কালীগঞ্জক্যাম্পাস

শেষ দিনে সবাইকে কাঁদিয়ে বিদায় নিলেন কালীগঞ্জের রতন স্যার

ফিরোজ আহম্মেদ, কালীগঞ্জ, ঝিনাইদহ চোখ-
সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার ধ্যান জ্ঞান একটায় কমলমতি শিশুদের মধ্যে কিভাবে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবেন। মনে মানষে আপাদ মস্তক ছিলেন একজন আলোকিত শিক্ষক। জীবনের ৩৫ বছর তিনি দেশের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞাণের আলো ছড়িয়েছেন। বৃহস্পতিবার তার কর্মজীবনের শেষ দিন। কমলমতি শিশুদের কথা মনে করে বার বার কেঁদে দিচ্ছেন। তার কাদছে কমলমতি শিক্ষার্থীরাও । মহান এই শিক্ষকের নাম রতন কুমার রায়। তিনি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার রায়গ্রাম ইউনিয়নের মেগুরখিদ্দা গ্রামের মৃত তারা পদ রায়ের মেজ ছেলে। তিনি সর্বশেষ কালীগঞ্জ উপজেলার গোমরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ছিলেন। রতম কুমার রায় ১৯৬৩ সালের ১১ নভেম্বর এই গ্রামের সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহন করেন। লেখাপড়া শেষ করে অন্য পেশায় যোগ দেওয়ার সুযোগ থাকলেও শিক্ষানুরাগি পরিবারের ছেলে হওয়ায় শিক্ষকতা পেশা বেছে নেন।

তার বড় ভাই নরেদ্র নাথ রায়ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। সেজ ভাই যশোর সিটি কলেজের বাংলার শিক্ষক এবং ছোাট ভাই যশোর পিটিআই এর ইনসট্রাক্টর। একমাত্র বোন সুরধ্বনী গৃহিনী। পরিবারের সব ভাই শিক্ষাকতা পেশায় নিয়োজিত।

রতম কুমার রায় জানান, আমি যেখানে গিয়েছে বাচ্চাদের নিজের সন্তানের মত দেখেছি। সরকারের দেওয়া কোন দ্বায়িত্বকে ছোট করে দেখিনি। অর্পিত সব দ্বায়িত্ব সঠিক সময়ে সঠিকভাবে পালন করা চেষ্টা করেছি। তাদের সন্তানের মত করে শিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। আমি ঘুমের মধ্যেও শিশুদের পড়ানোর কাজ করতাম। ওরাই ছিল আমার জীবনের হাসি কান্না আর আনন্দের উপকরণ। ওদের নিয়ে আমার দিনের শুরু আর রাতের শেষ হত। ওদের সাথে আমার আর দেখা হবে বলে কেঁদে ফেলেন।

গোমরাইল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক নার্গিস সুলতানা প্রিয় শিক্ষকের বিদায়ের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কন্ঠে বলেন, আমার জীবনে শিক্ষা শুরু হয়েছে এই স্যারের হাতে। এখন স্যারের সাথে শিক্ষকতা করছি। তিনি ছিলেন আমার পিতার মত। তার বিদায় আমাদের অনেক কষ্ট দিচ্ছে।

উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ মাজেদুর রহমান জানান, আমি অনেকবার তার বিদ্যালয় পরিদর্শনে গিয়েছি। কখনো তাকে অনুপস্থিত পায়িনি। কোন দ্বায়িত্ব দিলে সঠিক সময়ে সম্পন্ন করেছে। এছাড়া সে সর্বশেষ বিদ্যালয়টি সাজিয়ে গুছিয়ে শিক্ষাবান্ধব পরিবেশ তৈরি করেছে, যা অন্য দশটি বিদ্যালয়ে নেই।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button