কালীগঞ্জে বিশ্বজিৎ ব্যতিক্রমী মাছ চাষে স্বাবলম্বী হতে চায়
ফিরোজ আহম্মেদ, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহের চোখ-
কথা হয় বিশ্বজিতের সাথে। জানান, প্রথম দিকে বাড়িতে কয়েকটি ড্রামে এই মাছ চাষ শুরু করেন। এরপর চলতি বছরের মে মাসে নিজ বাড়ির পাশে লীজ নেওয়া একটি পুকুরে বিদেশী জাতের রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। পুকুরে ৭ প্রজাতির মাছ রয়েছে। মাছগুলো অনেকে অর্নামেন্ট ফিসও বলে থাকেন।
বিশ্বজিৎ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার মালিয়াট ইউনিয়নের পাঁচকাহুনিয়া গ্রামের শিবু মন্ডলের ছেলে। গত এক মাসে প্রায় ২০ হাজার টাকা মাছ বিক্রি করেছেন। পুকুরে এখনো লক্ষাধিক টাকার মাছ রয়েছে। বেকার জীবনের অভিশাপ কাটিয়ে বিশ্বজিৎ এখন রঙিন মাছে রঙিন স্বপ্ন দেখছেন। বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ অফিস আদালতের এ্যাকুউরিয়ামের মাছ চাষ করেন যারা তার কাছ থেকে কিনে নিয়ে যাচ্ছেন নিয়মিত।
জানা যায়, বিশ্বজিৎ রাজধানীর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স শেষ করে কর্মজীবন শুরু করেন একটি বেসরকারী কোম্পানীতে। সিলেটে কর্মরত অবস্থায় বিয়ে করেন। বিয়ের ২১ দিনের মাথায় ২০১২ সালে ব্রেইন স্ট্রোক হয়। এরপর শরীরের ডানপাশ অবস হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে চাকরী ছেড়ে বাড়িতে চলে আসেন। দুইবছর বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেননি। তিনভাই এক বোনের সবার ছোট বিশ্বজিৎ। ভাইদের দেওয়া সহযোগীতায় চলতে থাকে চিকিৎসা। এখনো পুরোপুরি সুস্থ্য হননি। কিছুটা সুস্থ্য হলে একটি টোং দোকান দেন কিন্তু সেখান থেকে উপার্জন ভালো না হওয়ায় রঙিন মাছ চাষ শুরু করেন। অল্প পুঁজিতে স্বল্প সময়ে কিছু একটা করার কথা ভাবছিলেন।
বিশ্বজিৎ জানায়, তার বাবা একজন কৃষক। মাঠে তাদের চার বিঘা চাষযোগ্য জমি নেই। তার আরো দুই ভাই ও এক বোন রয়েছে। অভাবের সংসার হলেও বাবা আমাদের লেখাপড়াা শেখাতে কার্পন্য করেননি। আমি মাস্টার্স শেষ করেছি। চাকরীও শুরু করেছিলাম। কিন্তু স্ট্রোক আমার জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে আসে। কিছুটা সুস্থ্য হলে চলতি বছরের মে মাসে যশোরের চৌগাাছা মাছ ব্যবসায়ী সালমান সর্দারের নিকট থেকে গাপ্পি মলি, গোল্ডফিস, কমেন্ট, রেডটিকা, কইকাপ এবং প্লাটি জাতের মাছ কিনে আনি। এ পর্যন্ত পরিচর্যা ও মাছ ক্রয় বাবদ প্রায় ১৫ হাজার টাকা বিনিয়োগ করেছি। এরমধ্যে মা মাছগুলো ডিম ছেড়ে রেনু পোনার জন্ম দিয়েছে। গত একমাসে প্রায় ২০ হাজার টাকার মাাছ বিক্রি করেছেন। এখনও যে পরিমাণের মাছ রয়েছে তা কমপক্ষে এক লাখ টাকা হবে।
মালিয়াট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আজিজুর রহমাান খা জানান, সৌখিন মানুষেরা যদি তার কাছ থেকে মাছ কেনেন তাহলে বিশ্বজিৎ বেচে থাকার লড়াইয়ে সফল হবে।
কালীগঞ্জ উপজেলা মৎস কর্মকর্তা মোঃ হাসান সাজ্জাদ জানান, তার মাছ চাষ পরিদর্শন করেছি। এলাকায় এ মাছ চাষ অনেকটা নতুন হওয়ায় মৎস অফিসের পক্ষ থেকে তাকে সহযোাগীতার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।