সাবজাল হোসেন, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ চোখ-
আমার বাবার কি হয়েছে ? বাবা বাঁচবে তো ? বাবা কেন আগের মত আমাকে মিষ্টি কিনে দেয় না ? বাবা কবে আমার নতুন জামা কিনে দেবে জবাব না মেলা এমন হাজারো প্রশ্ন সুব্রত দাসের অবুঝ শিশু সমুদ্র দাসের। শিশুটির কথাগুলো শুনে কেউ চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। তার বাবা সংসারের একমাত্র উপার্জনকারী সুব্রত দাসের অসুস্থতায় পরিবারের সদস্যদের এখন অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটে।
পারিবারিকসূত্রে জানাগেছে, বছর দেড়েক আগে সুব্রত দাসের জিহ্বায় একটি ফোঁট বের হয়েছিল। যা অল্প দিনে বড় ক্ষতের সৃষ্টি করে। সে সময়ে গ্রাম্য চিকিৎসকের শরনাপন্ন হলেও কাজ হয়নি। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই ছড়িয়ে পড়ে কন্ঠণালীতে ফোলা টিউমারের সৃষ্টি করে। শয্যাশায়ী সুব্রতকে যশোর মেডিকেল কলেজে ভর্তি করা হয়। সে সময়ে পরীক্ষা নিরীক্ষায় ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর সংসারের সহায় সম্বল বিক্রি ও মানুষের দেয়া আর্থিক সহযোগীতায় ঢাকার মহাখালী ক্যানসার ইনষ্টিটিউটে ব্যয়বহুল চিকিৎসা নিয়ে খানিকটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। সর্বশেষ চিকিৎসকেরা বলেছেন এখন রেডিও থেরাপী দিতে পারলে হয়তো সুব্রত আগের মত কর্মে যেতে পারবে। রেডিও থেরাপিতে ২ লক্ষাধিক টাকার প্রয়োজন। যে টাকা ভূমিহীন বাবার পক্ষে জোগাড় করা অসম্ভব ব্যাপার। তাই তারা একটি জীবন বাঁচাতে স্বচ্ছল মানুষের সহযোগীতা কামনা করেছেন। সুব্রত ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার কোলা ইউনিয়নের বিনোদপুর দাসপাড়ার অনিল দাসের ছেলে।
সুব্রতের বাবা অনিল কুমার দাস জানান,বসতভিটের মাত্র ৪ শতক জমিই তাদের শেষ সম্বল। সুব্রত ছোটবেলা থেকে স্থানীয় কোলাবাজারে সেলুনে কাজ করে। একমাত্র তার রোজগারেই চলতো সংসার। কিন্ত সে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে ২ বছর ধরে অসুস্থ। ধারদেনা আর মানুষের কাছে হাত পেতে এ পর্যন্ত প্রায় ৪ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করে এখন খানিকটা সুস্থ হয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা বলেছেন, সম্পূর্ণ সুস্থ হতে তার এখন ব্যয়বহুল রেডিও থেরাপী দিতে হবে। সে জন্য এখন প্রয়োজন আরও ২ লক্ষাধিক টাকা। কিন্ত টাকা জোগাড়ের কোন পথ নেই। তিনি চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলেন, ছেলের অসুস্থতায় বৃদ্ধ বয়সে নিজের অসুস্থ শরীরে তাকেও এখন বাঁশ বেতের কাজ করতে হচ্ছে। সুব্রতর ৭ বছরের ছেলে সমুদ্র দাস যখন প্রশ্ন করে আমার বাবা বাঁচবে তো ? তখন বুকের কষ্ট ধরে রাখতে পারি না।
সুব্রতর মা নমিতা দাস জানান, ছেলে অসুস্থ হলে সাহায্যের জন্য গ্রাম গ্রাম ঘুরেছি। বৃদ্ধা বয়সে এখন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য পরের বাড়িতে কাজ করি। ছেলে সুব্রতর সুস্থ হতে আবার শুনছি টাকা লাগবে। এতোগুলো টাকা কোথায় পাবো। আবার না হলে চোখের সামনে বিনা চিকিৎসায় মারা যাবে এটা পৃথিবীর কোন মায়ের পক্ষেই সহ্য করা সম্ভব না বলতে বলতে তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন।
প্রতিবেশী নান্টু দাস জানান, সুব্রত ছোটবেলা থেকেই কর্মঠ। সেলুনে কাজ করে ৫ সদস্যের সংসার চালাতো। পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী সে অসুস্থ হয়ে যাওয়ায় তারা অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটায়। এতো কষ্ট এখনকার সময়ে দেখা যায় না। প্রতিবেশীরা যে যার মত করে তাদেরকে সাহায্য করে থাকেন। সবচেয়ে বড় কথা সুব্রত দাসের সন্তানের মুখের দিকে তাকালে খুব কষ্ট অনুভব হয়।
কোলা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আয়ূব হোসেন মোল্যা জানান, আমি সুব্রত দাসের পরিবার সম্পর্কে জানি। তারা সত্যিই অনেক কষ্টে আছে। তিনি বলেন, সাধ্যমত সাহায্যও করেছি। সাহায্যের জন্য প্রধানমন্ত্রীর ত্রান তহবিলেও আবেদন করা করা হয়েছে। তিনি অসহায় সুব্রতের চিকিৎসায় স্বামর্থবান সকলকে এগিয়ে আসার অনুরোধ করেন।