কালীগঞ্জটপ লিড

ঝিনাইদহে ক্লিনিকে নবজাতককে মৃত ঘোষনার পর কেঁদে উঠলো শিশুটি

#শিপলু জামান, ঝিনাইদহের চোখঃ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের মেইন বাসস্ট্যান্ডে বেসরকারি ডক্টরস্ প্রাইভেট হাসপাতালে ঘটনাটি ঘটে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশন থিয়েটারের ভিতর থেকে ঔষধের কার্টুনে জীবিত নবজাতকে মৃত নবজাতকের মতো ঔষুধের কার্টুনে প্যাকিং করে পরিবারের কাছে তুলে দেয়।

প্রসব যন্ত্রনা নিয়ে ডক্টরস্ প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল দামোদরপুর গ্রামের প্রবাসী আঃ কাদেরের গর্ভবতী স্ত্রী হেপি আক্তার। পূর্ব থেকে হ্যাপির গর্ভের শিশুটি ছিল অসুস্থ এবং ডক্টরস্ প্রাইভেট হাসপাতালেই দেখাতো রোগীকে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে অপারেশনে পর পৃথিবীতে আসে বিকালঙ্গ শিশুটি।

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির বিকল্ঙ্গ অবস্থায় জন্মগ্রহন করেছে এবং বাচবে না বলে জীবিত নবজাতককে কাপড়ে জড়িয়ে ঔষধের কার্টুনে ভিতরে প্যাকিং করে স্বজনদের কাছে তুলে দেয় এবং বাড়ি নিয়ে যেতে বলে। রোগীর পরিবারের লোকজন নবজাতককে মৃত ভেবে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর বাচ্চা জোরো কাদঁতে থাকে হঠাৎ কান্নার শব্দে সবাইকে হতবাক। এরপরও মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত বাচ্চাটি বেচে ছিলো। তারপর নবজাতকটি মৃত্যুবরন করে। বুধবার সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ঘটনাটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্ঠা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।

নবজাতকের পিতা কাদের বিদেশ থেকে মুঠোফোনে বলেন, আমার মেয়ে অসুস্থ তাকে চিকিৎসা না করিয়ে কেন কার্টুনে ভরে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হল? মারা গেলে ক্লিনিকে মারা যেত। আমার স্ত্রীর পেটে বাচ্চা আসা অবধি আমি ডাক্তার কামরুন্নাহারকে দেখায়। তারা আমার স্ত্রী গর্ভবতি হলে ঐ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ৩/৪ বার আল্ট্রাসনো করায়েছে তারা তো বুঝতে পেরেছে গর্ভের সন্তান বিকলঙ্গ। তাহলে তারা আমাদেরকে অন্য জায়গায় রোগী নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিতে পারতো। তা না করে তারা ডাক্তার কামরুন্নাহারকে দিয়ে কেকন অপারেশন করালো। আর সিজারই যখন করতে হবে তাহলে তার আগে কেন আমার স্ত্রীকে নরমালে চেষ্টার নামে টানা হেচড়া করা হলো?

আমি আপনাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে এই ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে ডাক্তার এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষর বিচারের আওতায় আনার দাবী জানাচ্ছি।
এ ব্যপারে ডঃ ক্লিনিকের স্বত্বাধিকারী ডাঃ আবু বকর সিদ্দিক জানান, শিশুটি এনানসিফেলিতে আক্রান্ত ছিল এর বেশি কিছু বলতে পারব না। আপনাদেরকে কেন জানাতে হবে সব কথা? এবং ডাক্তার আবু বকর সিদ্দিকী সাংবাদিকদের সাথে অশোভন আচরন করেন।

স্বাস্থ্য সেবা নিতে আসা মানুষগুলি চাই সুন্দর চিকিৎসা, একটু ভাল ব্যবহার। সেবমূলক এই প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবসায়িক চিন্তা চেতনাকে থেকে যতদিন না বের হতে পারবে ততদিন আমাদের সমাজে এই ধরনের অসঙ্গতি পূর্ন কর্মকান্ড চলতেই থাকবে। কালীগঞ্জ ডক্টর হাসপাতালটি দেখলে মনে হয় না এটি একটি প্রাইভেট হাসপাতাল। অল্প জায়গায় গাদাগাদি করে রোগী রাখেন তারা। দেখলে মনে হবে এটি একটি জেলখানা।

