কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহসহ পশ্চিমের তিন জেলায় ফুলের দরপতন

ঝিনাইদহের চোখ-

পশ্চিমের তিন জেলায় ফুলের দর পতনে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। খেত থেকে ফুল তুলে বাজারগুলোতে বিক্রি করে চাষিদের লাভ থাকছে না। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, ফুল দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় দাম কমেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর আঞ্চলিক অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার যশোর জেলায় ৬৩৬ হেক্টরে, ঝিনাইদহ জেলায় ১৫৫ হেক্টরে ও চুয়াডাঙ্গা জেলায় ২৭ হেক্টরে ফুল চাষ হয়েছে। বিগত শতকে আশির দশকের শুরুতে যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলার গদখালী এলাকায় প্রথম বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ শুরু হয়। পানিসরা গ্রামের চাষি শের অলি ফুল চাষের পথিকৃত। ফুলের চাহিদা থাকায় বাজারের বিস্তৃতি লাভ করে। আর তখন ফুলের দাম ভালো থাকায় চাষে লাভ বাড়তে থাকত। প্রথমে ঝিকরগাছা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ফুলের চাষ ছড়িয়ে পড়ে।

এরপর ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা জেলাতে ফুল চাষ শুরু হয়। প্রথম দিকে রজনীগন্ধ্যার চাষ হতো। আর থেকে কিছু ঝোপা ঝাউগাছ। লোকে বাড়ির সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য ঝোপা ঝাউগাছ লাগাত। তারপর শুরু হয় গাদা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, জারবেরা ফুলের চাষ। ফুলের চাহিদা বাড়লেও চাহিদা পরনির্ভর। ইংরেজি নববর্ষ, বিশ্ব ভালোবাসা দিবস, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, বাংলা নববর্ষ ও বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা ব্যাপক বৃদ্ধি পায়। এ সব পর্বের আগে চাষিরা পরিচর্যা করে ভাল মানের ফুল বাজারে তোলে। আর দামও ভাল পায়।

তবে চাষিরা বলেন, বর্তমানে সারা বছরই ফুল কেনাবেচা হয়। বিয়ে ও জন্ম দিনের অনুষ্ঠানের জন্য মানুষ ফুল কিনে। জেলা উপজেলা শহরে ফুলের দোকান গড়ে উঠেছে। ছোট খাটো অনুষ্ঠানেও লোকে ফুল উপহার দেয়। তবে তাতে ব্যাপক চাহিদার সৃষ্টি হয় না।

যশোরের গদখালী ফুল বাজারে সোমবার এ প্রতিনিধির কথা হয় ফুল চাষিদের সাথে। গদখালী সৈয়দপাড়ার ফুল চাষি আতর আলি জানান, তিনি ২ বিঘা জমিতে রজনীগন্ধা ও গাদা ফুলের চাষ করেছেন। কিন্তু বাজারে প্রতি ঝোপা (এক হাজারটি) গাদা ফুল বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। আর রজনীগন্ধ্যা প্রতি স্টিক এক টাকা থেকে পাঁচ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। গেলাপ বিক্রি হচ্ছে প্রতি শ ৫০ টাকা থেকে ২০০ টাকা পর্যন্ত দরে। জারবেরা প্রতি পিস পাঁচ টাকা থেকে সাত টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পটুয়াপাড়ার ফুলচাষি প্রশান্ত শীল জানান, দুই বিঘা জমিতে ফুল চাষ করেছেন। বাজার পড়ে যাওয়ায় তাদের লোকসান হচ্ছে। করোনাকালীন সময়ে ফুলের বাজারে ধস নেমেছিল। মধ্যে কিছু দিনের জন্য দাম বেড়েছিল। আবার দাম পড়ে গেছে। বাংলাদেশ ফুলচাষি সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, বিভিন্ন পর্বে ফুলের মূল্য বৃদ্ধি পেলে চাষিরা লাভবান হয়। তারপর দাম পড়ে যায়। তিনি ফুল রপ্তানির উদ্যোগ নেওয়ার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে কৃত্রিম ফুল তৈরি ও বিপণন বন্ধের দাবি করেন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের যশোর অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক ড. এখলাস উদ্দিন বলেন, ফুল দ্রুত পচনশীল কৃষিপণ্য। চাহিদার বেশি উৎপাদন হলে দাম কমে যায়। এতে চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বাজারের ব্যাপারে তাদের কিছু করণীয় নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button