ঝিনাইদহে কোল্ড ইনজুরিতে নষ্ট হচ্ছে ইরি ধানের বীজতলা
মনজুর আলম, ষ্টাফ রিপোর্টার, ঝিনাইদহ চোখ-
ঝিনাইদহে সারা বছরই কৃষকেরা কোন না কোন ধানের আবাদ করে থাকেন। আর এজন্য কৃষক চারা রোপণ করার জন্য পূর্ব- প্রস্তুতি হিসেবে বীজতলা তৈরি করেন। আমন- আউশ ধানের বীজতলায় তেমন একটা সমস্যা দেখা যায় না। তবে ইরি’র বীজতলার সময় আবহাওয়া জনিত কারণে সমস্যা দেখা যায়। ইরি’র বীজতলা সাধারণত বছরের নভেম্বর মাসের শেষ সময় এবং ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের দিকে ধান বা চারাযুক্ত ধান প্রস্তুতকৃত জমিতে ছিটানো হয়। চারা গজানোর জন্য নির্ধারিত ধান পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিজিয়ে শুকনা জায়গায় বস্তা বা বিশেষ কিছু দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। তাকে কৃষকরা জাগ দেয়া বলে। আর এই সময়ে শীতের প্রভাব, শৈত্য- প্রবাহ, ঘন কুয়াশা, অতিরিক্ত ঠান্ডার কারণে বীজতলায় চারা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। অনেক সময় চারা নষ্টও হয়ে যায়। চলতি মৌসুমে জেলায় গত কয়েকদিন ঘন কুয়াশা, ঠান্ডার কারণে অনেক বীজতলা কোল্ড ইনজুরিতে আক্রান্ত হয়েছে। বাজার গোপালপুর হাসপাতাল পাড়ায় আতিয়ার রহমান নামের একব্যাক্তি জমি লিজ নিয়ে বীজতলা ভাড়া দিয়েছেন। সেখানে বীজতলা সুন্দর চারা হয়েছে। কিন্তু য়ারা একটু নাবি করে পাতু দিয়েছ তাদের সমস্যা দেখা গেছে। তাছাড়া গত কয়েক দিনের ঠান্ডায় বীজতলা নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে আরও জানা যায়, তারা ব্রি- ধান ২৮, ব্রি-৫৮, ব্রি-৫০ সহ অন্যান্য ধানের চারার জন্য বীজতলা তৈরি করেছেন। যে সকল চাষি আগাম বীজতলা তৈরি করেছে, তাদের চারা জমিতে রোপণ করার জন্য উপযুক্ত হয়েছে। অনেকে চারা লাগানোর জন্য জমি প্রস্তত করছে। কিন্তু গত কয়েক দিন কুয়াশা, ঠান্ডার কারণে বীজতলার চারা হলুদ, তামাটে ভাব দেখা গেছে। অনেকের ছোট চারা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এমনভাবে চলতে থাকলে চারার সংকট দেখা দেবার আশঙ্ক থেকে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানান, এবছর ৪১ হাজার ৪’শ চাষীকে ১ বিঘা জমির জন্য বীজতলা বাবদ হাইব্রীড জাতের ধান বীজ দেয়া হয়েছে। এই হাইব্রীড ধান ভাল ফলন হলেও একবার চাষ করা যায় এবং এর কোন বীজ তৈরি করা যায় না। উচ্চ ফলনশীল উফসী জাতের ৫ কেজি ধান বীজ এবং ১০ কেজি ডিএপি সার ও ১০ কেজি এমওপি সার বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া এ মৌসুমে বীজতলার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৫’শ ১৩ হেক্টর জমিতে। আর ৯২ হাজার ২’শ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। যেখানে উফসী জাতের ৮২ হাজার ৫’শ এবং হাইব্রিড জাতের ৯ হাজার ৭’শ হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।
বীজতলা সম্পর্কে জানতে চাইলে ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহিদুল করিম বলেন, সম্ভব হলে সন্ধার পূর্বে বীজতলায় পানি সেচ দিতে হবে এবং পলিথিন দিয়ে বীজতলা ঢেকে দিতে হবে। সকালে বেলা উঠার পর পলিথিন তুলে নিতে হবে ও জমি থেকে ঠান্ডা পানি বের করে দিতে হবে। এছাড়া কুইক পটাশ ও ছত্রাকনাশক স্প্রে করলে ভালো ফল পাওয়া যাবে বলে তিনি জানান।