এভাবেই ডাক্তার আবু বকর সিদ্দিকী দম্পতি চিকিৎসা সেবা প্রদান করেন। তারা মানেন না সরকারী কোন বিধি বিধান। ১০ বেডের লাইসেন্স থাকলেও ঐ হাসপাতালে বেড আছে ২২ টি। হাসপাতালের ভিতর দূর্গন্ধে ভালো মানুষও অসুস্থ হয়ে যাবে। আর আপরেশন থিয়েটার দেখলে মনে হবে গৃহস্থের রান্না ঘর। নোংরা পরিবেশেই চলছে চিকিৎসা সেবা। নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের লাইসেন্স। এই হাসপাতালে প্রায়ই নবজাতকের মৃত্যু না হয় প্রসূতি মায়ের মৃত্যু হয়। দূর্ঘটনা প্রায়ই লেগেই থাকে সংবাদপত্রে এতো খবর প্রকাশিত হলেও কোন পরিবর্তন হয়নি এই কসাইখানার।

স্থানীয়রা প্রায়ই বলেন, ডাক্তার আবু বকর সিদ্দিকী এবং কামরুন্নাহার এই বয়সে তাদের অপারেশন করা ঠিক না। তারপরও তারা অপারেশনের মতো চিকিৎসা দিয়ে মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করছেন। এই হাসপাতালে প্রায়ই নতুন নতুন ঘটনার জন্ম দিয়ে থাকেন। এইতো বছর দেড়েক আগে কালীগঞ্জ উপজেলার হরদেবপুর গ্রামে সিজার অপারেশনের পর মারা গিয়েছিল এক প্রসূতি মা।

উল্লেখ্য গত (২০১২ সালের ৭ সেপ্টেম্বর) শুক্রবার ডক্টরস প্রাইভেট হাসপাতাল থেকে চুরি হয়েছিল এক নবজাতক। অভিযোগ পেয়ে একটি নবজাতক উদ্ধার করে চুরি যাওয়া সন্তানের মায়ের কোলে তুলে দেয় পুলিশ।কিন্তু উদ্ধার করা নবজাতক নিয়ে দেখা দিয়েছিল বিতর্ক। তাকে নিজের সন্তান বলে দাবি করছিলেন দুই মা। ওই সময় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁদের দুজনের দুটি ছেলে সন্তান হয়।এর মধ্যে এক মা কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা গ্রামের দুবাই প্রবাসী বিপুল বিশ্বাসের স্ত্রী ক্ষমা রানী। আরেক মা রোজিনা খাতুন মহেশপুর উপজেলার বাঁশবাড়িয়া গ্রামের আশরাফুল ইসলামের স্ত্রী। বাচ্চা চুরির মতো ঘটনাও ঘটেছিল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারনে।

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জের বেশির ভাগ ক্লিনিক গুলোতে সর্বক্ষনিক ডাক্তার নেই, নার্স নেই। নেই চিকিৎসা দেয়ার মতো উন্নত পরিবেশ। অপারেশন থিয়েটার দেখলে মনে হবে গৃহস্থবাড়ির রান্নাঘর। অনেকটা ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদারের মতো। তারপরও প্রতি বছর ক্লিনিকগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করা হচ্ছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে নির্দিষ্ট ছকে পাঠানো তালিকায় দেখা কালীগঞ্জ শহরে অবস্থিত অনেক ক্লিনিকে জনবল, যন্ত্রপাতি, সর্বক্ষণ ডাক্তার এবং নার্স নেই। সব ক্ষেত্রে নেই নেই অবস্থার মধ্যেই প্রতি বছর এসব ক্লিনিকের লাইসেন্স নবায়ন হচ্ছে।

বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নেই অথচ লাইসেন্স দেয়া হয়েছে এমন তালিকায় রয়েছে অনেকগুলো প্রাইভেট ক্লিনিক এবং ডায়াগনোষ্টি সেন্টার।

কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৬টি ক্লিনিক ও ১৪টি ডায়াগনোস্টিক সেন্টার আছে। তার মধ্যে মাত্র কয়েকটি ক্লিনিক এবং ডায়াগনষ্টিক সেন্টার ভালো চলে বলে জানা গেছে।অভিযোগ উঠেছে, সিভিল সার্জন অফিসের কতিপয় কর্মচারী ক্লিনিক ও ডায়াগনোস্টিক সেন্টার মালিকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রতি বছর লাইসেন্স নবায়নের জন্য ঢাকায় পাঠায়। বেশির ভাগ ক্লিনিকে ডাক্তার ও নার্স না থাকলেও কিভাবে লাইসেন্স নবায়ন হয় তা নিয়ে সচেতন মহল প্রশ্ন তুলেছে। এই মানহীন ক্লিনিক ব্যবসা শ্রেফ বাণিজ্যিক বলেও অনেকের অভিমত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button