ঝিনাইদহের ফুলে বাংলাদেশ জয়
ঝিনাইদহ চোখ-
বাঙালী জাতির অহংকার ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। পুরো দেশে ফুল দিয়ে জানাবে জাতির সূর্য সন্তানদের সম্মান ও ভালোবাসা। তাইতো মহান বিজয় দিবসে ফুলের বাজার ধরতে ব্যস্ত সময় পার করছেন ঝিনাইদহের ফুলচাষীরা। চলছে ফুল চাষীদের শেষ মুহুর্তের প্রস্তুতি। দিবসটি উপলক্ষে ফুল বিক্রি করে সারা বছরের লাভ লোকসানের হিসাব কষবেন তারা।
সরোজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজারে ফুল বিপণন কেন্দ্রে হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুল ক্রয় বিক্রয়ে মহাব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যবসায়ী ও ফুলচাষিরা। গাড়িতে করে ফুল গুলো আনতেই বিক্রয় হয়ে যাচ্ছে রকমভেদে ১২০-২০০ (ঝুপ্পাা) টাকা দরে। আবার গ্রামের মাঠে গিয়ে দেয়া যায়, গাঁদা চন্দ্রমল্লিকাসহ নানা রঙের ফুল ও তার গন্ধে মাতোয়ারা চারপাশ। রংবেরং এর ফুলে মাঠগুলো সেজেছে নতুন সাজেকমলা-হলুদ গাঁদা ও চন্দ্রমল্লিকার চাহিদা রয়েছে সারা দেশ জুড়ে।
জেলা কৃষি বিভাগের দেওয়া তথ্যে মতে জানা যায়, বিজয় দিবসে ফুলের চাহিদা বেশি থাকে তাই দাম ভালো পাওয়ার আশা করছেন চাষিরা। রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হবে ঝিনাইদহের ফুল। দাম ভালো পেলে গত বছরের মত এবারও লাভের মুখ দেখবেন এমনটি আশা করছেন কৃষি বিভাগ। সিজেন শুরু হলে গাঁদা ফুলের ঝুপ্পা কয়েকদিন আগেও ছিল ৫০-৬০ টাকা এখন তা বিক্রি হচ্ছে ১২০-২০০ টাকায়। সামনে আরো বাড়বে বলে জানান তারা। আরো জানা যায়, খুলনা বিভাগের ১০ জেলার মধ্যে ঝিনাইদহ জেলাতে সবচেয়ে বেশী উৎপাদিত হয় গাঁদা ফুল। বিজয় দিবসকে ঘিরে লাভের আশায় স্বপ্ন বুনছে জেলার প্রায় ১০ হাজারেরও বেশী ফুল চাষী। এবারে শুধু বিজয় দিবসকে সামনে রেখে অর্ধশত কোটি টাকার ফুল বিক্রি হবে বলে মনে করেন কৃষকেরা।
গান্না এলাকার ফুল চাষী মোঃ মারুফ হোসেন জানান, গতবছর ফুল চাষ করে অনেক লাভবান হয়েছেন। এবছর ফুলের বাজার অনেক কম। তবে ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে ভালো বাজার পাবেন বলে আশা করছেন। কিছু বিশেষ দিনে ফুলের বাজার বাড়ে। তবে গতবছরের তুলনায় এবছর উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হওয়ায় লাভের পরিমাণ কম হবে। গত বছর যেখানে গাঁদা ফুল ৭’শ থেকে ৮’শ টাকা ঝুপ্পা বিক্রয় করেছেন এছাড়ও চন্দ্রমল্লিকা বিক্রয় করা হচ্ছে ১ থেকে ৩ টাকা করে। আরো জানান, বিভিন্ন সময়ে হঠাৎ করেই গাড়ি চলাচলে ধর্মঘট, সম্মেলন, অবরোধের কারণে গাড়ি বন্ধ থাকায় সঠিক সময়ে ফুলগুলো বাজার বিক্রয় করা সম্ভব হয় না। তারপরও কিছুটা লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি।
গান্না বাজার ফুল বিপণন কেন্দ্রের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম জানান, গতবছর ফুলের বাজার ভালো দেখে এবছর নতুন করে অনেক চাষি ফুল চাষ করছেন। ঝিনাইদহে যদি ফুল সংরক্ষণ কেন্দ্র (কোল্ডষ্টোরেজ) থাকতো তাহলে দাম কমের সময় সেখানে ফুল গুলো রাখার পর দাম বাড়লে বিক্রয় করতে পারতো।
ঝিনাইদহ জেলা ফুলচাষী সমিতির সভাপতি জামির হোসেন বলেন, ঝিনাইদহ জেলাতে বিভিন্ন ফুল বিপণন কেন্দ্রের তথ্য অনুযায়ী গত সিজনে ১শত ৫০ কোটি টাকার টার্গেট ছিলো সেখানে ১শত কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হয়েছে। এবছর শুধু ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে ৭০ থেকে ১০০ কোটি টাকার টার্গেট রয়েছে। ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, জারবেরা ও গোলাপ ফুল বেশি বিক্রয় হয়। বর্তমানে বাসন্তি কালারের গাঁদা ফুল ১৬০ থেকে ২০০ টাকা, লাল গাঁদা এক ঝুপা ১৩০ টাকা বিক্রয় হচ্ছে। চন্দ্রমল্লিকা ১টাকা ৮০ পয়সা, জারবেরা ৬-৭ টাকা, গোলাপ ৪-৫ টাকা করে বাজারে বিক্রয় করা হচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আজগর আলী বলেন, বিভিন্ন ফসলের পাশাপশি এখানে ফুলের চাষ হয়ে থাকে। বিশেষ করে খুলনা বিভাগে সবথেকে বেশি গাাঁদা ফুল চাষ হয়ে থাকে ঝিনাইদহে। কৃষদের ফুল বিক্রয়ের জন্য সরকারি ভাবে জেলাতে বিশেষ বিশেষ স্থানে ফুল বিপণন কেন্দ্র তৈরী করে দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকেই কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ফুল বিক্রয় করে থাকে।
আরো বলেন, চলতি অর্থ-বছরে এখন পর্যন্ত প্রথম সিজনে জেলার ৬ উপজেলায় ৩০০ হেক্টর জমিতে ফুলের আবাদ হয়েছে। আগামী ১৬ই ডিসেম্বর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে ফুলের চাহিদা অনুযায়ী যে ফুল লাগবে, সেখানে ৫০ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। তবে পুরো সিজনে ২০০ কোটি টাকার ফুল বিক্রয় হবে বলে মনে করা হচ্ছে। বিভিন্ন জেলা থেকে ফুলের যে চাহিদা আসছে সেগুলো যদি পূরণ করা হয় তাহলে ২শত কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এছাড়াও ফলন ভালো পেতে কৃষকদের প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।