নিরাপদ ওয়াই-ফাই ও ইন্টারনেট জোন স্থাপন করা, ইন্টারনেটের অপব্যবহার রোধে সচেতনতা তৈরি করা, পৌরসভার বিভিন্ন নাগরিক সেবা অনলাইননির্ভর করার উদ্যোগ নেওয়া।
নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীবান্ধব ঝিনাইদহ গড়ে তোলা, নারী উন্নয়ন ও অধিকার প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করা, পৌরসভার উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো, নারীবান্ধব কর্মক্ষেত্র গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া, পৌরবাসী যেন স্বাচ্ছন্দ্যে চলাফেরা করতে পারেন সে ব্যবস্থা গড়ে তেলা হবে।
সবক্ষেত্রে প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা চালু করা, পৌরসভার হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ও শিশুদের বিনা খরচে চিকিৎসা নিশ্চিত করা, চিত্ত-বিনোদন ও পর্যটন ব্যবস্থার উন্নয়ন, পৌরসভায় খেলাধুলার মাঠ, উন্মুক্ত স্থান ইত্যাদি বাড়ানো, শহরে বিনোদন, আমোদ-প্রমোদ, চিত্ত-বিনোদন ব্যবস্থায় জোর দেওয়া, ঝিনাইদহ আধুনিক পৌর শিশুপার্ক ও ইকো ওয়াটার পার্ক নির্মাণ করা, নবগঙ্গা নদী সংস্কার ও দূষণমুক্ত করা, সৌন্দর্যবর্ধনের পাশাপাশি নদী কেন্দ্রিক পর্যটন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা, সড়ক দ্বীপ, রোড ডিভাইডার ও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিবেশবান্ধব সবুজবেষ্টনী গড়ে তোলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের জন্য পর্যায়ক্রমে প্রতিটি ওয়ার্ডে কমিউনিটি সেন্টার স্থাপন করা, সৌন্দর্যবর্ধনে সড়ক অবকাঠামো দৃষ্টিনন্দন করা, রাস্তাঘাট ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, পয়ঃনিষ্কাশন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উন্নয়ন করা, সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, গুরুত্ব অনুসারে ওয়ার্ড পর্যায়ে সড়কগুলো উন্নয়ন করা, হাট-বাজার, ফুটপাথ ও হকার ব্যবস্থাপনায় কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ, যানজট নিরসন ও যানবাহন চলাচলে ট্রাফিক ব্যবস্থার উন্নয়ন করা, রাস্তায় যত্রতত্র পার্কিং ঠেকাতে পর্যাপ্ত পার্কিং প্লেস তৈরি করা, রিকসা, ইজিবাইক, ভ্যান-রিকসা চলাচল নিয়মের মধ্যে আনা এবং চালকদের কর্মমুখী শিক্ষা প্রদানপূর্বক প্রাতিষ্ঠানিক কর্মসংস্থান করা, ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশিং চালু করা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানে যাত্রীছাউনি ও বিশ্রামাগার নির্মাণ করা, পৌর বাসটার্মিনাল আধুনিকায়ন করে সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা, হাট-বাজার, ফুটপাথ ও হকারদের কাছ থেকে চাঁদাবাজি রোধ করা, হাট-বাজারের অবৈধ সিন্ডিকেট ভেঙে সরাসরি কৃষকের পণ্য বিক্রির সুযোগ সৃষ্টি করা হবে বলে ইশতেহারে উল্লেখ করা হয়।