ঝিনাইদহ গণমাধ্যমের জয় ।। ৩২ মাস কারাবন্দির মিলল পরিচয় ।। হস্তান্তর
ঝিনাইদহের চোখ-
কথা বলতে পারেননা। মুখে পাতলা দাড়ি। বয়স অনুমান ৪৪ বছর। পুলিশ তাকে একটি জিডির সুত্র ধরে রাস্তা থেকে আটক করে। তাকে পাঠানো হয় কারাগারে। কেটে যায় ২ বছর ৮ মাস। কেও তার খোঁজ নিতে আসেনা। পরিচয়হীন থেকে যায় সে। তাকে নিয়ে সব সময় টেনশনে ছিলেন কারা কর্তৃপক্ষ। অবশেষে গণমাধ্যমের কল্যাণে মিলেছে তার পরিচয়। আজ সোমবার বিকেলে ঝিনাইদহ জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে তাকে।
এসময় উপস্থিত ছিলেন জেল সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন, জেলার মোঃ রফিকুল ইসলাম ডেপুটি জেলার মোঃ সাইফুল ইসলাম, এনটিভি’র স্টাফ রির্পোটার ও জেলা প্রেসক্লাব সভাপতি মিজানুর রহমান, সাধারণ সম্পাদ শেখ সেলিম (চ্যানেল আই), সাংগঠনিক সম্পাদক আহম্মেদ নাসিম আনসারী (যমুনা টিভি ও ঢাকা মেইল), দপ্তর সম্পাদক আব্দুল্লাহ আল মামুন ( ঢাকা পোষ্ট) সহ সংশ্লিষ্টারা।
জেলা কারাগারের সুপার মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, নীলফামারী জেলার সদর উপজেলার দক্ষিণ চাওড়া গ্রামের যতিন্দ্র নাথ রায় ও শুভারানীর বড় ছেলে মিনাল চন্দ্র রায়। জন্ম থেকে বুদ্ধি প্রতিবন্ধি সে। বয়স বাড়ার সাথে তার শরীরের গঠনের পরির্তন হতে থাকে। হয়ে উঠেন তরতাজা যুবক। কথা বলতে পারেনা। মা মারা যান ২০০৭ সালে। বাবা আরেকটি বিয়ে করে অন্যত্র ঘর বেধেছেন। মিনালের ছোট ভাই ভবেশ চন্দ্র রায়। সেও প্রতিবন্ধি। মামার কাছে আশ্রয় হয়েছিল তাদের। ৮ বছর আগে হঠাৎ একদিন বাড়ি থেকে হারিয়ে যায় মিনাল। সন্ধান করার কেও তাকে না তার। ভবঘুরে হয়ে এখানে সেখানে ঘুরতে থাকে সে। ২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর ঝিনাইদহ সদর উপজেলার নগরবাথান এলাকা থেকে সন্দেহে পরিচয়হীন হিসেবে মিনালকে আটক করে পুলিশ। এরপর ঝিনাইদহ সদর থানার একটি জিডির সুত্র ধরে আদালতে পাঠানো হয়ে জেলা কারাগারে পাঠানো হয় তাকে। কিছুতেই পরিচয় মিলছিলনা তার। অবশেষে পরিচয় মিলেছে তার। তিনি আরো জানান কারা কর্তৃপক্ষ মানবিক বিষয়টি ঝিনাইদহের অতিরিক্ত চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের নজর আনেন। তিনি (বিচারক) স্বউদ্যোগে লোকটির আসল ঠিকানা খুঁজে বের করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেন।
বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রচার করা হয়। অবশেষে পরিচয় মিলে যায় ওই ব্যক্তির। পরিবারের দেওয়া তথ্য মতে দীর্ঘ দিন মানসিক প্রতিবন্ধী মিনালের জন্ম (নিবন্ধন সুত্রে) ১৯৮১ সালের ১১আগষ্ট।
অবশেষে পরিচয় মিলে যায় তার। মিনালকে মামা শ্রী চিরেন্দ্র নাথ রায়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। মিনালকে পেয়ে খুশি এলাকার মানুষ। তারাও এসেছিলেন ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে। তাদের মধ্যে মোঃ নুরুল ইসলাম ছিলেন। তিনি বলেন, মিনালকে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আদালত গণমাধ্যম এবং কারাকতৃপক্ষের ভুমিকার কথা মনে রাখবেন তারা। আজ সোমবার বিকেলে কারারক্ষিরা অশ্রুসজল চোখে বিদায় জানান মিনালকে। কথা বলতে না পারলেও মাথা নেড়ে হাসি দিয়ে ভালবাসার জবাব দিয়েছেন মিনাল। শেষ পর্যন্ত মিনাল বাড়ি ফিরে গেলো এতেই গণমাধ্যম কর্মিদের আনন্দ ধরে না। কারা কর্তৃপক্ষে জীপে করে বাড়ি স্থানীয় বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত পৌছিয়ে দেওয়া হয় তাকে।
বিদায় বেলায় কারাগারের ৫টা বাজার ঘন্টা ঢং ঢং শব্দে বেঁজে উঠে। তাকে নিতে এসেছিলেন মামা ছাড়াও এলাকার অনেকে। মিনালকে বিদায় দেওয়ার সময় কারারক্ষিরা বার বার মিনালকে ছুয়ে দেখেছে। কত বন্দি আসে আর যায়। কিন্তু বুদ্ধি প্রতিবন্ধি মিনাল ছিল ব্যতিক্রম।