আষাঢ় শেষ হলেও পর্যাপ্ত বৃষ্টি নেই ।। ঝিনাইদহে নদনদী পানি শুন্য
মনজুর আলম, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহের চোখ-
আষাঢ় মাসের শেষ। শ্রাবণ মাসেও বৃষ্টির দেখা নেই। পচন্ড ক্ষরা আর দাবদাহে অনাবৃষ্টির কারণে ঝিনাইদহের মাঠ-ঘাট, বিল-ঝিল, জলাশয়, পুকুর ও নদ-নদীর পানি শুকিয়ে গেছে। অন্যদিকে দখলদারদের আগ্রাসন, পলি জমে ভরাট হওয়াসহ নানা কারণে ঝিনাইদহের নদ-নদীর অস্তিত্ব এখন বিলীন হওয়ার পথে। নদী-নালার তলদেশ শুকিয়ে যাওয়ায় এসব নদীর বুকে এখন ধান, বিভিন্ন সবজি চাষ করছেন এলাকার কৃষক। দেখে মনে হয় এ যেন বিস্তীর্ণ ফসলি ক্ষেত। পানির উৎস বলতে এখন বৃষ্টিই একমাত্র ভরসা। এভাবে চলতে থাকলে এক সময় পরিবেশ ও জীব-বৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হবে বলছেন পরিবেশবাদীরা।
দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলা ঝিনাইদহে রয়েছে ছয় উপজেলা। এগুলো হলো শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, হরিণাকুন্ডু ও ঝিনাইদহ সদর। জেলার ভেতর দিয়ে নবগঙ্গা, কুমার, বেগবতি, চিত্রা, কপোতাক্ষ, গড়াইসহ বেশকিছু নদনদী প্রবাহিত। তবে একমাত্র গড়াই বাদে সবই এখন মৃত। জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা ১২টি। এসব নদ-নদীর দৈর্ঘ্য ৪৮৪.৯০ কিলোমিটার। এসব নদী এক সময় প্রমত্তারূপে নদীপাড়ের মানুষদের কৃষিকাজসহ জীবন-জীবিকার প্রধান মাধ্যম ছিল।
চলাচল করত বড় বড় নৌকা ও জাহাজ। কলকাতার সঙ্গে রাজবাড়ী, ফরিদপুর ও রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার বাণিজ্যের অন্যতম কেন্দ্র বিন্দু ছিল এই অঞ্চলের জলপথ। কিন্তু কালের বিবর্তনে পাল্টে গেছে সে চিত্র, এখন আর নদীতে চলে না মালবাহী নৌকা। বর্ষা মৌসুমে কিছুটা পানি থাকলেও শুষ্ক মৌসুম শুরুতেই শুকিয়ে যায় এসব নদ-নদী। ফলে একদিকে এখানকার জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়েছে।
এছাড়া এক সময়ের প্রবাহমান নদীর বুকে স্থানীয়রা এখন যে যার মত দখল করে চাষ করছে। এক শ্রেণির প্রভাবশালী মহল প্রতিনিয়তই নদী পাড়ে অবৈধ স্থাপনা তৈরি করে সংকুচিত করে ফেলছে নদীর প্রশস্ততা। এখানেই শেষ না, ময়লা-আবর্জনা ফেলে দূষিত করছে নদীর পানি। এতে জীব-বৈচিত্র্য যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তেমনি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশ। ঝিনাইদহ শহরের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী। এই নদীকে ঘিরেই জেলার নামকরণ হয়েছিল। কিন্তু খননের অভাবে অধিকাংশ জায়গা শুকিয়ে গেছে, কোথাও কিছুটা পানি থাকলেও দু-ধার দখলে অর্ধেকেরও কমে নেমে এসেছে প্রশস্ততা। অথচ এই নদীর প্রস্ততা ছিল এক সময় ৩০০ মিটার। অন্যদিকে, চিত্রা নদীর কালীগঞ্জ উপজেলার মধূগঞ্জ বাজার এলাকা, বেগবতী নদীর বিষয়খালী বাজার অংশ, কুমার নদের গাড়াগঞ্জ অংশসহ প্রায় প্রতিটি নদীর ধারেই পড়েছে দখলদারদের থাবা। বিগত সময়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে জেলা শহরসংলগ্ন নবগঙ্গা নদীর কিছু অংশ উচ্ছেদ করা হলেও কয়েকদিন পরেই অদৃশ্য কারণে থেমে যায় সে কার্যক্রম। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তালিকা অনুসারে এখন বিভিন্ন নদ-নদীতে ৬৯টি অবৈধ স্থাপনা রয়েছে তবে বাস্তবে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।
এছাড়া ১৯৯৩-১৯৯৪ অর্থ বছরের পর আর খনন করা হয়নি বিদ্যমান নদ-নদীর কোনো অংশ। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বাজার গোপালপুর গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, দুই বছর আগে দেখলাম কিছু লোক এসে চিত্র নদী মাপছে। তখন তারা বলেছিল খনন করা হবে। এরপরে আর কোনো দিন তাদের দেখলাম না। অপর বাসিন্দা বাবলু মন্ডল জানান, নদী বুঝে গেছে। মানুষ যে যার মতো পারছে সীমানা মেপে দখল করে খাচ্ছে। কেউ ধান লাগাচ্ছে, কেউ অন্য চাষ করছে।
ঝিনাইদহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসাইন জানান, নদ-নদীগুলোর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট খননের বিষয়ে বোর্ডে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। সেগুলো অনুমোদন হলেই আমাদের কার্যক্রম শুরু হবে। আর দখলদার উচ্ছেদ কার্যক্রম সামনের দিনগুলোতে পর্যায়ক্রমে শুরু করা হবে।#