শবে বরাতে যে আমলগুলো করবেন
ঝিনাইদহের চোখঃ
মহান আল্লাহ বান্দার মুক্তির জন্য অনেক উসিলা ও সুযোগ তৈরি করে রেখেছেন। বছরের কোন কোন মাস, দিন ও রাত্রিকে করেছেন বিশেষভাবে বরকতময় ও বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। বরকতময় এ সময়গুলোতে সামান্য মেহনত ও প্রচেষ্টার ফলে বিশাল প্রতিদানের অধিকারী হওয়া যায়, যা অন্য সময় অধিক মেহনত করেও অর্জন করা সম্ভব নয়। সেই সময়গুলোর মধ্যে শবে-বরাত অন্যতম।
তাহলে চলুন এ রাতের ফযীলত ও করণীয় ইবাদতগুলো সহীহ ও আমলযোগ্য হাদীসের আলোকে জেনে নিই।
শবে বরাত সম্পর্কে সহীহ হাদীস:
হযরত মুআজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مساحن.
অর্থ: আল্লাহ তাআলা অর্ধ শাবানের রাতে (শবে-বরাতে) তাঁর সৃষ্টির প্রতি মনোযোগী হন এবং মুশরিক ও বিদ্ধেষ পোষণকারী ব্যক্তি ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন। – সহীহ্ ইবনে হিব্বান, হাদীস: ৫৬৬৫, সুনানে ইবনে মাযাহ্, হাদীস: ১৩৯০, মুসান্নাফু ইবনে আবী শাইবাহ, হাদীস: ৩০৪৭৯, শুআবুল ঈমান, হাদীস: ৬২০৪
শবে বরাত সম্পর্কে আমলযোগ্য হাদীস:
হযরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها و صوموا نهارها فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا مسترزق فأرزق له ألا مبتلىً فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر.
অর্থ: অর্ধ শাবানের রাত যখন আসে, তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত করে কাটাও এবং দিনে রোযা রাখো। নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এ রাতে সূর্যাস্তের পর প্রথম আসমানে আসেন এবং বলতে থাকেন, আছে কী কোনো ক্ষমাপ্রার্থী? আমি তাকে ক্ষমা করবো। আছে কি কোনো রিযিকপ্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দিবো। আছে কি কোনো বিপদগ্রস্ত? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি এমন, – এভাবে সুবহে সাদিক পর্যন্ত বলতে থাকেন। – সুনানে ইবনে মাযাহ, হাদীস: ২৩৮৪, শু’আবুল ঈমান, হাদীস: ৩৮২২, আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব: ২/১৩৩ – হাদিসটির সনদ দুর্বল তবে ফযিলতের ক্ষেত্রে আমলযোগ্য।
হাদীসের আলোকে করণীয় ইবাদত:
উপরোল্লিখিত হাদীসদ্বয়সহ অন্যান্য হাদীস থেকে যেমনিভাবে শবে বরাতের ফযীলত প্রমাণিত হয় অনুরূপ এ কথাও প্রতীয়মান হয় যে, এ রাতের জন্য স্বতন্ত্র কোনো ইবাদত নেই। বরং এ রাতে এমন সব নেক আমল করা উচিত যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাতপ্রাপ্তির উপযুক্ত হওয়া যায়। যেমন:
এক. মাগরিব, এশা ও ফজরের নামায যেনো অবশ্যই জামাআতের সাথে হয়।
দুই. সাধারণভাবে যে নিয়মে নফল নামায পড়া হয় সেভাবেই পড়া অর্থাৎ দুই রাকাত করে যতো রাকাত সম্ভব হয় এবং যে সূরা দিয়ে সম্ভব হয় পড়বে।
তিন. তাওবা করা। তাওবা বলা হয় তিন জিনিসের সমষ্টিকে। ক. কৃতপাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া। খ. সঙ্গে সঙ্গে এই পাপটি পরিহার করা। গ. পাপটি আর করবে না এই মর্মে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
চার. কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করা, দুরূদ শরীফ পড়া, যিকির-আযকার করা ও ইস্তিগফার করা ইত্যাদি।
পাঁচ. সম্ভব হলে এ রাতে কিছু দান সদকা করে এবং নফল নামাজ পড়ে মৃতদের রূহে সাওয়াব পৌঁছানো।
ছয়. পরদিন অর্থাৎ ১৫-ই শাবান নফল রোযা রাখা। রোযা রাখার বিষয়টি উল্লেখিত হাদীস ছাড়াও অন্যান্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।
সাত. সলাতুত্ তাসবীহ: যদি সলাতুত্ তাসবীহকে এই রাতের বিশেষ ইবাদত মনে না করে আদায় করতে চান, তাহলে করতে পারেন। এ ক্ষেত্রে এই নামাযের নিয়মটি কোনো বিজ্ঞ আলেম থেকে জেনে নিবেন।
এই আমলগুলো ছাড়া এ রাতকে কেন্দ্র করে যতো রুসুম-রেওয়াজ রয়েছে, সবই বিদআত ও কুসংস্কার। একজন মুসলমানের জন্য সেগুলো পরিত্যাগ করা আবশ্যক।
উল্লেখ্য যে, এ রাতের আমলগুলো সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত। যেমন প্রচলন দেখা যায় যে, এই রাতে নফল ইবাদতের জন্য লোকজন দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হয়, কোথাও মিলাদ হয়, কোথাও এক সঙ্গে বসে জোরে জোরে জিকির হয়, যার দরুণ একাকী ইবাদতকারীর ইবাদতে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। অথচ এ রাতে এগুলো করার কোনো প্রমাণ হাদীসে নেই এবং সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন ও তাব্-য়ে তাবেঈনের যুগেও এর কোনো প্রচলন ছিলো না।
তবে যদি বাসায় অলসতার কারণে ইবাদত না হওয়ার আশঙ্কা থাকে, সেক্ষেত্রে মসজিদে এসে ইবাদত করতে দোষের কিছু নেই। তবে এক্ষেত্রে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলে ব্যঘাত ঘটার কারণ হবে না। – ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকীম ২/৬৩১-৬৪১, মারাকিল ফালাহ, পৃষ্ঠা-২১৯