ঝিনাইদহ সদরটপ লিড

স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী চরমপন্থী সন্ত্রাসীরা

ঝিনাইদহের চোখঃ

চরমপন্থীর উথান ॥ ১৯৭২ সালে প্রথম চরমপন্থী গোপন রাজনীতির আবির্ভাব ঘটে পূর্ব-পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি (এমএল) নামে। দলটি চারু মজুমদারের নকশালবাড়ী আন্দোলনের আদলে শ্রেণীশত্রু খতমের নামে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ১০ জেলায় আধিপত্য বিস্তার করে। এর মধ্যে ঝিনাইদহ সদর, শৈলকুপা, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর ও হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এদের ব্যাপক আধিপত্য ছিল। এরা পুলিশের কাছ থেকে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়ে তাদের সঙ্গে সম্মুখযুদ্ধে লিপ্ত হয়।

সরকারী খাদ্যগুদাম লুট করে চাল গম সাধারণ মানুষের মধ্যে বিলিয়ে দিয়ে জনসাধারণকে তাদের পক্ষে রাখার পন্থা অবলম্বন করে। আবার কখনও সরকারী সম্পত্তি মানুষের মাঝে বিলিয়ে দেয়। এসব কর্মকা-ের ফলে অল্পদিনের মধ্যে তারা ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে। এ দলটি নকশাল নামে পরিচিতি পায়। এরপর ১৯৭৩ সালে জাসদ তাদের আন্ডারগ্রাউন্ড সেল গণবাহিনী গঠন করে।

গণবাহিনীর দাপট ছিল মাগুরা, ঝিনাইদহ ও চুয়াডাঙ্গা উত্তর পাশের হরিণাকুন্ডু, শৈলকুপা, ঝিনাইদহ সদরের হরিশপুর, পোড়াহাটি ও হলিধানি ইউনিয়নে। ১৯৭৪ সালে গণবাহিনী হরিণাকুন্ডু থানা লুট করে। ৭৫ সালে লুট করে শৈলকুপা উপজেলার লাঙ্গলবাধ পুলিশ ফাঁড়ি। এরপর থেকে এরা এসব এলাকায় ব্যাপক শক্তিশালী হয়ে ওঠে। ১৯৭৫ সালে দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর পূর্ব পাকিস্তান কমিউনিস্ট পার্টি এমএল নাম পরিবর্তন করে ‘বাংলাদেশের বিপ্লবী কমিউনিস্ট পার্টি’ রাখে। এরা সংগঠনের বিস্তৃতি গণবাহিনীর এলাকায় ঘটালে তখন শুরু হয় খুন আর পাল্টা খুনের প্রতিযোগিতা। একদল অন্য দলকে বাগে পেলেই তাদের নেতা বা ক্যাডারদের হত্যা করতে থাকে। পাশাপাশি বিপ্লবী কমিউনিস্ট পাটি শ্রেণীশত্রু আখ্যা দিয়ে গ্রামের জোতদার ও পুলিশের সোর্সকে হত্যা করতে থাকে।

‘সন্ত্রাসী পেশা ছাড়ি আলোকিত জীবন গড়ি’- এ স্লোগান সামনে রেখে দেশের ১৫ জেলার ৫৯৫ চরমপন্থী সন্ত্রাসী দীর্ঘ ২০ বছর পর স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় নিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন। মঙ্গলবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের আইজি ড. মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারীর কাছে অর্ধশতাধিক অস্ত্র জমা দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করলেন। এ উপলক্ষে পাবনা শহীদ আমিন উদ্দিন স্টেডিয়ামে আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, আজ যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে অপরাধ জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলেন তাদের অপরাধ অনুসারে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আত্মসমর্পণকারীদের পক্ষে আর যারা আত্মসমর্পণের কথা থাকলেও করেননি তারা পার পাবেন না। বর্তমান সরকার দুর্বল নয়। সরকার যেকোন চ্যালেঞ্জ গ্রহণের ক্ষমতা রাখে তাই আমাদের পুলিশ গোয়েন্দা বিভাগ চরমপন্থী সন্ত্রাসীদের খুঁজে বের করে আইনগত ব্যবস্থা নেবে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, যারা একসময় অপরাধ জগতে ছিলেন তারা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন ছিলেন। তাদের বাবা-মার দাফন কাফনে যোগ দিতে পারেনি কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার ব্যবস্থা করেছে।

আত্মসমর্পণকারীরা পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি, পূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, নিউপূর্ব বাংলা সর্বহারা পার্টি, পূর্ববাংলা কমিউনিস্ট পার্টি এমএল লাল পতাকা। আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে রয়েছে, পাবনার ১৩১, জয়পুরহাটের ৮২, নওগাঁ ৭০, সিরাজগঞ্জ ৬৯, খুলনার ৩৫, সাতক্ষীরার ৬, নড়াইলের ২ ও ফরিদপুর জেলার ২৭ জনসহ ১৫ জেলার ৫৯৫ জন। তাদের বিরুদ্ধে হত্যা, ডাকাতি, বিস্ফোরক ও আইনে মামলা রয়েছে। এদের অধিকাংশই পুলিশের তালিকাভুক্ত আসামি। আত্মসমর্পণের পর তাদের মামলা চলবে বলে পুলিশ কর্মকর্তারা জানান। অনুষ্ঠানের সমন্বয়কারী পাবনার পুলিশ সুপার শেখ রফিকুল ইসলাম জানান, পাবনাসহ উত্তর-দক্ষিণাঞ্চলের চরমপন্থীরা অন্তকলহে ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় এখন কোণঠাসা। এসব নিষিদ্ধ দলের নেতারা ক্রসফায়ারে বা অন্তকলহে নিহত হওয়ায় নেতৃত্ব সঙ্কটে তারা হতাশ। তাই তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহী। আত্মসমর্পণের জন্য স্ব স্ব জেলা থেকে ব্যাপক পুলিশী নিরাপত্তার মধ্যে সোমবার চরমপন্থী সদস্যদের পাবনায় নিয়ে আসা হয়।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button