অস্তিত্ব সংকটে লাল বুক টিয়া
ঝিনাইদহের চোখ:
দেশের অতি পরিচিত পাখি লাল বুক টিয়া বা তোতা। মিশ্র চিরসবুজ বনের বাসিন্দা হলেও এদেরকে শালবনে দেখা যাওয়ার নজির রয়েছে। লোকালয়েও দেখা মেলে, তবে খানিকটা কম। স্থানীয় প্রজাতির হলেও সুলভ দর্শন অঞ্চলভেদে।
সিলেটের চা বাগান, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রামের পাহাড়ি অঞ্চলে সচরাচর এদের দেখা যায়। বিচরণ করে ছোট-বড় দলে। কৃষকের ধান, গম, ভুট্টা ক্ষেতে দল বেঁধে নেমে ফসল খায়। যেটুকু খায় তার চেয়ে বেশি নষ্ট করে। দেখতে ভীষণ সুন্দর হলেও কণ্ঠস্বর সুরেলা নয়, কর্কশ। এরা সামাজিক পাখি। দলবদ্ধভাবে বাস করে। দলের যে কেউ বিপদের গন্ধ পেলে ‘ক্যাঁক… ক্যাঁক’ স্বরে ডেকে সবাইকে সর্তক করে দেয়। বিপদ সংকেত পেয়ে সঙ্গীরা ঝটপট ডানামেলে নিরাপদে পৌঁছায়। এত সতর্ক থাকার পরও এরা শিকারিদের কবলে পড়ছে প্রতিনিয়ত। ফলে আজ এরা সংকটাপন্ন পাখি। ভালো পোষ মানে বলেই এরা শিকারিদের কবলে বেশি পড়ে। কথা শেখালে এরা কথাও বলতে পারে।
লাল বুক টিয়া লম্বায় লেজসহ ৩৪ থেকে ৩৮ সেন্টিমিটার। পুরুষ পাখির মাথা বেগুনি-ধূসর, কপালের ওপর কালো পট্টি, যা চোখের কাছে গিয়ে মিশেছে। ডানায় সোনালি আভা। গলা থেকে বুক পর্যন্ত গোলাপি। পেট নীলচে সবুজ, তলপেট থেকে লেজের নিচ হলদেটে সবুজ। লেজের ওপরের দিক নীলচে সবুজ। লেজের ডগার কিনারটা হলদেটে। শক্ত মজবুত ঠোঁট বড়শির মতো বাঁকানো। ঠোঁটের বর্ণ ওপরের দিকে রক্ত লাল, নিচের অংশ কালো। স্ত্রী পাখির মাথা নীলচে সবুজ। বুকের দিক গাঢ় গোলাপি। ঠোঁটের ওপরের অংশ কালো, নিচের অংশ পাটকেলে কালো। এ ছাড়া পুরুষ পাখির কনীনিকা ফিকে হলুদ, স্ত্রী পাখির সাদাটে হলুদ। উভয় পাখিরই পা ও আঙুল ধূসরাভ সবুজের সঙ্গে হলদেটে মিশ্রণ। প্রধান খাবার শস্যবীজ, ফুল, ফল, মধু, গাছের কচিপাতা ইত্যাদি। পোষা তোতাদের দুধ-ভাত, কলা, বাদামের প্রতি আসক্তি রয়েছে।
প্রজনন সময় জানুয়ারি থেকে এপ্রিল। গাছের প্রাকৃতিক কোটরে বাসা বাঁধে। ডিম পাড়ে ২ থেকে ৪টি। ডিম ফোটতে সময় লাগে ২২ থেকে ২৪ দিন। শাবক স্বাধীনভাবে চলাচলের জন্য সময় নেয় ৫০ থেকে ৫৫ দিন।
লাল বুক টিয়া। ইংরেজি নাম : Red-breasted parakect. বৈজ্ঞানিক নাম : psittacula alexandri. গোত্রের নাম : psittacidae. এরা তোতা, মদনা নামেও পরিচিত। বাংলাদেশে প্রায় পাঁচ প্রজাতির টিয়া পাখির দেখা মেলে। চন্দনা বা বড় টিয়া, সবুজ টিয়া, লাল বুক টিয়া, লাল মাথা টিয়া, লটকন টিয়া।