শেষ মুহূর্তে ঝিনাইদহ কামারপল্লীতে বেড়েছে ব্যস্ততা
বশির আহমেদ, ঝিনাইদহের চোখ-
কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার কামারপল্লীগুলোতে টুংটাং শব্দ সাথে শেষ মুহূর্তে বেড়েছে ব্যস্ততা। আগে এমন সময় ছিলো দম ফেলানোর ফুসরত পাওয়া যেত না। অপরদিকে কাঁচামালের দাম বেড়ে গেলেও বাড়তি দামে তৈরি পণ্য বিক্রি করতে না পারায় পারিশ্রমিকের ওপরে প্রভাব পড়ছে বলে দাবি কামারদের। তারপরও কোরবানির ঈদকে ঘিরে সামনের সময়টা ভালো যাবে এমনটাই প্রত্যাশা কামারীদের।
ঝিনাইদহ শহরের নতুন হাটখোলা এলাকার কামারপট্টির প্রধান শ্রমিক দিলু কর্মকার জানান, গত বছর থেকে এ বছর কয়লা, লোহা, শান দেওয়ার পাথরসহ সব কাঁচামালের দাম বেড়েছে। যদিও তাদের পারিশ্রমিকের বা মজুরির কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। কাঁচামালের দাম বাড়লেও তৈরি পণ্য সেই অনুপাতে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা যাচ্ছে না। ফলে পারিশ্রমিকের ওপরই এসে প্রভাব পড়ছে।
তিনি আরো জানান, এক কথায় কোরবানির এ সময়টায় কামারপল্লীর পুরোনো সেই জৌলুস এখন আর নেই। ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার শহর গ্রাম মিলে চার থেকে পাঁচ হাজার কর্মকার বাপদাদার এই পেশা আকরে ধরে আছি।
অপরদিকে শহরের নতুন হাটখোলা এলাকার কিশোর কর্মকার, কোমল কর্মকার ও সুশান্ত কর্মকার নামের ব্যবসায়ীরা বলেন, বহু বছর ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িয়ে আছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অনেকেই ব্যবসা পরিবর্তন করে ফেলেছেন। কিন্তু ভিন্ন কিছু করার অভিজ্ঞতা না থাকায় কামারের পেশায়ই পড়ে রয়েছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সবকিছুর দাম বেড়েছে, মানও বেড়েছে। তবে আমাদের এ কাজে জড়িতদের মান বাড়েনি।
ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বিষয়খালী বাজারের তপন কর্মকার বলেন, এখন কোরবানির নতুন ছুরি, চাপাতি, দায়ের কদর সব থেকে বেশি। তবে শহর অঞ্চলের কিছু কিছু যায়গায় চাহিদা বেড়েছে। যারা আমাদের কদর বোঝেন, তাদের কাছে আমাদের তৈরি মালামালের কম-বেশি চাহিদা সারাবছরই রয়েছে। তবে কোরবানির ঈদে প্রতিবছরের মতো চাহিদার কথা মাথায় রেখে আগে থেকেই এসব জিনিস বানিয়ে রাখা হচ্ছে। আবার আমাদের কাছ থেকে পাইকার ও খুচরা ক্রেতারাও তাদের চাহিদা অনুযায়ী পণ্য তৈরি করে নিয়ে যাচ্ছেন। তবে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায়, নতুন করে কেনার থেকে এখন পুরাতন দা-বটি ধার বা শান দিয়ে নেওয়ার কাজ হিসেবে বেশি হয়ে থাকে।
যদিও উপজেলা পর্যায়ের কামাররা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা জানান, এখন খাওয়ার সময় পর্যন্ত পাচ্ছিনা।যেমন গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আমরা কাজ করেছি।
সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ও বাজার ঘুরে দেখা যায়, ঝিনাইদহ জেলার ছয় উপজেলার শহর গ্রাম মিলে ২ থেকে আড়াই হাজার কর্মকার এই পেশায় যুক্ত আছেন।
শ্রমিক কোমল কর্মকার জানান, নতুন একটি চাপাতি আকার ভেদে ৬’শ থেকে ৯’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। গরু জবাই দেয়া নতুন একটি ছুরি ৫’শ থেকে ৮’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। নতুন দা ৫’শ থেকে ৭’শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি করছি। তাছাড়া পুরাতন ছুরি, দা, বটি পুড়াতে ১’শ টাকা থেকে ১’শ ৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছি। আর একটি ডাসার মজুরি ২’শ থেকে ২’শ ৫০ টাকা পর্যন্ত মজুরি নিচ্ছি।
দিনু কর্মকার জানান, কোরবানির ঈদে একটু কাজ থাকায় মোটামুটি ভালো লাগছে।